spot_img

২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য পাবেন মারাইংতং পাহাড়ে

যেখানে পাহাড়ের চুড়ায় মেঘের সাথে পাহাড়ের মাখামাখি। সন্ধ্যা হলে শোনা যায় ঝি ঝি পোকার ডাক। বিকেলের সূর্য অস্তে মেঘে মেঘে ছড়িয়ে যায় আবিরের রং। ভোরে সূর্য উঠার আগে হাত দিয়ে মেঘ ছুয়ে দেখার সুযোগ, মনে হবে আপনি ভাসছেন মেঘের ভেলায়। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন বলছিলাম মারাইংতং পাহাড়ের কথা। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসীর বাস। ত্রিপুরা, মারমা ও মুরংদের পাড়া ফেলে উঠতে হবে বান্দরবানের আলীকদমের এই মারাইংতং পাহাড়ে। এটি মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড় যার উচ্চতা প্রায় ১৭৪০ ফিট। অনেকে এই পাহাড়কে মারায়ন তং পাহাড়ও বলে থাকে। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় রয়েছে বৌদ্ধধর্মীয় উপাসনালয়।

পাহাড়ের ওপরের সমতল অংশে দাঁড়িয়ে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেই পাহাড়ের নিচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী।
পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও তাদের নিত্যদিনের আয়-রোজগারের জন্য এই পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালিদের অনেকেই পাহাড়ে জন্মানো মুলি বাঁশ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে সমতলে প্রচুর সবজির চাষ হয়।

সেদিন ভোর সাতটায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু ( নতুন ব্রিজ) এলাকায় বাস কাউন্টারে উপস্থিত হই আমরা ১৩ জন। মুজিব ভাই, রাজীব ভাই, মেহেদি, রাশেদ, রিপন, মোবারক, অভিজিৎ, আকবর, হিমু, বাপ্পি, মাইকেল, তারিক ও আমি রাজিব রাহুল। টিম লিডার রিপন দাশের নেতৃত্ব সেখান থেকে বাসে করে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড নামি । ২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ভাড়া গুনতে হলো জনপ্রতি ২৬০ টাকা। সেখান থেকে জীপে (চান্দেঁর গাড়ি) করে ১২০ টাকা করে আলীকদম আবাসিক শিলবুনিয়া পাড়ায় নামলাম। আমরা চাইলে আলীকদম বাসস্ট্যান্ড নেমে সেখান থেকে ২০ টাকায় অটোতে করে আবাসিকে যেতে পাড়তাম । টিম লিডার রিপন আমাদের কষ্ট দিতে রাজি না। আবাসিকে নেমে স্থানীয় চাকমাদের একটু জিরোয় নামের রেস্টুরেন্ট খাওয়া দাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সাড়ে তিনটার সেখান থেকে পাশের রাস্তাটা ধরে প্রায় দু ঘণ্টা হেটে পৌঁছে গেলাম মারাইংতং পাহাড়ের চুড়ায়। আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় মারাইং তং। এখানে খাবার ও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, কাজেই শুকনো খাবার ও পানি আমরা সমতল থেকেই নিয়ে গিয়েছিলাম । ও ভুলে গেছি আসার সময় আলী কদম উপজেলায় সেনা ক্যাম্পে সবার ভোটার আইডির ফটোকপি জমা দিয়েছি। আপনার যারা এখানে আসবেন অবশ্যই সাথে রাখবেন ভোটার আইডির ফটোকপি, গামছা, খাবার, টর্চলাইট, বেডসিট, তাবু ও টিস্যুসহ যাবতীয় জিনিসপত্র।

পরদিন সকালে আমরা মারাইংতং পাহাড়ের মেঘের সাথে পাহাড়ের মাখামাখি দেখে নেমে আসলাম সমতলে। আবারও একটু জিরোয় রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া সেরে ১১টার সময় টমটমে রওয়া দিলাম আলীর গুহা দেখতে। বলে রাখি এই গুহায় বয়স্কদের না যাওয়াই ভালো কারণ এখানে দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারনে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তবে এখানে গেলে ভালো দৃশ্যই দেখতে পাবেন আপনি। ঘণ্টা খানেকের আলীর গুহা অভিযান শেষে আমরা রওনা দিলাম আলী কদম বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ডের আগে আলীকদম থানার পাশে দামতুয়া রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার শেষে বাসস্ট্যান্ড থেকে জীপে করে রওনা দিলাম চকরিয়া বাস স্টেশনের উদ্দেশ্যে। বলে রাখা ভালো দামতুয়া রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম দিগুণ। এটা ছাড়া বাসস্ট্যান্ডেই কোন হোটেল খেয়ে নিতে পারেন। দারুণ একটা ভ্রমণ ছিল মারাইংতং পাহাড়। না গেলে বুঝতে পারবেন না এখানে ভ্রমনের আনন্দ।

লেখক : সাংবাদিক

 

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss