spot_img

২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যেভাবে সওয়াব পাঠাবেন

প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘প্রত্যকে প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবশে করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ -সুরা আলে ইমরান ১৮৫

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো, তবুও।’ -সুরা নিসা ৭৮

মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তবুও আত্মীয়-স্বজন কিংবা কাছের ও পরিচিত কেউ মারা গেলে মানুষ কষ্টে ব্যথাতুর হয়। তাদের স্মরণ করে প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতর হয়। এতে বেদনায় ভরে ওঠে তাদের মন। এই স্মৃতিকাতরতা ও বেদনা থেকে জন্ম নেয় তাদের জন্য কিছু করার বা তাদের উদ্দেশ্যে সওয়াব পৌঁছানোর প্রবল ইচ্ছা। শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবিতরা মৃতদের জন্য কয়েকটি বিশেষ পদ্ধতিতে সওয়াব পৌঁছাতে পারে।

মৃত ব্যক্তির ভালো কাজের আলোচনা করা : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ -আবু দাউদ

মৃতদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা : পবিত্র কোরআনে হজরত ইবরাহিম (আ.) এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন।’ -(সুরা ইবরাহিম ৪১) অন্য জায়গায় নুহ আলাইহিস সালামের এই দোয়া বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে। আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ -সুরা নুহ ২৮

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শুধু তিনটি আমলের উপকার ভোগ করতে পারে। এক. সদকায়ে জারিয়া। দুই. এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়। তিন. এমন সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ -সহিহ মুসলিম

মৃতদের সওয়াবের উদ্দেশে দান-সদকা করা : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি হজরত রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।’ -সহিহ বোখারি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন। কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার গোনাহের কাফফারা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সহিহ মুসলিম

ঋণ পরিশোধ করা : মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করা সন্তানের দায়িত্ব। জাবের (রা.) রাসুল (সা.) -এর নির্দেশে তার পিতা আবদুল্লাহ বিন হারামের ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। -(সহিহ বোখারি) এতে মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে বান্দার হক আদায় হয়ে যায়। অন্যথায় বান্দার হকের কারণে পরকালে নিজের সওয়াব দিয়ে দিতে হবে অথবা পাওনাদারের গুনাহ বহন করতে হবে। -মুসতাদরাকে হাকেম

ছুটে যাওয়া নামাজ-রোজার ফিদিয়া আদায় করা : মা-বাবার ছুটে যাওয়া নামাজ-রোজার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাজ বা প্রতি রোজার পরিবর্তে এক মুদ বা (বর্তমান বাজার অনুযায়ী) পৌনে দুই কেজি পরিমাণ গম সদকা করা। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক

নফল নামাজ-রোজা আদায় করা : সন্তান মৃত মা-বাবার জন্য নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সওয়াব পৌঁছাতে পারবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! জীবদ্দশায় আমি আমার মা-বাবার অনুগত ছিলাম। তাদের মৃত্যুর পর আমি কীভাবে তাদের আনুগত্য করব? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, মৃত্যুর পর তাদের আনুগত্য হলো, তুমি নামাজ পড়ার সময় তাদের জন্য নামাজ পড়বে এবং তুমি রোজা রাখার সময় তাদের জন্য রোজা রাখবে।’ -আওজাজুল মাসালিক ইলা মুয়াত্তা মালিক

হজ, ওমরাহ ও কোরবানির মাধ্যমে সওয়াব পৌঁছানো : মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ, ওমরাহ, কোরবানি করেও সওয়াব পৌঁছানো যায়। -সহিহ মুসলিম

মৃতদের জন্য দোয়া করা : কবরে মৃতব্যক্তির আত্মার প্রশান্তির জন্য দোয়া করা যায়। বিশেষ করে মা-বাবার মাগফিরাতের জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বান্দাদের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। তা হলো : ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’। -সুরা বনি ইসরাইল ২৪

ওয়াদা বাস্তবায়ন করা : মৃতব্যক্তি কোনো ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা সন্তানের দায়িত্ব। সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুরা বনি ইসরাইল ৩৪

মৃতদের কবর জিয়ারত করা : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি এর আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। তবে এখন থেকে অনুমতি দিলাম। তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের দুনিয়াবিমুখ করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ -ইবনে মাজাহ

সূত্র: দেশরুপান্তর

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss