এগারো বছরের ব্যবধানে বছরে দেশে পতিত কৃষিজমি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ কৃষিশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে পতিত জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার একরে। ২০০৮ সালের শুমারিতে যা ছিল দেড় লাখ একর। অন্যদিকে, দেশে নিট আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। দুই শুমারির মধ্যবর্তী সময়ে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। নতুন শুমারি অনুযায়ী, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ কোটি ৮৭ লাখ একর। আগের জরিপে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ একর।
গতকাল মঙ্গলবার নতুন কৃষিশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আবাদযোগ্য যে জমি বা জমির অংশ গত বছর চাষাবাদ হলেও বর্তমানে হচ্ছে না, তবে পরবর্তী মৌসুমে সেখানে ফসল উৎপাদন সম্ভব- এমন জমিকেই প্রতিবেদনে হালে পতিত জমি বলা হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ২০১৯ সালের তথ্যের ভিত্তিতে শুমারির প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এবারের শুমারিতে দেখা গেছে, দেশে নিট অস্থায়ী ফসলাধীন জমির পরিমাণ ১ কোটি ৬৪ লাখ একর। ২০০৮ সালে যা ছিল ১ কোটি ৭৬ লাখ একর। আর স্থায়ী ফসলাধীন জমির পরিমাণ ১৯ লাখ ৭০ হাজার একর। আগের শুমারিতে এ ধরনের জমির পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৭৬ হাজার একর। সব শেষ শুমারিতে সেচের অধীন থাকা জমির পরিমাণ ১ কোটি ২৫ লাখ একর। এটি ১ কোটি ১৯ লাখ একর ছিল ২০০৮ সালে।
প্রতিবেদনে পরিচালনাধীন জমির মধ্যে যে পরিমাণ জমিতে প্রতি বছরই ধান, গম, পাট, আখ, ডাল, তেলবীজ, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি ফসল উৎপাদন করা যায়, সে পরিমাণ জমিকে অস্থায়ী ফসলাধীন জমি বোঝানো হয়েছে। এসব ফসল এক বছরের বেশি সময় জমিতে থাকে না। আর স্থায়ী ফসলাধীন জমি বলতে বোঝানো হয়েছে সংঘবদ্ধ ফলের গাছ, কাঠ জাতীয় গাছ, অর্থকরী গুল্মের অধীন জমিকে।
গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে: শুমারিতে দেখা গেছে, গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। এ সময়ে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার। ২০১৯ সালে শুমারির সময় দেশে গরুর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার, যা ২০০৮ সালের শুমারিতে ছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার। অন্যদিকে ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৩১ লাখ ২৬ হাজার। ছাগলের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার। ২০০৮ সালের শুমারিতে যা ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার। এ ছাড়া মহিষ, মোরগ-মুরগি এবং হাঁসের সংখ্যাও বেড়েছে।
কৃষি খাতের তথ্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতি ১০ বছর পর কৃষিশুমারি করার কথা। তবে সর্বশেষ শুমারির পর এবার শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে প্রায় ১৪ বছর সময় লেগেছে। এ বিলম্বের কারণে অনুষ্ঠানে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী।
শুমারিতে বাণিজ্যিক খামারের তথ্য নেই :গরু ও হাঁস-মুরগির যে সংখ্যা বিবিএসের শুমারিতে উঠে এসেছে এর সঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের তফাত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে এগুলোর সংখ্যা অনেক বেশি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, বাণিজ্যিক খামারের তথ্য শুমারিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, খানা পর্যায়ে যত গবাদি পশু কিংবা হাঁস-মুরগি পালন করা হয়, তার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি হয় বাণিজ্যিক পর্যায়ে। এটা একেবারেই ঠিক হয়নি। এ ছাড়া অর্থনীতি এবং জনমিতির জরিপ প্রতি দুই বছরে একবার করার পরামর্শ দেন তিনি।
ড. শামসুল আলম বলেন, কৃষিশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুধু মুদ্রণ ও অন্যান্য কাজে তিন বছর গেছে, এটি সন্তোষজনক নয়। সব ধরনের জরিপ নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করতে হবে।
সূত্র: সমকাল
চস/আজহার