spot_img

১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

বান্দরবানে তৈরি হল কলাগাছের তন্তু থেকে শাড়ি

কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি সুতা আর সেই সুতা তাঁতে বুনে শাড়ি। বানানোর অসম্ভব কাজ সম্ভব হয়েছে বান্দরবানে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির নেয়া একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে মনিপুরী নারীরা কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করে দেখিয়েছেন।

বান্দরবান শহরের কাছে কালাঘাটা মনিপুরী পল্লীতে এই শাড়িটি তৈরি করেছেন মনিপুরী রাধাবতি দেবী। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি এক কেজি কলাগাছের সুতা তাঁতে বুনে তৈরি করেছেন একটি শাড়ি। শাড়িটির ডিজাইন অনেকটাই জামদানি শাড়ির মতো। এই ডিজাইনটিকে মনিপুরীরা ‘মইরান’ বলে। কলাগাছের সুতা দিয়ে বোনা এই শাড়ি নিয়ে এখন এলাকায় হইচই পড়ে গেছে।

জানা গেছে, দেড় বছর আগে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরির একটি উদ্যোগ নেন। নারীর কর্মসংস্থান সেই সাথে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া এই লক্ষ্য থেকে প্রকল্পটিতে প্রথম দিকে বেসরকারি এনজিও সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন, গ্রাউস, উদ্দীপন ও লাফার্স সহায়তা দেয়। এ ছাড়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতর ও উইমেন চেম্বার অব কমার্স নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে কালাঘাটার গুণমনি মনিপুরী ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উঃ নিনি দম্পতির বাসায় কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি ও নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরির কাজ চলছে।

নিনি জানান, প্রথম দিকে কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি দেখে তিনি শাড়ি ও হস্তশিল্প তৈরিতে আগ্রহ দেখান। সে হিসেবে তার মনিপুরী স্বামীর নিকট আত্মীয় মনিপুরী শিল্পীদের এনে প্রথমে নানা ধরনের হস্তশিল্প কলমদানি, টেবিল ম্যাট, ফাইল হোল্ডার, কানের দুলসহ নানান ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করেন। পরে সেই সুতা দিয়ে তাঁতে শাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেন।

কাঠের তৈরি তাঁত বানানো থেকে শুরু করে সুতা তৈরির সব দিকে সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক। তিনি আরো জানান, শাড়ি বানানোর জন্য সুদূর সিলেটের মনিপুরী পাড়া থেকে নিয়ে আসা হয় ৬৫ বছর বয়সী অভিজ্ঞ তাঁতি রাধাবতি দেবীকে। দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে শাড়ি তৈরিতে সফল হন তিনি।

রাধাবতি জানান, ৭৫ সাল থেকেই তিনি সুতা দিয়ে শাড়িসহ নানা কিছু তৈরি করতেন। কিন্তু কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি ছিল তার কাছে একেবারেই নতুন। যেহেতু কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি হয়েছে আর সেই সুতা দিয়ে শাড়ি বানাতে আপত্তি নেই। জেলা প্রশাসকের অনুরোধের পর তিনি নেমে পড়েন কাজে। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় আরো তিনজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁতে বসে তৈরি করে ফেলেন জামদানি ডিজাইনের কলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি শাড়ি। সাধারণ সুতায় ৫০০ গ্রাম দিয়ে যেখানে একটি শাড়ি তৈরি করা যায় সেখানে কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করতে লাগে প্রায় এক কেজি। এখন এই শাড়ি দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন বাড়িতে।

এই সফলতাকে তিনি অনেক উপভোগ করছেন বলে জানান রাধাবতি। তবে এই শাড়ি কতটুক স্থায়িত্ব হবে শাড়ি পরতে মানুষ কতটুকু স্বাছন্দ্য বোধ করবে এটি নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। কলাগাছের সুতা তৈরিতে গবেষণা করলে আরো সূক্ষ্ম ভালো সুতা তৈরি করতে পারলে ভালো শাড়ি তৈরি করা যাবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। নানা জায়গায় তা সমাদ্রিত হয়েছে। এখন শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বান্দরবানের উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে রফতানির পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সাফল্যে বড় অবদান রাখবে।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss