spot_img

২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শনিবার
১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

ঈদুল আজহা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

ঈদুল আজহা মানেই ত্যাগের মাধ্যমে সুখী হওয়া। এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম একটি বড় উৎসব। এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় শৈশবের স্মৃতি, মনে করিয়ে দেয় পরিবারের সঙ্গে কাটানো দারুণ কিছু মুহূর্ত। কোরবানির পশুর সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে আবেগময় অনেক অনুভূতি। সেসঙ্গে এখনকার সময়ে এই ঈদ কতটা উপভোগ করেছি আমরা? আগের ঈদের সঙ্গে এখনকার ঈদের পার্থক্য কেমন? এসব বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাদের ভাবনা। সেসব তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম সময়ের প্রতিবেদক আজহার মাহমুদ

ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সকলের মাঝে

আনন্দ, সৌন্দর্য ও ত্যাগের মহিমা নিয়ে প্রতিবছর ফিরে আসে ঈদুল আজহা। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের নামাজ দেখতে যাওয়া, ঈদের নামাজ শেষে গরু জবাইয়ের জন্য অপেক্ষা করা এইসব যেন এখন স্মৃতির পাতায় মোড়ানো। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। তবে ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহা সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনে না। কিছু মানুষের জীবনে নিয়ে আসে দুঃখ-বেদনা আর কষ্ট। আমাদের উচিত নিজেদের ঈদ আনন্দ সেই সব মানুষের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া। তেমনি কুরবানির মাংস গরীব-দুঃখী আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মাঝে ভাগাভাগি করে নেওয়া। এতে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় তমনি আত্মতৃপ্তিও পাওয়া যায়। কুরবানি আমাদের জন্য ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে আসে। আর সেই ত্যাগের মাঝেই প্রকৃত আনন্দ লুকায়িত। সুন্দর একটা সমাজ গড়তে হলে আমাদের আগে ধনী দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্য ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এতে করে শুধু ঈদের দিন নয়, প্রতিটি দিনই হবে আমাদের জন্য আনন্দের।

উম্মে রুকাইয়া দিনা

শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।

হারানো ঈদের খোঁজে

ঈদুল আজহা আমার কাছে শুধু একটি উৎসব নয়, বরং শৈশবের গন্ধমাখা দিনগুলোর স্মৃতি। বাবার আঙুল ধরে গরুর হাটে যাওয়া, কাঁচা মাটির গন্ধ, পশুর করুণ চোখের ভাষা, সবকিছু আজও বুকের গভীরে দোলা দেয়। কিন্তু সেই দিনগুলো যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। নাগরিক ব্যস্ততা আমাদের ঈদকে শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দিয়েছে। এবারের ঈদে চাই, মানুষ ফিরে যাক সেই সহজ-স্নিগ্ধ শিকড়ে, যেখানে আছে সম্প্রীতি, মায়া আর বন্ধন। ঈদ হোক ভালোবাসার, সাম্যের, মানবতার প্রতিচ্ছবি।

মোহাম্মদ নুর হোসেন নয়ন

শিক্ষার্থী, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রংপুর।

ত্যাগ সম্প্রীতিতে সম্মুজ্জ্বল থাকুক ঈদুল আজহা

ত্যাগের মহিমায় সম্মুজ্জ্বল পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় পশুকে উৎসর্গ করার শিক্ষা কি আমরা উপলব্ধি করতে পারি নাকি লোক দেখানো রীতি-রেওয়াজ, আত্মপ্রচারে আমরা আসল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। ঈদ পালনের আনন্দঘন মূহূর্তগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। ঈদের দিন শহর থেকে গ্রামে গিয়ে সবাই মিলে সব কাজে অংশ নেওয়ার প্রবণতা কমছে, কোরবানি পশুর মাংসের সুষ্ঠু বন্টনে মানসিকতাও পরিবর্তিত। অসহায়-গরিবের ঘরে এক টুকরো মাংস না পৌঁছিয়ে ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ ও ভোগে ব্যস্ত থাকে অনেকেই। সম্প্রীতিতেও দারুণ ভাটা পড়েছে। তাই ঈদুল আজহার তাৎপর্য, গুরুত্ব এবং মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের আরো অনেক সচেতনতা প্রয়োজন।

নুসরাত জাহান জেরিন

শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ।

কুরবানি হোক সম্মান ও সহমর্মিতার প্রতীক

কুরবানি শুধু পশু জবাইয়ের নাম নয়, এটি আত্মত্যাগ, তাকওয়া ও আল্লাহভীতির প্রতীক। কিন্তু আজকাল কুরবানির গোশত বিতরণের সময় গরিবদের ভিড়, ধাক্কাধাক্কি ও অপমানজনক পরিস্থিতি ইবাদতের সৌন্দর্য নষ্ট করে। কুরবানিদাতাদের উচিত, বিনয়ের সঙ্গে গরিবদের বাড়িতে গিয়ে গোশত পৌঁছে দেওয়া। এতে সম্মান বজায় থাকবে, ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়বে এবং ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। কুরবানি, জাকাত ও ফিতরার মতো ইবাদত যেন কখনো ভিক্ষাবৃত্তির রূপ না নেয়। সমাজভিত্তিক তালিকা তৈরি করে, সম্মানের সঙ্গে বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়াই ইসলামি আদর্শের পথে উত্তম পদক্ষেপ। আসুন, কুরবানির মাধ্যমে আমরা সৌহার্দ্য, শ্রদ্ধা ও মানবিক মূল্যবোধকে আরো সুদৃঢ় করি।

মোহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।

ফিরে আসুক শেকড়ের ঈদ

ঈদুল আজহা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি আমাদের সংস্কৃতি, আবেগ আর শেকড়ের সাথে জড়িয়ে থাকা এক অপার আনন্দের নাম। শৈশবে ঈদের আগে বাড়িতে গরু আসলেই ভাইবোনেরা মিলে নাম রাখতাম। গরুটিকে ঘিরে তৈরি হতো ভালোবাসা, স্নেহ। বিদায়ের দিন মনটা খারাপ হয়ে যেত। ঈদের সকালে উঠেই গোসল, নতুন জামা, পশুর সঙ্গে খেলা, আর বাবার পাশে দাঁড়িয়ে কোরবানির প্রস্তুতি দেখা, সব মিলিয়ে ছিল নির্ভেজাল আনন্দ। এখন সময় বদলে গেছে। প্রযুক্তি বাড়িয়েছে দুরত্ব, ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছে আনন্দ। আগে ঈদের আগেই বাড়ি যেতাম, আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটাতাম। এখন অনেকেই ঈদে বাড়ি ফিরতে পারে না। তবু আশায় থাকি ফিরে আসুক সেই স্নিগ্ধ, সহজ, ভালোবাসায় মোড়া ঈদ।

জোহরা রোজি

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ।

হৃদয়ে জড়ানো ঈদুল আজহা

ঈদুল আজহার আগমনী বার্তা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হৃদয়ে ভিন্ন এক আনন্দ অনুভূত হতে থাকে। বিশেষ করে শৈশবে এই অনুভূতিটা আরো বেশি ফোটে উঠতো। পশুর হাটে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা, ঈদের কতদিন বাকি আছে তা বারবার খোঁজ নেওয়া আর পশু কেনার পর সারাদিন সেটির দেখাশোনা করাই ছিল শৈশবে ঈদুল আজহা উদযাপনের এক ভিন্ন আনন্দ। সময় আর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সেই আনন্দের রূপটাও পরিবর্তিত হতে শুরু করে, যে বিষয়গুলো শুধুই শখ বা আনন্দের ছিল সেগুলো একটা সময় দায়িত্বে পরিবর্তিত হতে থাকে। দিন শেষে আত্নীয়স্বজন ও সমাজের সবার সব অভিমান ভুলে ঈদের আনন্দটা ভাগ করে নেওয়াতেই খোঁজে পাই ঈদ আনন্দের পূর্ণতা।

ইমরান মাহমুদ

শিক্ষার্থী, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

ঈদুল আজহা: ত্যাগের শিক্ষা ও সাম্যের বার্তা

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি হলো ঈদুল আজহা। এই ঈদের উদ্দেশ্য ত্যাগের মহিমা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। কোরবানি মানে শুধু পশু জবাই নয়; বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বাস্তব প্রকাশ, আত্মিক শুদ্ধি ও সহানুভূতি। অথচ বর্তমান সময়ে কোরবানিকে কেন্দ্র করে চলে নানা আত্মপ্রদর্শন। আমরা যতই সভ্য ও উন্নত হচ্ছি ততই যেন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি। ব্যস্ত শহরের কোলাহলে হারিয়ে যাচ্ছে কোরবানির মাহাত্ম্য। আজ পরিণত বয়সে স্মৃতিচারণ করি শৈশবের স্বর্ণোজ্জ্বল দিনগুলোর কথা। এখন ঈদের খুশি অনেকটাই ভারি, দায়িত্বে ঢাকা। এই ঈদে চাওয়া পরিবারের হাসি, সমাজে সাম্য, আর দেশের জন্য শান্তি। আমার কাছে ঈদ শুধু উৎসব নয়, ভালো থাকার সবচেয়ে স্নিগ্ধ উপলক্ষ।

তানজিনা আক্তার চৈতি

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss