spot_img

১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অনলাইন ডেস্ক

সর্বশেষ

এলডিসি-চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ম্যান্ডেট এই সরকারের নেই: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জনগণের ভোটে নির্বাচিত ম্যান্ডেট ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নেওয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—যার মাধ্যমে চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার কাছে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল – বিদেশি অপারেটরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া আগামী নভেম্বরের নির্ধারিত সময়েই এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে।

এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তারেক রহমান মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এসব নিয়ে নিজের মতামত জানান। সেখানে তিনি দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তারেক রহমান তার স্ট্যাটাসের শুরুতেই গাজীপুরের একজন ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক এবং নারায়ণগঞ্জের একজন সদ্য গ্র্যাজুয়েট তরুণীর উদাহরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শুল্ক সুবিধা উঠে যাওয়ার ফলে কীভাবে একজন ব্যবসায়ী বা সাধারণ শ্রমিকের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়ে, তা খবরের শিরোনাম হয় না; বরং এগুলো সাধারণ ঘরের ভেতরে ঘটে যাওয়া ‘নীরব সংকট’।

তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলো কখনোই এই সিদ্ধান্তের [এলডিসি উত্তরণ] পক্ষে ভোট দেয়নি। তাদের কাছে জানতেও চাওয়া হয়নি, এমনকি তাদের সামনে প্রকৃত সংখ্যা বা তথ্যও তুলে ধরা হয়নি।’

তারেক বলেন, বিএনপি আগেও বলেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা মেনে এগিয়ে যাওয়া এবং সময় বাড়ানোর সুযোগ না রাখা সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটি এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে, যাদের কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। অথচ তারা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা আগামী কয়েক দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পেছানো ‘অসম্ভব’ বা এটি চাইলে ‘অপমান’ হবে—এমন ধারণাকে ভুল বলে অভিহিত করেছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি গভীরভাবে তাকাই, ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। অ্যাঙ্গোলা এবং সামোয়ার মতো দেশগুলোর গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা পরিবর্তন করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মেই অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলার ক্ষেত্রে নমনীয়তার সুযোগ রয়েছে।’

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কেন আমরা ভান করছি যে আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই? কেন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে সংকুচিত করছি?’

তারেক রহমান মনে করেন, প্রকাশ্যে সময় বাড়ানোর সুযোগ নাকচ করে দিয়ে বাংলাদেশ নিজের দরকষাকষির ক্ষমতা দুর্বল করে ফেলছে। আলোচনার টেবিলে বসার আগেই নিজেদের হাত উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।

সরকারি নথিপত্রের বরাত দিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ব্যবসায়ী মহল এখনই ব্যাংকিং খাতে চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং রপ্তানি কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছে।

তিনি স্পষ্ট করেন, এটি এলডিসি উত্তরণের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার অধিকার অর্জন করেছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘উত্তরণের “অধিকার” থাকা আর উত্তরণের জন্য “প্রস্তুত” থাকা এক বিষয় নয়।’

তার মতে, প্রকৃত জাতীয় শক্তি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দ্বিধাহীনতা নয়; বরং এর মূল্য অপরিবর্তনীয় হওয়ার আগেই কঠিন প্রশ্ন করার শৃঙ্খলা বজায় রাখা।

এলডিসি উত্তরণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার। এখানে যা ঘটে, তা কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতার চেয়েও লাখো মানুষের জীবনে বেশি প্রভাব ফেলে।

তিনি বলেন, ‘বন্দর নিয়ে সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো সাধারণ কোনো বিষয় নয়। এটি জাতীয় সম্পদের ওপর কৌশলগত প্রতিশ্রুতি, যা এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার এগিয়ে নিচ্ছে, যাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দায়বদ্ধ করার মতো কোনো গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।’

তিনি অভিযোগ করেন, এলডিসি উত্তরণের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রেও কৌশলগত বিকল্পগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং জনমতকে ‘অসুবিধা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গতি এবং ‘অনিবার্যতা’র দোহাই দিয়ে যৌক্তিক উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেন, তার এই বক্তব্য কোনো ব্যক্তিবিশেষের সমালোচনা নয়। বরং এটি প্রতিষ্ঠান রক্ষা এবং সেই নীতির পক্ষে কথা বলা—যেখানে দশকের পর দশক প্রভাব ফেলা সিদ্ধান্তগুলো এমন সরকারের নেওয়া উচিত, যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।

তিনি বলেন, ‘কেউ বলছে না যে আমাদের এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে বের হওয়া উচিত নয় বা বন্দরের সংস্কার করা উচিত নয়। যুক্তিটি খুবই সরল এবং মৌলিক: একটি জাতির ভবিষ্যৎ এমন কোনো সরকারের মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়, যাকে জাতি নির্বাচিত করেনি।’

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে কখনোই নিষ্ক্রিয় ছিল না। তারা মর্যাদা, কণ্ঠস্বর এবং পছন্দের অধিকারের ওপর বিশ্বাস রাখে বলেই ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাদের চাওয়া খুবই সাধারণ—তাদের কথা শোনা হোক, তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক এবং তাদের সম্মান জানানো হোক।

স্ট্যাটাসের শেষে তিনি বলেন, ‘এই দেশের ভবিষ্যৎ তাদের মাধ্যমেই নির্ধারিত হতে হবে, যারা এই দেশে বসবাস করে এবং বিশ্বাস করে—সবার আগে বাংলাদেশ।’

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss