মানুষ মরণশীল। প্রতিটা মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। মৃত্যু তিন প্রকার। শরীর সংক্রান্ত মৃত্যু, মন সংক্রান্ত মৃত্যু, আধ্যাত্মিক মৃত্যু। ঠিক তেমনি ভাবে আত্মহত্যা আধ্যাত্মিক মৃত্যুর অন্তর্ভুক্ত। আত্মহত্যা মহাপাপ। সে যেভাবেই আত্মহত্যা করুক না কেন। আত্মহত্যা বা আত্মহনন (ইংরেজি: Suicide) হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। এই নির্মমতার প্রভাব অবর্ণনীয়। প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আফসোস করে আমাদের জীবন কেন এত ক্ষণস্থায়ী? এত সুন্দর পৃথিবী, এত সুন্দর জীবন আর জীবনের সাথে সম্পর্কের এত মধুর বন্ধন ছেড়ে কে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চায়? তাহলে কেন মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা বিষয়টি কি ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত নাকি নেতিবাচক হিসেবে নেয়া উচিত? একজন মানুষ আত্মহত্যা করার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন: সমাজ সৃষ্ট কোন সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা এরূপ নানাবিধ কারণ বিদ্যমান থাকতে পারে। তবে আত্মহত্যাই কি একমাত্র পথ?
সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসের আত্মহত্যার সংখ্যা আমাদের জন্য উদ্বেগ তৈরি করতে সক্ষম। এ বছরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। দীর্ঘ আট মাসব্যাপী চলমান ডাটা সমন্বয়ের নানাবিধ উল্লেখযোগ্য ফলাফল উপস্থাপন করেন ফারজানা আক্তার। পত্রিকা থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন আত্মহননের পথ বেছে নেয়। যারা তাদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন। ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যার হার বেশি। আত্মহননকারীদের মধ্যে ঢাকায় গত ৮ মাসে শতকরা ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। অপরদিকে সিলেট বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন, যা ৪ শতাংশ। টিনেজারদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সর্বাধিক লক্ষণীয় যা ৭৮.৬ শতাংশ। বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করে ৫৩.৩০%। নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হার বেশি যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০.৭১ শতাংশ বা ২২১ জন। প্রতি ৪০সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যাকারীর আত্মহননের পেছনের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে যে কারণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, সেশনজট, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, মানসিক সমস্যা, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত ইত্যাদি। আরো রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণ্নতা, বন্ধুর মৃত্যু, আর্থিক সমস্যার মতো বিষয়াবলীও। আত্মহত্যার পিছনে দায়ী সাইবারক্রাইমও।
গবেষণা বলছে আর্থিক সংকট, বেকারত্ব, লেখাপড়ায় বাধা, পারিবারিক কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমে ব্যর্থতা, সামাজিক সম্মানহানিসহ নানাবিধ সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ দায়ী একজনের আত্মহত্যার পেছনে। আবেগ নয়, চাই যুক্তি। আত্মহত্যা কখনো কোন কিছুর সমাধান দিতে পারে না। চরম অবসাদ, অপমান, গ্লানি, অবহেলা একাধিক কারণে বেঁচে থাকার ইচ্ছা লোপ পেতে পারে। কিন্তু দুর্বল মূহূর্তের সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেললে ফিরে আসার কোন উপায় থাকে না। আপনি, আমি প্রতিটা মানুষই কোনো না কোনো পরিবার কিংবা সমাজের অন্তর্ভুক্ত। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার আত্মহত্যার কারণে আপনার পরিবার কিংবা আত্মীয় পরিজনদের সমাজে ঠিক কি অবস্থা হয়! যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে মানুষ তাকে নিয়ে হায়-হুতাশ করতে থাকে। এবং যিনি আত্মহত্যা করলেন তিনি তার ইহকাল এবং পরকাল দুটোই একসাথে শেষ করে ফেলেন। ইসলামে আত্মহত্যা হারাম। আর আপনি সেখানে ভাবেন আপনি আত্মহত্যা করে মুক্তি পেয়ে যাবেন? আপনি যে কারণে আত্মহত্যা করলেন, আপনি আত্মহত্যা করার পর কি সেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে? অপরদিকে আপনি আত্মহত্যার মাধ্যমে ইহকালের যে বিষয়টি থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন সেই বিষয়টি থেকে মুক্তি পেলেও আপনি আপনার পরিবারকে সমাজের অশান্তিতে ফেলে গেলেন এবং সেই সাথে আপনার পরকালও। তাই জীবনে যেমন পরিস্থিতি আসুক না কেন কোন অবস্থাতেই আত্মহত্যা করা উচিত না। বরং আমাদের খুঁজে বের করা উচিত ঠিক কোন বিষয়ে আমরা অশান্তিতে আছি এবং সেই বিষয়টিকে খুঁজে বের করে সেটার সমাধানের উপায় বের করা।
শিক্ষার্থী, বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা সরকারি কলেজ।
চস/আজহার