spot_img

১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস

প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ বছর পর পর মানবাধিকার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক পুরস্কার ও নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। বর্তমান বিশ্বে নিপীড়ন নির্যাতন একটি মানবিক সমস্যা। মানুষকে শাসক কর্তৃক নিঃস্ব করে দেওয়া বড় সমস্যা। মানবিক সমস্যার মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া একটি অন্যতম সমস্যা।

ক্ষমতার মোহে প্রতিবেশী এবং সহকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন বস্তচ্যুত করা বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক সমস্যা। দুনিয়াব্যাপী বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন সরকার নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন ব্যাভিচার করে লাখ লাখ মানুষকে বাড়ি ভিটা হারা করছে। বাংলাদেশের জন্য জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হ”েছ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গারা বার্মার জন্মগতভাবে স্বাধীন নাগরিক ছিল। তারা সেখানে ভোট দিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের প্রতিনিধি সে এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিল। শত বছর যাবত তারা রোহিঙ্গায় বার্মা সরকারের অধীনে থাকলেও সেদেশের সেনাশাসিত সরকার তাদেরকে বলপূর্বক বস্তচ্যুত করে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করে। তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার চালানো হয়। যা পৃথিবীর সব সচেতন সংস্থা, সংগঠন অবগত আছে।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগণ বাংলাদেশের বোঝা হয়ে আছে। এই লেখাতে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বলার বিষয় না। মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকারের ওপর আলোচনায় মুখ্য উদ্দেশ্য। রোহিঙ্গাদের ন্যায় পৃথিবীর আরো বহুদেশ নানাভাবে তাদের জনগণের ওপর চরমভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে। একজন মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা ইত্যাদি। মানুষ তার অধিকার পাওয়ার জন্য আন্দোলন করবে। সংগঠন করবে, ঐক্যবদ্ধ হবে। মিছিল-মিটিং, র‌্যালি করবে। সে লিখবে প্রকাশ করবে তার মনের দুঃখ, ব্যাথা , বেদনা। মত প্রকাশের স্বাধীনতা তার থাকতে হবে। একজন নাগরিক সে তার প্রাপ্য নাগরিক অধিকার পাওয়ার জন্য সে গণতান্ত্রিকভাবে কথা বলতেই পারে। যদি সেখানে সে প্রতিবাদ করতে না পারে তার প্রাপ্য নাগরিক অধিকারের দাবির পক্ষে মিটিং মিছিল আবেদন নিবেদন অনুরোধ করতে না পারে, তাহলে সেটাও মানবাধিকারের বড় ধরনের লঙ্ঘন।

আজকের পৃথিবী ব্যাপী ক্ষমতার পর্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায় , অনেক দেশে দেশে জনগণের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হ”েছ। জনগণকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার মতো জরুরী মানবিক সেবাও নাগরিকরা সঠিকভাবে পাচ্ছেনা। অহরহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও সারা পৃথিবী ১০ ডিসেম্বর আসলে মানবাধিকার দিবস পালন করে। সে দিবসে অনেক আলোচনা সমালোচনা মিছিল মিটিং র‌্যালী সরকারী এবং বেসরকারীভাবে পালিত হয়। পত্রিকা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে মানবাধিকারের ওপর লেখালেখি আর্টিকেল আলোচনা প্রবন্ধ নিবন্ধ ছাপা হয়। কিš‘ কই? মানবাধিকার রক্ষার কোনো পরিবর্তন পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ পা”েছনা। প্রতিদিন পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত মানবতার আর্ত চিৎকার শুনতে পাওয়া যায়। কই দায়িত্বশীল সংগঠন, বিশ্ব শান্তি সংস্থা জাতিসংঘ সহ যারাই মানবতার শান্তির জন্য সংগঠিত হয়েছে তাদের কোনো আওয়াজ নেই। মানবতাবাদি নিরীহ মানুষ শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার আর নির্যাতনে পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। কই কেউতো এসে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখছিনা। জুলুম, নির্যাতন আর নিস্পেষণ অত্যাচারে মানবতাবাদি জনগণ জালিমের জুলুমের শিকার। তাহলে প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস এতো ঝাকজমকপূর্ণভাবে পালন করার কি যুক্তি থাকে। দারিদ্রতা ও বঞ্চনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সমস্যা। আটকাদেশ রাজনৈতিক মক ট্রায়াল এবং পরবর্তীতে জেল প্রদান সব মানবাধিকার লংঘন।যেভাবে মানবাধিকার লংঘিত হয়–সামরিক শাসন এবং একনায়কতন্ত্র ,বন্দীমুক্তি না দেয়া ,মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করা ,মিছিল ভঙ্গ করে দেয়া ,মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়া, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হলে, সকলে সর্বত্র ও সমানভাবে মানবাধিকার ভোগ করার সুযোগ না পেলে , আমাদের স্বাধীনতা আমাদের মুক্তি আমাদের অধিকারের সঙ্গে আশা-ভরসা ও মানবতা সমানভাবে গৃহীত না হলে।

অন্যান্য মানবাধিকারসমূহ–বিবাহ, সন্তানলাভ ও পরিবার গঠন , নিজের মত চাওয়া পূরণ ,মুক্ত চিন্তাভাবনা করা ,সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ,জনসমাবেশ করা ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করা ,গণতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হওয়া ,সামাজিক নিরাপত্তা বিধান শ্রমিকের কাজের অধিকার প্রদান ,খাদ্য ও বাসস্থান প্রাপ্তি ,সবার খেলাধুলার অধিকার * শিক্ষার অধিকার সবার, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান , মানবাধিকার মৌলিক অধিকার, সমাজে সমতা ও মানবিকতার আরেক নাম রক্ষা করাই মানবাধিকার , ভোটাধিকার , কথা বলার অধিকার ,ফেয়ার ট্রায়াল , বিনামূল্যে শিক্ষা , গোত্রের সমতা , যার যার ধর্ম তার তার , ছুটি কাটানোর অধিকার ,শিশুশ্রম বন্ধ করা , শিক্ষা সমতা , মৃত্যুদন্ড না দেয়া , মানবপাচার ,জোর করে শ্রমিক বানানো,যৌন হয়রানি ,জোর করে বিয়ে দেয়া ,মানব অঙ্গ বিক্রয়। আজকের মানবাধিকার দিবসে আসুন আমরা সবার জন্য সর্বত্র মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তা করি। সাথে সাথে মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলি। এই হোক দিবসের প্রত্যাশা। হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করি।

লেখক
মাহমুদুল হক আনসারী
প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক।

 

 

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss