spot_img

১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

মোটরচালিত রিক্সার লাইসেন্স প্রসঙ্গে

প্রাচীন ক্রীতদাস প্রথার বর্তমান রূপ বলা যায় প্যাডেলচালিত রিক্সার মাধ্যমে মানুষ কর্তৃক মানুষ বহন করা। প্রযুক্তির নানামুখী জনবান্ধব উদ্ভাবনের পূর্বে প্যাডেল চালিত রিক্সা চালানো কিংবা যাত্রী হিসেবে যাতায়াত স্বাভাবিক মনে হলেও বর্তমানে প্রযুক্তির অসাধারণ উদ্ভাবনের ফলে সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার সহজলভ্য হয়েছে। বাংলা রিক্সায় মোটর সংযুক্ত করার পাশাপাশি চায়না প্রযুক্তির অটো রিক্সা ও টমটম দেশব্যাপী সহজলভ্য হওয়ার পর প্যাডেল চালিত রিক্সা এখনো বহাল থাকা যেখানে আশ্চর্য্যজনক ঘটনা মনে হয়, সেখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের ব্যস্ততম শহরগুলোতে অটোরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা কর্মমুখী দরিদ্র মানুষদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের নামান্তর।

গ্রামাঞ্চলের পথে ঘাটে টমটম ও অটো রিক্সার অবাধ বিচরণ। যারা আগে প্যাডেল চালিত রিক্সা চালাতো তারা এখন অটো রিক্সা চালাচ্ছে। স্ব-শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার তরুণরাও অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। গ্রামাঞ্চলে অটো রিক্সা চালানোতে কোন বাধা না থাকলেও শহরের পরিস্থিতি ভিন্ন। সিটি কর্পোরেশন থেকে অটো রিক্সার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী থাকলেও অলি-গলিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অটো রিক্সার সংখ্যা। এর মাধ্যমে কর্মহীন বহু তরুণ নির্দ্বিধায় অটো চালাচ্ছে। মাঝে মধ্যে নারী চালকও দেখা যায়। অটো রিক্সার মাধ্যমে হাজার হাজার তরুণের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কিন্তু সরকারী ভাবে শহরব্যাপী অটো রিক্সা চালানো নিষিদ্ধ হওয়ায় অনিশ্চয়তা আর উৎকন্ঠায় অটো রিক্সা চালাতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের আনাগুনা আছে এমন স্থানে না গেলেও অলি-গলি রাতদিন অটো রিক্সা চলছে নির্বিঘেœ। অল্প ভাড়ায় এবং অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হওয়ায় যাত্রীরাও বেশ খুশি।

ব্যক্তিগত ভাবে রাস্তায় যাতায়াতের সময় অনেক ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জেনেছি, তারা অটো চালানোতে স্বাধীনতা চায়। তাদের ভাষ্য মতে, প্রতি মাসে একটি গাড়ী থেকে ট্রাফিক পুলিশ এবং স্থানীয় নেতা মিলিয়ে ২-৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়, এতেও শান্তি নেই। একসাথে একাধিক ট্রাফিক পুলিশের সামনে পরলে তাদেরকে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পাওয়া যায় না, মোটা অংকের জরিমানা করা হয়। নানামুখী জটিলতার কথা মাথায় রেখেই অটো চালায় তারা। এই পরিস্থিতিতে থেকে মুক্তি চায় তারা, প্রয়োজনে সরকার অটো রিক্সাকে লাইসেন্স এর আওতায় আনুক, মাসিক ফি ধার্য্য করুক। এতে স্থানীয় দুষ্ট লোক ও ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি থেকে মুক্ত হবে তারা, সরকারও রাজস্ব পাবে, যা দিয়ে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন:- আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ ও দায়বদ্ধতা

বাংলাদেশে প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বেশ দৃশ্যমান। কৃষি কাজ, অফিস আদালত কিংবা রিক্সা, সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ ইতিবাচক। রিক্সায় প্রযুক্তির ব্যবহারে ড্রাইভারদের কষ্টলাগবের বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবে দেখা উচিত। মোটর চালিত রিক্সা চলাচলের ফলে বিদ্যুতের অপচয় হিসেবে দেখার কারনে মোটররিক্সা চালকরা স্বস্তিতে নেই। প্রযুক্তির এই উৎকৃষ্ট সময়ে যেখানে সবধরনের পরিবহন মোটরচালিত হবে, সেখানে বাংলা রিক্সা বিদ্যমান থাকাটাই অমানবিকতার সামিল। কেননা বাংলা রিক্সার মাধ্যমে প্যাডেল চেপে সিটে বসিয়ে মানুষ বহন করা প্রাচীন কালের মানুষ কর্তৃক মানুষ বহনের নিকৃষ্ট প্রথার বর্তমানরূপ।

মোটরচালিত রিক্সা বন্ধ করার পেছনে যদি কথিত বিদ্যুৎ অপচয় কিংবা এর ফলে বিদ্যুৎ এর ঘাটতিই যদি বড় কারন হয়, তাহলে মোটরচালিত রিক্সার লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং মাসিক ফি ধার্য্য করতে পারে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অটো রিক্সার লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে মাসিক ফি আদায় করতে পারলে উক্ত ফি দিয়েই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। মোটর চালিত রিক্সা চালানোর উপর যে নিষেধাজ্ঞা খগড়া তা উঠে গেলে লক্ষ লক্ষ বেকার তরুণ এই পেশায় আসবে নির্দ্বিধায়, যার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ছাড়াও নাগরিকদের রাস্তাঘাটে যাতায়াত সহজলভ্য এবং স্থানীয় সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে। প্রযুক্তির অসাধারণ আবিস্কার অটো রিক্সা চলাচলে সমস্ত বাধা উৎপাটন করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে লাভ হবে সরকার, চালক এবং যাত্রী তথা তিনপক্ষেরই।

শিক্ষার্থী
ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
কাটাবন, ঢাকা।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss