প্রতি বছর বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। বাল্যবিয়ের এই চর্চা সামাজিক ও প্রথাগতভাবে হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আরও নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৩ হাজার ৮৮৬ টি। যে কোনও সময়েরে চেয়ে এই মাত্রা বেশি।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাল্যবিয়ের অবস্থা দ্রুত বিশ্লেষণ: করোনাকাল ২০২০’ বিষয়ক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৩ হাজার ৮৮৬টি। এর মধ্যে বরগুনা জেলায় এক হাজার ৫১২, কুড়িগ্রাম এক হাজার ২২২, নীলফামারীতে এক হাজার ২২২, লক্ষ্মীপুর এক হাজার ৪১ এবং কুষ্টিয়ায় ৮৮৪টি।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে সামগ্রিকভাবে পরিবারের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক আয় কমে যাওয়া, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বৃদ্ধি।
নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর লোকেরা গৃহস্থালীর আয় কমে যাওয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধসসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। এসব চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে উচ্চ সংখ্যক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার এই সময়ে পারিবারিক সহিংসতা, স্কুল বন্ধ এবং পড়াশোনার সময় অভাব, শেখার জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধা ও ইন্টারনেটের অভাব কাজ করেছে।
করোনার এই সময় অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের প্রধান কারণ স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির চাহিদার কারণে ঘটেছে। এই সময়ে অপ্রত্যাশিত গর্ভাবস্থা ছিল পাঁচ হাজার ৮৯ জন। এর হার শতকরা ২৯ দশমিক দুই ভাগ।
কোভিড -১৯ এর এই সময় দীর্ঘকাল ঘরে বসে থাকায় স্বামীর কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক দশমিক পাঁচ শতাংশ নারী। পরিকল্পনা বা পরিষেবার অপ্রতুলতা অভাব ছিল এই সময়।
বাল্যবিয়ের কারণে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে এক দশমিক ছয় শতাংশ, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে ১২ দশমিক চার শতাংশ, মেয়েদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে ১১ শতাংশ, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আট দশমিক দুই শতাংশ, শ্বশুরবাড়িতে এবং স্বামীর ঘরে মানসিক নির্যাতন বা অবহেলার শিকার হয়েছেন চার শতাংশ নারী।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, মিশ্র পদ্ধতিতে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। প্রতিবেদন তৈরিতে ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতা করেছে।
ঢাকাসহ দেশের ২১টি জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও রয়েছে মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, রাঙ্গামাটি, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, চাটগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, জামালপুর, যশোর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, টাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট। এসব জেলার ৮৪৮টি উপজেলা বা থানার ৪০৯টি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহে পার্টনার সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।
চস/আজহার