একজন শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর হচ্ছে একজন শিক্ষক। শিক্ষক ব্যতীত একজন শিক্ষার্থী কখনো সঠিক ভাবে জ্ঞান লাভ করতে পারেনা। শিক্ষকরাই একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলে একটি দেশের সম্পদ হিসেবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের দয়িত্ব অপরিসীম। শিক্ষকরাই একটি দেশের মূল উন্নয়নের কারিগর। কারণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে অনেক জ্ঞানী ও মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সাহায্য করে। তাদের মাধ্যমে একটি দেশে শিক্ষার মান বেড়ে উঠে। একমাত্র শিক্ষকরাই পারে একটি জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষত করে গড়ে তোলতে। শিক্ষকরা বলা যায় একটা জাতির মূল। কারণ তাদের হাতে রয়েছে একটি জাতির সঠিক শিক্ষার ভার। আজ আমাদের দেশে যত বড় বড় মন্ত্রি, পুলিশ, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক রয়েছে মনে রাখতে হবে তারাও এক সময় শিক্ষার্থী ছিলো, তাদেরও কেউ না কেউ শিক্ষক ছিলো। সেই শিক্ষক গুলোর সুপ্রচেষ্টায় আজ তারা দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করছে। তারা আজ দেশের সম্মানিত ব্যক্তি, এটা হয়তো সকলেই জানে, তবে তাদের পেছনে যে শিক্ষকের একটা অবদান রয়েছে সেটা কেউ জানতে বা জানাতে চায় না। তবে আজকাল আর সেই শিক্ষকদের দেখা যায় না। হাতে গুনে কয়েকজন পাওয়া যায়। এখনকার কিছু শিক্ষকদের কর্মকান্ড দেখলে মনে হয় তারা যেনো এসেছে শিক্ষকদের সম্মান ধুলিস্যাৎ করে দেয়ার জন্য। তারা যেনো শিক্ষক নামে দেশদ্রোহী। একজন শিক্ষক যদি টাকা দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন বিক্রি করতে পারে তখন সেই শিক্ষককে দেশদ্রোহী ব্যাতিত কি বলা যায় তা সচেতন শিক্ষার্থীদের জানা নেই। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন বিক্রি করে শুধু সেই শিক্ষার্থীকেই নষ্ট করছেনা, নষ্ট করছে একটি দেশের সম্পদকে। এধরণের কিছু শিক্ষকের কারণে বর্তমানে পুরো শিক্ষক জাতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মা বাবার পরে একজন শিক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে আপন এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হচ্ছে একজ শিক্ষক। যরা একজন শিক্ষার্থীকে শুধু শিক্ষার্থীর চোখে দেখে না, সন্তানের চোখেও দেখে। মা বাবার মতো করে তারাও শিক্ষার্থীদের স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে পাঠদান করেন। তবে এখন আর সেই শিক্ষকদের খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ এখন একজন শিক্ষক তার শিক্ষকতা পেশাকে ব্যবসা মনে করেন।আর নিজেদের মনে করেন একজন ব্যবসায়ী। তাদের কাছে এখন শিক্ষার্থী হচ্ছে ব্যবসায়ের কাস্টমার। আর তাদের পণ্য হচ্ছে শিক্ষা, যা টাকা দিয়ে কিনে নিতে হচ্ছে। টাকা দিলেই তার পণ্য অর্থাৎ শিক্ষাটা হয় ভালো মানের অন্যথায় শিক্ষাটা হয় মেয়াদহীন। যে শিক্ষার্থী টাকা দিয়ে কোচিং কিংবা প্রাইভেট পরবে তার শিক্ষা হবে ভালো মানের। এতে কোনো সন্দেহ নেয়। আর যারা ক্লাসে ক্লাস করে তারা পায় নিম্ন মানের শিক্ষা বা অল্পমানের শিক্ষা যা দিয়ে তার কিছুই হবেনা। বর্তমানে এটায় হচ্ছে কিছু শিক্ষকের নীতি। যে শিক্ষার্থীরা কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়বে তারা ছাড়া অন্য কেউ পুরো বই শেষ করতে পারে না। কারণ ক্লাসে সব শেষ করা সম্ভব না হলেও সেটা কোচিং করলে সম্ভব হয়। এটাই হচ্ছে শিক্ষকদের বর্তমান আচরণ। ক্লাসে লক্ষ্য থাকে পাশ করানোর আর কোচিং কিংবা প্রাইভেটে লক্ষ্য থাকে গোল্ডেন পাওয়ানোর। যে শিক্ষকের কাছে টাকা দিয়ে কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়তে পারবে সে শিক্ষকের কাছে ঐ শিক্ষার্থী ভালো এবং মেধাবী। আজকাল যে শিক্ষকের বিষয় তার কাছে প্রাইভেট বা কোচিং করলেই পাশ করা যায়। কারণ শিক্ষার্থীটাকে যদি ফেল করিয়ে দেয় কখন আর সে পড়তে আসবে না, আর পড়তে না আসলে শিক্ষকের টাকা আসবে না। আগে শিক্ষকদের মূল লক্ষ্য ছিলো শিক্ষর্থীদের সঠিক ভা্বে শিক্ষা দেয়া, আর এখন মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা। টাকা পেলে তখন কোনো সমস্য থাকে না অন্যথায় একজন শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় হাজার ভোগান্তির মধ্যে। যে শিক্ষার্থী গরিব, যার ঘরে ঠিক মতো খেতে পারে না সে কীভাবে প্রাইভেট পড়বে বা টাকা দিবে। আজকাল তো টাকা ছাড়া কোনো প্রাইভেট বা কোচিং নেই। আর সেই গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফেলে দিচ্ছে পিছনের দিকে। আর কোচিং বা প্রাইভেটের নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে পরিমান টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় তা বিশ্বের কোনো শিক্ষাক্ষেত্রে আছে বলে মনে হয় না। ভর্তি পরিক্ষা জালিয়াতি, প্রশ্ন ফাস, পরিক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়ন না করা, এবং কোচিং বানিজ্য এসব কিছুর মূলে রয়েছে কিছু শিক্ষক, যারা শিক্ষক নামধারী দেশের শত্র্।ু এসব ভর্তি পরিক্ষা জালিয়াতির মাধ্যমে নষ্ট হচ্ছে হ্জারো শিক্ষার্থদের জীবন। নষ্ট হয় তাদের সাজানো গোছানো বুকের মাঝে লালিত সপ্ন। বিফলে যায় সারাজীবনের সব পরিশ্রম। এর জন্য দয়ী কে? এধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে কিছু কিছু শিক্ষক নষ্ট করছে দেশের সম্পদ এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষকদের যদি এতোই টাকার প্রয়োজন হয় তবে তারা সেটা সরকারের কাছ থেকে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে আদায় করতো, প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ও পাশে পেতো। কিন্তু তারা সেটা না করে শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট করার কথা তো শিক্ষকদের নয়, তারা তো শিক্ষার্থীদের জীবন সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য কাজ করছে। তবে কেনো এমন হচ্ছে? যেখানে প্রশ্ন ফসের মতো জঘন্য ও ঘৃণ্য অপরাধে শিক্ষকের মতো কতিপয় ব্যক্তি থাকে সেখানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন আর কতটুকু হবে সেটা সাধারণ মানুষও ভালো ভাবে রপ্ত করতে পারে। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের যে ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে তাতে কোনো শিক্ষকের এই ধরনের ব্যবসা বা জঘন্য অপরাধ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না সচেতন মহল। শিক্ষকের কাজ হচ্ছে ক্লাসে ঠিক মতো পাঠদান করা। কিন্তু তারা পাঠদান করেন কোচিং কিংবা প্রাইভেটে। তাই কোচিং কিংবা প্রাইভেট এখন শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে এক অপরিহার্য বিষয়। একজন শিক্ষার্থী যদি ক্লাসে না আসে বা ক্লাস না করে তবে সেটা হয় শিক্ষার্থীর অপরাধ এবং তার জীবন নষ্ট করছে সে নিজে, কিন্তু যখন শিক্ষার্থী ক্লাসে এসে শিক্ষা পায় না তখন সে শিক্ষার্থীর জীবন কে নষ্ট করছে তার উত্তর কে দিবে? শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের ধোকা দেয় তবে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে। একজন শিক্ষার্থী যদি কোনো প্রকার অন্যায় করে তার শাস্তি কিংবা নিয়ন্ত্রন করার জন্য শিক্ষক রয়েছে। তবে তারাই যদি অনিয়ন্ত্রন ভাবে চলে তবে তাদের কারা নিয়ন্ত্রনে আনবে সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। একটি গাছের যদি গোড়া ঠিক না থাকে, তবে সে গাছ থেকে আপনি কি ধরনের ফল আশা করতে পারবেন। তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়া যদি ঠিক না থাকে তবে তার থেকেও ফলন আশা করা সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন প্রসাশন থেকে শুরো করে শিক্ষামন্ত্রি এমনকি মাননীয় প্রধান মন্ত্রির সুনজর এবং কঠোর অবস্থান। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্টানে থাকা চায় নিয়মিত মনিটরিং। থাকতে হবে শ্রেণীকক্ষে সি সি ক্যামরা, যাতে ক্লাসে কি হয় না হয় তা যেনো উপরস্থ কর্মকর্তারা দেখে। মাসে কমপক্ষে একবার যে কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভিজিট করতে হবে, পরিদর্শন করতে হবে ক্লাস, দেখতে হবে শিক্ষার্থীদের কি পড়ানো হয়। সত্যি বলতে এগুলো বছরে একবার ও হয় না। তাই কোনো চাপ থাকেনা শিক্ষকদের। ক্লাস করালে করাবে না করালে নাই এই মনোভাব নিয়ে থাকতে পারে। সে জন্য আজকের এই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন অগ্রসর হতে পারছে না। সরকার পদক্ষেপ নিলে হবে না সেটা বাস্তবায়ন করাটাও সরকারের দায়িত্ব। শিক্ষা খাতের এই সমস্যা সরকারকে তোলে ধরতে হবে। সরকারের দায়িত্ব এই সমস্যা দ্রুত সমধান করা। প্রতিদিন সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হচ্ছে, তবে কীভাবে হচ্ছে তা আমরা কয়জনে জানি। শিক্ষামন্ত্রনালয় থেকে তো সব প্রতিষ্টান দেখা সম্ভব না। তবে প্রতিটা জেলায় জেলায় যে সকল উচ্ছ কর্মকর্তা রয়েছে তাদের তো মনিটরিং করা সম্ভব। প্রয়োজনে প্রতিটি উপজেলায় একটি একটি করে দল কাজ করবে। তবেই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। নিয়মিত মনিটরিং এবং খোঁজ খবর রাখলে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ঠেকাতে কেউ পারবেনা। শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকরা কি ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছে তা খবর নেওয়া এবং সরজমিনে দেখা। তবেই শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালনে আরো দৃড় হবে। কোনো শিক্ষার্থীদের মনে যেনো শিক্ষকদের প্রতি ঘৃণা না থাকে সেভাবেই শিক্ষকদের এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা যেনো শিক্ষক আজীবন বেঁচে থাকে, সেভাবেই শিক্ষকদের চলতে হবে। শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নয় সম্মান আর ভালোবাসাই যেনো পেতে চাই সকল শিক্ষক। এ নীতি নিয়েই যেনো গড়ে ওঠে আগামী দিনের শিক্ষকরা।