বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ–প্রতিবেশের সুরক্ষায় সেখানে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দ্বীপটিতে পর্যটকের বিচরণ সীমিত করা হবে। আর ফেব্রুয়ারিতে সেখানে পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন, কিন্তু রাতে থাকতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার পর্যটক প্রতিদিন যেতে পারবেন, রাতেও থাকতে পারবেন। আর ফেব্রুয়ারিতে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না, তখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, এটি একটি প্রবাল দ্বীপ। এখন প্রচণ্ড ভার্নারেবল একটি জায়গায় আছে। ৪১ শতাংশ অবশিষ্ট আছে, এটা রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই কারণে পদক্ষেপগুলো নেওয়া। এছাড়া সেন্ট মার্টিনে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে বলেও জানান তিনি।
দুই হাজার পর্যটককে কীভাবে নির্বাচন করা হবে, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, পর্যটকরা যাবে, তাদের নম্বর করা হবে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি কারা এটা নিয়ন্ত্রণ করবে। যৌথ উদ্যোগেই করা হবে। পূর্ণাঙ্গ বিষয় পরবর্তীতে জানানো হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় পর্যটক সীমিত করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। গত ৭ অক্টোবর সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন, কঙবাজার এবং কুয়াকাটাকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই প্রবাল দ্বীপ আমাদের দেশে একটিই আছে, তাই একে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি সমুদ্র সম্পদের টেকসই আহরণের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘সেন্ট মার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তখন বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে হুমকির মুখে থাকা প্রবাল, গোলাপী ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন; ব্লু ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি–১৪) অর্জনের লক্ষ্যে এই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ–পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে সাগরের বুকে ৮ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। কঙবাজার জেলা শহর থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। এ দ্বীপ সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র। এছাড়া এখানে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ট বা কড়ি জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, পাঁচ প্রজাতির ডলফিন, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, দুই প্রজাতির বাদুড়সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিল এককালে। এসব প্রজাতির অনেকগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জীববৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনের ৫৯০ হেক্টর এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করেছিল সরকার।
চস/স