চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ইংরেজি বিভাগের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নে মার্কেটিং বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি মাহ-এ-নূর কুদসী ইসলামকে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকিও দিয়েছেন ওই অধ্যাপক। এ ঘটনায় বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য বিভাগের হস্তক্ষেপ ও জেলের হুমকি দেওয়ার ব্যবস্থা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) নিকট চিঠি দিয়েছেন সভাপতি মাহ-এ-নূর কুদসী ইসলাম।
জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স ২১ সালের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৩৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয় ৷ কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পূর্বে বিভাগের নানান অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তারা আক্রোশের শিকার হয়েছেন। পরে তারা ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলন করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৮ ও ২৯ আগস্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ডিনদ্বয়ের সাথে একটি মিটিং হয়। এতে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক যাকীয়াহ্ তাসনীম (অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী) অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গত ১ সেপ্টেম্বর একাডেমিক সভাতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের আবেদনের ফর্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে গেলে সেখানে যাকীয়াহ্ তাসনীম ও তার স্বামী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন উপস্থিত হয়ে ইংরেজির বিভাগের সভাপতি মাহ্-এ-নুর কুদসীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট দেওয়া চিঠিতে মাহ-এ-নূর কুদসী উল্লেখ করেন, গত ১৮ আগস্ট ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ২১ সালের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক যাকীয়াহ্ তাসনীম (অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী)। প্রকাশিত ফলাফলে ৩৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় তারা ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলন করেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজি বিভাগের কার্যালয়ে ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে উপাচার্যের নিকট প্রেরণ করা হবে এবং উপাচার্যের অনুমতি সাপেক্ষে পুনর্মূল্যায়ন কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে বলে শিক্ষার্থীদেরকে জানানো হয়।
চিঠিতে কুদসী ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের আবেদনের ফর্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে গেলে সেখানে যাকীয়াহ্ তাসনীম ও তার স্বামী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন উপস্থিত হন এবং আমাকে দেখা মাত্রই তিনি অত্যন্ত ক্ষীপ্রতার সাথে মারমুখী হয়ে আমাকে বলতে থাকেন গত ১ সেপ্টেম্বর ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের সভাটি উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে অন্য কারো প্ররোচনায় একটি ষড়যন্ত্রমূলক নাটক মঞ্চায়িত করেছি। এ জন্য আমাকে উনি ছেড়ে দিবেন না, দেখে ছাড়বেন এমন কি তিনি আমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বেন বলে হুমকি দেন।
‘উনাদের উভয়কে আমি অত্যন্ত নম্রতা ও বিনয়ীর সাথে বুঝাবার চেষ্টা করেছি যে, এমন কোন সিদ্ধান্ত সভায় বিভাগের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নাই যাতে যাকীয়াহ্ তাসনীম কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফল অশুদ্ধ বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে খাতা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে । কিন্তু উভয়েই কোন কথা শুনতে নারাজ’- উল্লেখ করেন কুদসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহ্-এ-নুর কুদসী ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে উপাচার্যের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নিবেন’।
অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘ম্যাম আমার নামে কেন অভিযোগ করলেন আমি বুঝলাম না। ওনার সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। পারিবারিক সম্পর্কের মত ৷ আমি এ বিষয়ে ওনার সাথে কথা বলবো।’
চস/আজহার