spot_img

২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

রাশিয়ায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামির আঘাত

রাশিয়ার দূর প্রাচ্যের কামচাটকা উপকূলে ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর প্রায় চার মিটার উচ্চতার সুনামির প্রথম ঢেউ উত্তর জাপানের হোক্কাইডোতে আঘাত হেনেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা; অনেক এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাটস্কি শহর থেকে ১১৯ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৯.৩ কিলোমিটার গভীরে।

শুরুতে মাত্রা ৮ বলা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৮.৮ করা হয়। এরপর ৬.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।

কামচাটকার গভর্নর ভ্লাদিমির সলোদভ টেলিগ্রামে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আজকের ভূমিকম্প ছিল ভয়াবহ, গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।”

রাশিয়ার দুর্গম ওই অঞ্চলে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আঞ্চলিক জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সের্গেই লেবেদেভ জানিয়েছেন, কামচাটকার কিছু অংশে ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার সুনামি রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকূল থেকে দূরে সরে যেতে বলা হয়েছে।

সুনামির প্রথম ঢেউ আঘাত হানে জাপানের হোক্কাইডো উপকূলে। সেই ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি)। হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্দরনগরী নেমুরোয় পৌঁছায় সেই ঢেউ।

উত্তর হোক্কাইডো দ্বীপের কারখানা কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমুদ্রতীরবর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে টিবিএস টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে।

জাপানি কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সতর্ক করেছে, পরবর্তী ঢেউগুলো আরও বড় হতে পারে।

২০১১ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও সুনামির ক্ষতচিহ্ন এখনও বহন করে চলা জাপানের পূর্ব উপকূলজুড়ে সতর্কতা জারি করে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন এনএইচকের উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়: “দয়া করে দ্রুত সরে যান। সম্ভব হলে, উঁচু জায়গায় যান এবং উপকূল থেকে দূরে থাকুন।”

মার্কিন কর্তৃপক্ষও সুনামি সতর্কতা জারি করে বলেছে, তিন ঘণ্টার মধ্যে এই ঢেউ আঘাত হানতে পারে।

রাশিয়া ও একুয়েডরের কিছু এলাকায় ৩ মিটারের বেশি উচ্চতার ঢেউ এবং জাপান, হাওয়াই, চিলি ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জে ১ থেকে ৩ মিটার উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের অন্য অনেক উপকূলীয় এলাকাতেও ছোট ঢেউ পৌঁছাতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল।

হাওয়াই কর্তৃপক্ষও উপকূলীয় কিছু অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হোনুলুলুর জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ এক এক্স পোস্টে লিখেছে, “দ্রুত ব্যবস্থা নিন! ধ্বংসাত্মক সুনামি ঢেউ আসতে পারে।”

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে উপকূলের নিচু এলাকায় বসবাসকারীদের উঁচু এলাকায় কিংবা অন্তত ভবনের চতুর্থ তলায় ওঠার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে আঞ্চলিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ওলেগ মেলনিকভ বলেন, ভূমিকম্পের পর আহত কয়েকজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

“দুঃখজনকভাবে কয়েকজন আহত হয়েছেন। কেউ দৌড়াতে গিয়ে পড়ে গেছেন, একজন জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছেন। নতুন এয়ারপোর্ট টার্মিনালে এক নারীও আহত হয়েছেন।

“তবে সবাই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন, গুরুতর কোনো আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।”

রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স জানায়, ১৯৫২ সালের পর এটাই অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানায়, সেভেরো-কুরিলস্ক শহরের বন্দর এবং একটি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কামচাটকা অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক সেবার পরিচালক দানিলা চেব্রোভ বলেছে, “আফটারশক এখনও চলছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

কামচাটকা এবং রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল প্রশান্ত মহাসাগরের ভূমিকম্প-প্রবণ ‘রিং অব ফায়ার’-এ অবস্থিত, যেখানে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss