spot_img

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শনিবার
১১ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

প্রসঙ্গ : চট্টগ্রামের বইমেলা  

বই মেলা। শব্দটাকে আলাদা করলে দুটি শব্দ পাওয়া যাবে। একটা বই, অন্যটা মেলা। বই মানেই একটা ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিধি। যেখানে প্রবেশ করলে খুব সহজেই ভুলে যাওয়া যায় বাস্তব পৃথিবীকেও। বই একজন ভালো বন্ধুও বটে। যাই হোক বই সম্পর্কে এর চাইতে অনেক ভালো সংজ্ঞা অনেক বিজ্ঞরা বলেছেন।

এই যেমন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ-কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়। আবার ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মানুষের জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। এই যে এতো সুন্দর সুন্দর উক্তি। এরপরও বই সম্পর্কে আমি আর কি বলবো!

এবার আসা যাক বইমেলা নিয়ে। আমি সহজভাবে বলি, যে মেলায় শুধুই বই থাকে তাকে বইমেলা বলা হয়। বইমেলা একটা অন্য আমেজের মেলা। যেখানে বিভিন্ন আইটেম রয়েৃছে। তবে তা খাওয়ার নয়, পড়ার। আমরা মেলায় গেলে বিভিন্ন খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিস পাই যা ব্যবহার করা এবং খাওয়া যায়। কিন্তু বই হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার অস্তিত্ব কখনও ফুরিয়ে যাবে না। আপনার কেনা বইটি পড়তে পারবে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আপনার প্রিয়জন। বই সাজিয়ে রাখাও যায়। যা যুগযুগ ধরেই যতœ করে রাখতে পারলে থাকবে। আর এই বইয়ের সমাহারে সৃষ্টি হয় বইমেলা।

তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ এবং ভালোবাসা আছে বলেই এ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। নয়তো বইও বের হতো না, বইমেলাও সৃষ্টি হতো না। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনায় বৃহৎ পরিসরে বইমেলা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন জেলায় দুদিন, তিনদিন এবং সর্বোচ্চ সাতদিন পর্যন্ত খন্ড খন্ড বইমেলার আয়োজন করেছে। সব বইমেলায় আমার যাওয়া হয়নি।

তবে চট্টগ্রামে বসবাস করার সুবাদে চট্টগ্রাম বইমেলায় আমার প্রায় যাওয়া হয়। আয়োজন নিয়ে নিয়ে কোনো ত্রুটি না থাকলেও এবারের বইমেলায় শুরু হয়নি নির্দিষ্ট দিনে। প্রথমদিন অর্থাৎ দশ তারিখ মেলায় প্রবেশ করে দেখা যায় অনেক অনেকগুলো প্রকাশনী তাদের স্টল নিয়ে কাজ করছে। কাজ চলছিলো মেলা প্রঙ্গণে মেলার তৃতীয় দিনও। কয়েকটি স্টলে ব্যানার ছিলো না মেলার তিন দিনেও। যার কারণে বলা যায় প্রকৃত মেলাটা তের তারিখেই শুরু হয়েছে। এবং চৌদ্দ তারিখ মেলাকে মেলার মতোই মনে হয়েছিলো। যা কিন্তু পরেরদিন আর মনে হয়নি।

এবারের চট্টগ্রাম বইমেলায় যে বিষয়টি লক্ষ কলাম তা হলো পাঠকের সমাগমের স্বল্পতা। বিশেষ বিশেষ কয়েকদিন ছাড়া পাঠকদের দেখাও যায় না মেলায়। যা আসে তা হচ্ছে গুটি কয়েক। মেলায় এমনও কয়েকটি স্টল আছে যাদের এমনও কিছু দিন গিয়েছে দুটি বইয়ের বেশি বিক্রি হয়নি।

এছাড়া বইমেলা শুরু হওয়ার সময় জানা যায় কয়েকটি প্রকাশনী বইমেলায় স্টল পায়নি। কিন্তু মেলায় দেখা যায় কয়েকটি স্টল পুরো মেলাজুড়েই খালি পড়ে আছে। এবং বেশকিছু প্রকাশনীর ছিলো দুটি করে স্টল। কোনো কোনো প্রকাশনী মেলায় সুযোগ পায় না আবার কোনো কোনো প্রকাশনী দুটা/তিনটা করে স্টল পায় এটা সত্যি অবাঞ্চনীয়। দুটো স্টল পাওয়া যে খারাপ বিষয় তা নয়। তবে সবাইকে সুযোগ দিয়ে তারপর ভালো ভালো প্রকাশনী গুলোকে বাড়তি স্টল দেওয়া যায়। মেলায় এমনও কিছু প্রকাশনী দেখলাম যাদের কোনো অস্তিত্বও গত বছর দেখা যায়নি।

আমার বিশ্বাস আগামীবার এধরনের বিষয়গুলোতে মেলা কর্তৃপক্ষ সুনজর দিবেন। এছাড়াও বইমেলায় পাঠকদের আগ্রহী করার জন্য মেলা কর্তৃপক্ষের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিলো তার কিছুই নিয়েছে বলে আমার বোধগম্য নয়। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের এবার তেমন চোখেও পড়েনি। এজন্য প্রয়োজন ছিলো স্কুল-কলেজের সাথে যোগাযোগ করা। এছাড়াও মেলা কর্তৃপক্ষ চাইলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারতো। যেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারতো। যার সুবাদ মেলা প্রাঙ্গণে দর্শণার্থীর সংখ্যা অন্তত বৃদ্ধি পেত। একশ দর্শণার্থীর মাঝে হয়তো একজন পাঠকও থাকতো। মেলায় প্রতিযোগিতার জন্য আসলেও বই দেখে পছন্দ হলে সেটা নিয়ে যেত। তাই এসব নিয়ে ভবিষ্যৎ বইমেলা আয়োজন করার আহ্বান জানাই চট্টগ্রাম বইমেলা আয়োজনকারীদের।

তবে এতোকিছুর পরও তাদের সাধুবাদ জানাই, এতো সুন্দর একটি বইমেলা চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য। জয় হোক বইয়ের, জয় হোক বইমেলার।

আজহার মাহমুদ প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss