ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো জোড়া গোল করেও তার দল জুভেন্টাসকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুক্রবার রাতে নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় রাউন্ডের ফিরতি লেগে জুভেন্টাস ২-১ গোলে অলিম্পিক লিওকে পরাজিত করলেও অ্যাওয়ে গোলের নিয়মে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় ফরাসী দলটি।
দুই দলের মধ্যেকার প্রথম লেগে লিও জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে। ফিরতি লেগে তারা হারলেও ফল দাড়ায় ২-২। তখন অ্যাওয়ে গোল করায় অলিম্পিক লিও পেয়ে যায় পরের রাউন্ডের টিকিট।
কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য জুভেন্টাসের দরকার ছিল কোন গোল না খেয়ে দুই গোল করা। কিন্তু ম্যাচে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। খেলার ১২ মিনিটেই তারা গোল খেয়ে বসে। লিও গোলটি করে একটি বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে। রড্রিগো বেন্টানকুর কোন ফাউল না করেই হুসেম আউরের সামনে থেকে বল ক্লিয়ার করলেও লিওর খেলোয়াড় পড়ে যান। রেফারি ফেলিক্স যওয়ায়ের পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি মাঠের পাশে থাকা মনিটরে রিপ্লে দেখেননি।
পেনাল্টি থেকে ডেম্বে মেমফিস গোল করে লিওকে এগিয়ে দেন। ম্যাচের শুরুর দিকেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ায় জুভেন্টাসের জন্য ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে যায়। গোল খাওয়ার পর জুভেন্টাস আরও বেশী মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে থাকে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে এসে তারা গোলের দেখা পায়। সেটিও পেনাল্টি থেকে। পেনাল্টি বক্সের বাইরে পাওয়া ফ্রি কিকের বল দেয়াল গড়ে তোলা খেলোয়াড় ডিপের হাতে লাগলে পেনাল্টি পায় জুভেন্টাস। পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান রোনালদো। বিরতির পর এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকে স্বাগতিকদের এবং ৫৯ মিনিটে তারা সফলতা পায়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পেনাল্টি বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে নেয়া দুরন্ত এক কিকে করেন দ্বিতীয় গোল। তখন মনে হয়েছিল জুভেন্টাসের পক্ষে হয়তো অবিশ্বাস্য কিছু করে ফেলা সম্ভব হতে পারে। অপর দিকে সফরকারীরা বুঝতে পারে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করতে গেলে তাদের গোল খেতে হতে পারে। তাই তারা রক্ষণভাগের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং দৃঢ়তার সাথে জুভেন্টাসের আক্রমনগুলো রুখে দিতে সক্ষম হয়।
এদিন ভাগ্যও তাদের সহায়তা দেয়। তা না হলে রোনালদোর বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা অল্পের জন্য বাইরে যায় এবং গোলরক্ষকও বাচিয়ে দেন দুরন্তভাবে। বিশেষ করে তার একটি ফ্রি কিক জালে যাওয়ার মুহূর্তে গোলরক্ষক লোপেজ দুইহাত লাগিয়ে বাইরে বের করে দেন। জুভেন্টাসের জন্য ম্যাচটি হয়ে পড়েছিল ওয়ান ম্যান শো। রোনালদো যে এখনও যে কোন দলের জন্য সম্পদ তা আরেকবার প্রমাণ করেছেন। নিজে দুই গোল করা ছাড়াও সহখেলোয়াড়দের সুযোগও তৈরী করে দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন: লিভারপুলের ক্লপ জিতলেন বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার
কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় না হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে হলো। কোভিড-১৯ এর কারণে খেলা বন্ধ থাকায় ছন্দ হারায় জুভেন্টাস। তিন মাস বিরতির পর খেলা শুরু হলে তারা সিরি এ লীগ জেতে ঠিকই কিন্তু আগের সেই ছন্দময় ফুটবল উপহার দিতে ব্যর্থ হয়। যার ছায়া পড়ে এ ম্যাচেও।
অলিম্পিক লিওর কোচ রুডি গার্সিয়া স্বীকার করেন তারা নিজেদের সেরাটা উপহার দেয়ার পর ভাগ্য সহায়তা করেছে বলেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম ভাল খেলার পাশপাশি আমাদের ভাগ্যের সহায়তাও দরকার হবে। আমরা প্রথম লেগ খুব ভাল খেলেছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে রোনালদো থাকায় এটাও জানতাম যে কোন সময়ে তিনি আমাদের নক আউট করে দিতে পারেন। আমরা এখন ইউরোপের সেরা আট দলের একটি। ম্যানচেস্টার সিটি অনেক শক্তিশালী একটি দল। কাজেই পরের ম্যাচে আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। আমাদের পরের লক্ষ্য সেমিফাইনাল।’
সিরি এ লীগ জেতা জুভেন্টাসের মূল লক্ষ্য ছিলনা। কারণ সেটা তারা জিতে চলেছে নয় বছর ধরেই। তাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। সেটা জিততে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মওসুমের শেষ দিকে দল ভাল করতে না পারায় সম্ভবত কোচ মরিজিও সারিকে বরখাস্ত করা হতে পারে।
চস/স