সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও পেঁয়াজের দাম লাগামহীন। সেঞ্চুরি করেও যেন থামছে না। দামের এ উর্ধ্বমুখিতায় চরম বিপাকে ক্রেতা সাধারণ। এবার পেঁয়াজের দরের লাগাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা বিক্রি করার জন্য দর নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত দামের বেশি মূল্যে বিক্রির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব আজ বুধবার (২ অক্টোবর) টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শন করবেন। তাঁর সঙ্গে কক্সবাজারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও থাকবেন। টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা কত দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন সেটা নিয়েও কথা হবে। একই সাথে মিয়ানমার থেকে আরও কিভাবে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে কথা বলবেন তিনি। কারণ পেঁয়াজের জন্য ভারতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্য দেশ থেকে আমদানী করার দিকে সরকারের দ্রুত নজর দিতে হবে।
জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে গত কয়েকদিনে পেঁয়াজ আমদানী বেড়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর জুড়ে যেখানে ৩ হাজার ৫৭৩ টন পেঁয়াজ আমদানী হয়েছিল সেখানে গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) একদিনেই আমদানী হয়েছে ৫৬৯ মেট্টিক টন। ভারতের রপ্তানী বন্ধ ঘোষণার পর মিয়ানমার থেকে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা ‘আশা’ দেখা দিচ্ছে বাজারে। এই আমদানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচাবাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক দিনের ব্যবধানেই পণ্যটির দাম এক লাফে কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। শহরের বড় বাজার, কালুরদোকান বাজার, বাহারছড়া বাজারসহ শহরের সবকটি দোকান এবং পাইকারী দোকান থেকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় কিনেছেন ক্রেতারা। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে জেলা বাজার মনিটরিং কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সবার মতামতের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন। আর পাইকারী মূল্য নির্ধারণ করেন ৬৫ টাকা। নির্ধারিত এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করার জন্য বুধবার (২ অক্টোবর) থেকে মাঠে থাকবে মোবাইল কোর্ট।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ নিয়ে আসে চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রাম থেকে পেঁয়াজ আনার ক্ষেত্রে অনেক খরচ পড়ে। কিন্তু মিয়ানমার থেকে আমদানী করা পেঁয়াজ কক্সবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি টেকনাফ থেকে সংগ্রহ করতে পারলে দাম আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, প্রশাসকের নির্ধারণ করা দর বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। আজ বুধবার (২ অক্টোবর) থেকে প্রত্যেকটি জায়গায় পেঁয়াজের নির্ধারিত দর সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য মাইকিং করা হবে। যাতে কোন অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতাদের ঠকাতে না পারে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে ইতোমধ্যে আমদানি বাড়ানো হয়েছে। চীন এবং সিঙ্গাপুর থেকেও আমদানির প্রক্রিয়ায় আছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে সরাসরি সংগ্রহ করলে এখানে ঘাটতি অনেকটা কমে যাবে। ব্যবসায়ীরাও নির্ধারিত দামে কাঁচাবাজারে সরবরাহ করতে পারবেন। এরফলে ধীরে ধীরে পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
চস/আজহার