ঈদুল আযহা সকলের জন্য আনন্দের নয় কারো ক্ষেত্রে বা কোন পরিবারের ক্ষেত্রে বিষপানের কারণ। বাংলাদেশে বিয়ের পর মেয়ের বাড়ি থেকে ঈদের বাজার, পশু দেওয়া, পোশাক দেওয়া যেন বিয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো ছাড়া যেন বিয়েকে কোন ভাবেই হালাল করা যায়না। আমাদের চট্টগ্রামেও এটিকে বিয়ের অংশ হিসেবে ভাবা হয়। কার বাবা কি পরিমাণ উপঢৌকন দিচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে তার মেয়ের সুখে থাকা নির্ভর করে। ঈদ উপলক্ষে মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে উপহারের নাম করে যেসকল খাদ্য-দ্রব্য আদান-প্রদান করা হয় সেটাকে আমি রিতিমতো অর্থনৈতিক অত্যাচার হিসেবে বিবেচনা করি।
কিছুদিন আগে দেখেছিলাম আমাদের এলাকার এক মুরুব্বি বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চেয়ে বেড়াচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই সামনে ঈদ মেয়ের বাড়ি ঈদের বাজার পাঠাতে হবে।না হয় যে তার সদ্য বিবাহ হওয়া মেয়ের নানান মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে তবে অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো সেটা শারীরিক নির্যাতনে রুপান্তরিত হয়। মুরুব্বি বলছিলেন এই বৃদ্ধ বয়সে এসে যেখানে দুইবেলা দুমুঠো ভাত খেতে,নিজের ওষুধের খরচ ও বৌয়ের ঔষধের খরচ যোগাতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় সেখানে এসব বাজারের খরচ যোগাতে মানুষের দ্বারে সহযোগিতা চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমার।পরিবারে কোন ইনকাম নেই। ছোট একটা ছেলে আছে।ভাবতেছি আর একটু বড় হলেই কাজে দিয়ে দিবো। অর্থাৎ তিনি বাধ্য হয়ে নিজের ছেলের জীবটাকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবেন।বেহাইয়া কালচার অনুসরণ করতে গিয়ে কিছু ছেলের পরিবরে মেয়ের বাড়ির উপঢৌকন ছাড়া যেন ঈদই সম্পূর্ণ হয়না। এগুলো নিয়ে রীতিমতো একটি মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নানান নির্যানতনের স্বীকার হতে হয়।যার শেষ পরিণতি বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাছাড়া মেয়ের পরিবারের কি করুণ অবস্থা হতে পারে তার বিবরণ আপনারা ইতিমধ্যে উপরে পেয়ে গেছেন।।একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন আমরা কোথায় আছি? কোন সমাজে বসবাস করছি?আমাদের এতো এতো শিক্ষা কোথায়? কেন আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে না?
আমার দৃষ্টিতে এসবের জন্য দায়ী হচ্ছেন আমাদের বাবা-মা ও আত্নীয় স্বজন এবং আমরা নিজেই।কেন আমরা এখনো আমাদের বাবা-মা ও আত্নীয় স্বজনের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারিনি।কেন এখনো আমরা অন্যের বাড়ির উপঢৌকন পেতে এতো আগ্ৰহী। তবে কি এটি আমাদের জাতিগত কুসংস্কার অনুসরণের ফল নাকি মানুষ হিসেবেই আমরা অন্যজনকে নির্যাতন করতে পছন্দ করি।আসুন আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই।
মোঃ রাকিব
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ
ইংরেজি বিভাগ, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম।