spot_img

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শনিবার
১১ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ

স্বপ্নটা অনেকটা কঠিন। বিশ^কাপের সেমিফাইনাল খেলতে হলে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচ জিততে হবে টাইগারদের। সাথে আছে নানা সমীকরণ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে টাইগাররা যখন খেলতে নামে ভারতের বিপক্ষে তখন ম্যাচটা পেয়ে যায় অনন্য এক মাত্রা। উত্তেজনার পারদ টগবগ করতে থাকে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়ায় যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে থাকেন সমর্থকরা। একসময় উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ ছিল ক্রিকেটে অন্যতম আকর্ষণীয় ম্যাচ। কিন্তু বর্তমানে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো হয়ে উঠছে উত্তেজনাকর ও রোমাঞ্চে ভরা। বিশেষ করে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ এখন আলাদা একটি মাত্রা পেয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার নটআউট, মাহমুদউল্লাহর আউট এবং ২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনালে লিটন দাসের আউট। বাংলাদেশ-ভারত বৈরিতা শুরু তখন থেকেই। আর তাই এ ম্যাচকে ঘিরে এখন বিশ^ ক্রিকেটের বাতাসে বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে এখন আগ্নেয়গিরির উত্তাপ। বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথের আবহে টগবগে উত্তেজনা, উন্মাতাল উন্মাদনা, রক্তে শিহরণ ছড়ানো রোমাঞ্চ- কোনোটিরই কমতি নেই। এজবাস্টনে ক্রিকেটের নব্য এ মহারণ অনুষ্ঠিত হবে আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায়।
বার্মিংহামে গতপরশু ইংল্যান্ডের জয় সেমিফাইনালের স্বপ্ন থেকে অনেকটা দূরে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। অবশ্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি শেষ চারে যাওয়ার আশা। তবে পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। সঙ্গে বাকিদের নানা সমীকরণ তো আছেই। তবে এসব নিয়ে ভাবতে নারাজ টাইগাররা। নিজেদের কাজটা আগেই সেরে নিতে চান তারা।
গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে টাইগার দলপতি মাশরাফি বলেন, ‘অন্যদের দিকে তাকিয়ে থেকে তো কোনো লাভ নেই। এ পর্যন্ত এসেছি তিনটা ম্যাচ জিতে, ৬ পয়েন্ট পেয়েছি, একটা পয়েন্ট বৃষ্টিতে পেয়েছি। যে ম্যাচগুলো জিতেছি, ভালো খেলেই জিতেছি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও জিততে গেলে ভালো খেলেই জিততে হবে।’ ‘আসলে অন্যদের দিকে তাকিয়ে এই ধরণের টুর্নামেন্টে আমি মনে করি না লাভ আছে। কালকে (আজ) হারলে আমাদের বিশ্বকাপ শেষ। তবে গত সোমবার ইংল্যান্ড হারলে হয়ত ভিন্ন কিছু হত। আমি ইতিবাচকভাবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি, কাল (আজ) যদি আমরা জিততে পারি সেটা হবে আরও আনন্দের। তাই মনে করি কঠিন অবস্থাই বেটার দলের জন্য এবং দলকে সামনের ধাপে নেয়ার জন্য।’
বিশ্বকাপে এ দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয় ২০০৭ আসরে। প্রথম দেখাতেই শক্তিশালী ভারতকে পরাজিত করে বড় বিস্ময়ের জন্ম দেয় বাংলাদেশ। পরাজয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। এরপর দুই দল পরস্পরের মুখোমুখি হয় ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে। এ দুই ম্যাচেই অবশ্য বড় জয় পায় ভারত। আজ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল ঘটতে পারে। আফগানদের বিপক্ষে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হয়েছিলেন লিটন। তবে সফল হননি তিনি। ফলে মিডলঅর্ডারে নেমে যেতে পারেন এ হার্ডহিটার। ওপেনিংয়ে উঠে আসতে পারেন সৌম্য। সবশেষ ম্যাচে ইনিংসের মাঝপথে সফল হননি তিনি। সুতরাং জায়গা অদলবদল করতে হতে পারে লিটন-সৌম্যকে। ওয়ানডাউনে যথারীতি নামবেন সাকিব। এবারের বিশ্বকাপে আগুনে ফর্মে আছেন তিনি। ইতোমধ্যে টুর্নামেন্টে ৪৭৬ রান ও ১০ উইকেট শিকার করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সাফল্যের নায়ক সাকিব হলে পার্শ্বনায়ক মুশফিক। এখন পর্যন্ত ৩২৭ রান করে দলের জয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন তিনি। চার নাম্বারে নামবেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ফর্মটা খারাপ যাচ্ছে না মাহমুদউল্লাহর। মিডলঅর্ডারে ব্যাটিং স্তম্ভ তিনি। ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে খেলা হচ্ছে না তাঁর। তিনি না থাকায় পঞ্চম স্থানে নামবেন লিটন দাস। মাহমুদুল্লাহর পরিবর্তে দলে ফিরতে পারেন সাব্বির রহমান। সাব্বির খেলবেন ষষ্ঠ স্থানে। সপ্তম স্থানে খেলবেন মোসাদ্দেক। এ দুই ব্যাটিং পজিশনে বেশ সফল তারা। পরে ক্রিজে আসবেন যথাক্রমে সাইফউদ্দিন, মিরাজ, মাশরাফি ও মুস্তাফিজুর। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ শক্তিশালী হলেও দুশ্চিন্তা বোলিং আক্রমণ ঘিরে। এখন পর্যন্ত সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি পেস অ্যাটাক ত্রয়ী- সাইফ, মাশরাফি ও মুস্তাফিজ। আসরে ওভারপ্রতি ৬ এর উপরে রান দিয়েছেন তারা। খুব একটা সফল নন মিরাজও। তদুপরি সাকিবের সঙ্গে তাকেই স্পিন আক্রমণের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টটাইমার হিসেবে সমর্থন জোগাবেন মোসাদ্দেক। তবে এখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৬ ম্যাচে মাত্র ১টি উইকেট টাইগার নেতার। তবে এবার প্রতিপক্ষ ভারত বলে কথা। ভারতের বিপক্ষে মাশরাফির জ্বলে উঠার রেকর্ড রয়েছে। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে স্মৃতি আজও রোমাঞ্চিত করে মাশরাফিকে। ২০০৪ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ ওভারে ৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ভারতের বিদায় ঘন্টা বাজিয়েছিলেন মাশরাফি। ৩৮ রানে তার ৪ উইকেট শিকারে ভারতকে ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। তাই ভারতের বিপক্ষে মাশরাফির আরও একটি ঝলক দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
এদিকে ব্যাটিংয়ে ভারতের মূল শক্তি টপঅর্ডার। চলতি বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই ৩টি সেঞ্চুরি করে ফেলা ওপেনার রোহিত শর্মা আছেন সেরা ফর্মে। এছাড়াও বিরাট কোহলি, কেএল রাহুলও রান পাচ্ছেন। ব্যাটিংয়ের টপ অর্ডার সফল হলেও মহেন্দ্র সিং ধোনি-নির্ভর মিডিল অর্ডার কিন্ত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতকে ভুগিয়েছে। ম্যাচের আগের দিন চোটের জন্য অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করের ছিটকে যাওয়া টিম ইন্ডিয়ার কাছে বড় ধাক্কা। তার অভাব তরুণ ঋষভ পান্থ পূরণ করতে পারবেন কিনা দেখার বিষয়। তবে দুর্দান্ত ছন্দে আছে জসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ শামি সম্বলিত ভারতের বোলিং বিভাগ।
সবকিছু ছাপিয়ে আজ শেষ ম্যাচ জয়ের সুবাদে ভারতের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তবে মনের মধ্যে শঙ্কা বা আতঙ্ক ঠিকই থাকবে। কারণ হেরে গেলেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হবে বাংলাদেশকে। এসব চিন্তা দূরে রেখে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। অতীতেও এমন রেকর্ড গড়ার স্মৃতি আছে বাংলাদেশের। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার পর ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির গড়েছে মাশরাফির দল। আজও নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের উজাড় করে দিবেন মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা, সেই অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss