চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদেরমধ্যে পৃথকভাবে ৮ জনকে দুই বছর, ২ জনকে দেড় বছর এবং ২১ জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) কলেজের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও তা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী শনিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে পুনরায় সকল পরীক্ষা ক্লাস শুরু করা হবে। একইসঙ্গে সকল ছাত্রাবাসের সিট বাতিলের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। তবে ক্লাস শুরু হলেও সহসা হলগুলো খোলা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল সভা চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তারের সভাপতিত্বে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চলা এ সভায় সকল বিভাগের প্রধানরা এতে অংশ নেন।
সভা শেষে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল সভা সমাবেশ রাজনৈতিক কর্মকা-ের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। কেউ সিদ্ধান্ত পরপন্থী কাজে যুক্ত থাকলেও তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সকল ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীর পূর্বের সিট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। হোস্টেল সিটের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী হোস্টেল কমিটির বরাবরে পুনরায় আবেদন পত্র জমা দিয়ে নতুন করে সিট বরাদ্দ গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে বিকেলে সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় শিক্ষার্থীদের সংঘাতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বারবার আলোচনার পরও বিভিন্ন প্রতিপক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার তারা সংঘর্ষে জড়ায় এবং গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি এখনো শান্ত নয়, যেকোন সময় বড় ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রতিনিয়ত অবহিত করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোসহ কলেজের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অদ্যকার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৬টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কারা এবং কেন বহিষ্কার : সিদ্ধান্তে বলা হয় গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর সংঘাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা ও গত দুই বছরের বিভিন্ন ঘটনার সাথে একাধিকবার (পূর্বের ২টি তদন্ত রিপোর্ট মোতাবেক) জড়িত থাকায় এইচ এম আসহাব উদ্দিন (৬২তম ব্যাচ), অভিজিৎ দাশ (৬০ তম ব্যাচ), সাদ মোহাম্মদ গালিব (৬২ তম ব্যাচ), সাকিবুল ইসলাম হৃদয় (৩০ তম ব্যাচ), সৌরভ ব্যাপারি (৬২ তম ব্যাচ), জাহেদুল ইসলাম জিশান (৩১ তম ব্যাচ) ইমতিয়াজ আলম (৩০ তম ব্যাচ) ও মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহকে (৬১ তম ব্যাচ) দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এছাড়া গত দুই বছরে বিভিন্ন ঘটনার সাথে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট থেকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকা-ের সাথে সরাসরি জড়িত ও ছাত্র সংসদের রুম ভাংচুরের ঘটনায় রিয়াজুল ইসলাম জয় (৫৯ তম ব্যাচ) ও অভিজিৎ দাস (৬০ তম ব্যাচ) কে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
গত ২৯ ও ৩০ নভেম্বরের ঘটনার সাথে জড়িত ও বিভিন্ন শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকা-ের সাথে জড়িত থাকায় সাজু দাশ (৬২ তম ব্যাচ), রকিব উদ্দিন আহমেদ সিয়াম (৬২ তম ব্যাচ), জাকির হোসেন সায়েম (৬২ তম ব্যাচ), জুলকাফল মোহাম্মদ শোয়েব (৬২ তম ব্যাচ), মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল (৬২ তম ব্যাচ), চমন দাশ অনয় (৬২ তম ব্যাচ), ফারহান রহমান ফাহিম (৬২ তম ব্যাচ), মাহিন আহম্মেদ (৬২ তম ব্যাচ), শেখ ইমাম হাসান (৬২ তম ব্যাচ), সৌরভ দেবনাথ (৬২ তম ব্যাচ), মো. মঈনুল হোসেন (৩১ তম ব্যাচ), মোহাম্মদ আরফাত ইসলাম (৬২ তম ব্যাচ), মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩০ তম ব্যাচ), মোহাম্মদ আনিস (৩১ তম ব্যাচ), মো. এহেসানুল করিম রুমন (৩১ তম ব্যাচ), মো. মাহতাব উদ্দিন রাফি (৩১ তম ব্যাচ), মো. শামীম (৩১ তম ব্যাচ), মো. সাব্বির (৬০ তম ব্যাচ), মইন ভূঁইয়া (৩১ তম ব্যাচ), তৌফিকুর রহমান ইয়ন (৫৮ তম ব্যাচ) ও আল আমিন ইসলামকে (৫৮ তম ব্যাচ) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এদের মধ্যে আল আমিন ইসলাম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে তিনি ইতোপূর্বে পাস করে হাসপাতালের ইন্টার ডক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এ জন্য হাসপাতালের পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়।
তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় জানানো হয়, অভিযুক্ত তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও সংগত কারণে মাথার হাড় ভেঙে যাওয়া মাহাদি আকিব এবং রক্তিম দে ও এনামুল হোসেন ওরফে সীমান্তের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে বহিষ্কৃত হওয়াদের মধ্যে ২৩ জনই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের আর বাকি ৮ জন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সূত্র: পূর্বকোণ
চস/স


