বেলজিয়াম-ক্রোয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে, সেখানে স্পেনের দর্প চূর্ণ করে, চ্যাম্পিয়নশিপের স্বপ্ন নিয়ে কাতার আসা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছিল দ্য অ্যাটলাস লায়ন খ্যাত মরক্কো। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে এসে কিলিয়ান এমবাপ্পে-গ্রিজম্যানদের সামনে পড়েই থেমে গেছে তাদের গর্জন।
আল বায়াত স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবারর (১৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের হয়ে গোল দুটি করেন থিও হার্নান্দেজ ও কোলো মুয়ানি। ১৮ ডিসেম্বর আইকনিক লুসাইলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ট্রফি ধরে রাখার মিশনে লড়বে উড়তে থাকা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
১৯৫৮-১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর এই প্রথম কোনো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল শিরোপা জয়ের পথে। এ ছাড়া ১৯৯৮-২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর কোনো দল এই প্রথম টানা দুবার ফাইনাল খেলছে। ৯৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হারের পর ২০০২ বিশ্বকাপে জার্মানিকে হারিয়ে সবশেষ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল।
এই বিশ্বকাপে এটিই মরক্কোর প্রথম হার। আগের ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৪টিতে জয় আর ১টিতে ড্র করেছে। এর আগে তারা সবশেষ হেরেছিল ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে, পর্তুগালের বিপক্ষে। নিজেরা আক্রমণ করলেও আসলে ফ্রান্সের আক্রমণের সঙ্গে পেরে ওঠেননি তারা।
ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডান দিকে ভারানে বল দেন গ্রিজম্যানকে। ডি বক্সে থাকা এমবাপ্পের দিকে বল বাড়িয়ে দেন গ্রিজম্যান। এমবাপ্পে শট নিলেও মরক্কোর ডিফেন্সের বাধায় ফিরে আসে। তবে লাভ হয়নি, বাঁ দিকে থাকা হার্নান্দেজ দারুণ শটে বল জড়িয়ে দেন জালে। কিছুই করার ছিল না মরক্কোর গোলরক্ষক বুনোর।
এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স। দুই দলই বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে। ফ্রান্স এগিয়ে থাকলেও মরক্কো বেশ কয়েকবার পরীক্ষা নিয়েছে ডিফেন্সের। মরক্কোর কর্নার থেকে সুযোগ তৈরি হয় ৪৪ মিনিটে, ডি বক্সের বাম কোনায় থাকা ইয়ামিক দারুণ এক বাইসাইকেল কিক নেন। দুর্দান্ত সেভ করেন লরিস। অল্পের জন্য বেঁচে যায় ফ্রান্স। এ ছাড়া জিরুদেরও একটি শট বারে লেগে ফিরে আসে।
পরের গোলের জন্য ফ্রান্সকে অপেক্ষা করতে ৭৪ মিনিট। শেষ দিকে বদলি নামা মুয়ানির চমক। ৭৯ মিনিটে জিরুদের পরিবর্তে মাঠে নামেন মুয়ানি। নামার পর ৪৪ সেকেন্ডে না যেতেই তার গোলে,ব্যবধান বাড়ালো ফ্রান্স। ডি বক্সের ডান দিকে বল পেয়েই প্রথম স্পর্শেই গোল করেন মুয়ানি। এটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোলটি দ্বিতীয় দ্রুততম। এর আগে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে একটি গোল হয়েছিল মাত্র ২৬ সেকেন্ডে।
শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই শেষ হাসি হাসে ফ্রান্স। মরক্কো হারলেও তারা লড়েছে দারুণভাবে। ফিনিশিংয়ে অভাবে শুধু গোলটা হয়নি। ম্যাচে ফরাসিরা আক্রমণ করেছে ১৪টি, যার মধ্যে দুটি অনটার্গেট শট, সেই দুটিই গোল। অন্যদিকে মরক্কো ১৩টি আক্রমণ করে, ২টি অনটার্গেট শটই ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে বিধ্বস্ত করে ট্রফি জিতেছিল ফ্রান্স। ৪ বছর পর তাদের সামনে আবার ট্রফি জয়ের সুযোগ। মেসির আর্জেন্টিনাকে কি থামাতে পারবেন তারা?
চস/স