সরাসরি টিকিটের দাম না বাড়িয়ে পন্টেজ চার্জ বা মাশুল আরোপের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ছয় রুটে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রায় ৯ বছর পর এ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে ট্রেন ও আসনভেদে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা বেড়েছে। এ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ২০ ডিসেম্বর থেকে।
এদিকে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, মূলত এ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে পুরোনো যেসব সেতু আছে (১০০ মিটারের বেশি), সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য। সব রুটে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। কিছু রুটে বেড়েছে। যে ভাড়া বেড়েছে, তা খুব বেশিও নয়।
জানা গেছে, রেলের আয় বাড়াতে চলতি বছরের মে মাসে এভাবে পন্টেজ চার্জ বা মাশুল আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ডিসেম্বরে। সাধারণ ট্রেন ও বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেনের জন্য আলাদা করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।
লোকসান সামাল দিতে আয় বৃদ্ধি ও ব্যয় হ্রাস নিয়ে গত ২৫ মে রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম টিকিটের ভাড়া না বাড়িয়ে আয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। তিনি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ১০০ মিটারের বেশি লম্বা সেতুতে পন্টেজ চার্জ সমন্বয়ের জন্য নির্দেশনা দেন। এর পর থেকে কাজ শুরু করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ। রেলওয়ে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৫ নভেম্বর রেলের উপপরিচালক (মার্কেটিং) শাহ আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নতুন ভাড়া ২০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে এ চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ৮ ডিসেম্বর সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া এ চিঠি কার্যকর এ জনস্বার্থে প্রচারের জন্য অনুমোদন করেন। পূর্বাঞ্চলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ছে ৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি রুটে ১১টি সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হচ্ছে। এগুলো হলো: ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-জামালপুর ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আগে ৩৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে ভাড়া দিতে হতো। এখন পন্টেজ চার্জ নির্ধারণের পর এ দূরত্ব হয়েছে ৩৮১ কিলোমিটার। ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এই রুটে মেইলের ভাড়া ১৩৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। ভাড়া বেড়েছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া কমিউটার ও শোভন চেয়ারে ভাড়া ১৭০ ও ৪০৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৯০ ও ৪৫০ টাকায়।
শীততাপনিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা টিকিটের ভাড়া ৭৭৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫৭ টাকা। ভাড়া বেড়েছে ৮০ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ৯৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০ টাকা। আবার এসি বার্থের (শুয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া এখন থেকে হবে ১ হাজার ৫৯১ টাকা। বর্তমানে এসব আসনের ভাড়া ১ হাজার ৪৪৮ টাকা।
এ রুটে বিরতিহীন ট্রেনে (যেমন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস) স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৮৫৫ থেকে ৮৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৪৩ টাকা। প্রথম বার্থ ও এসি সিটের প্রতি আসনের ভাড়া এখন যথাক্রমে ১ হাজার ১৩৩ ও ১ হাজার ৭৪৬ টাকা। আগে ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২৫ ও ১ হাজার ৫৯০ টাকা।
কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের বর্তমানে স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ১ হাজার ৩২২ টাকা। এখন থেকে দিতে হবে ১ হাজার ৪৪৯ টাকা। ভাড়া বেড়েছে ১২৭ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ টাকা। আর এসি বার্থের ভাড়া এখন ২ হাজার ৪৩০ টাকা, নতুন ভাড়া অনুযায়ী তা হয়েছে ২ হাজার ৬৫৬ টাকা। আগের তুলনায় ভাড়া বেড়েছে ২২৬ টাকা।
ঢাকা-সিলেট রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১২৫ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা করা হয়েছে। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ৪১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া বর্তমানে ৭১৯ টাকা হলেও নতুন ভাড়া হবে ৭৮৮ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ৮৬৩ টাকার জায়গায় এখন হবে ৯৪৩ টাকা। এসি বার্থের ভাড়া ১২৭ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৪৬৫ হয়েছে।
চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৮৫৭ টাকার জায়গায় দিতে হবে ৯০৯ টাকা। শোভন চেয়ারের ভাড়া বেড়েছে ২৫ টাকা। প্রথম বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৮০ থেকে ১ হাজার ১৩৭ টাকা করা হয়েছে। এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৮৭ টাকা হয়েছে। এসি বার্থের ভাড়া বেড়েছে ৮৭ টাকা। আগে ছিল ১ হাজার ৫৯১ টাকা, এখন দিতে হবে ১ হাজার ৬৭৮ টাকা।
চট্টগ্রাম-জামালপুর রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা হয়েছে। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫২৫ থেকে ৫৪৫ টাকা করা হয়। স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। আগে ছিল ১ হাজার ৭ টাকা, এখন হবে ১ হাজার ৪১ টাকা। এসি সিটের ভাড়া বেড়েছে ৪৬ টাকা। ১ হাজার ২০৮ টাকার টিকিট কিনতে হবে ১ হাজার ২৫৪ টাকায়। এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৮৫৬ থেকে হয়েছে ১ হাজার ৯২৫ টাকা।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া বাড়েনি। তবে কমিউটার ট্রেনের ভাড়া বেড়েছে ৫ টাকা। ১০৫ টাকার ভাড়া এখন ১১০ টাকা। শোভন চেয়ারের ভাড়া ২৫০ থেকে ২৫৫ টাকা, স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৪৭৮ থেকে ৪৮৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৫৭৫ থেকে ৫৮৭ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ৯০৭ থেকে ৯২৪ টাকা করা হয়।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে এ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সব রুটে ভাড়া বাড়ছে না। কিছু রুটে ভাড়া বাড়ছে। আবার যে ভাড়া বেড়েছে, তা খুব বেশি নয়। এ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে মূলত পুরোনো যেসব সেতু আছে (১০০ মিটারের বেশি), সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য।
চস/স


