আগামীকাল ৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। এদিন রাসূল (সা.) এই পৃথিবীতে রহমত হিসেবে আগমন করেছেন। এটা শুধু মুসলমান নয় বরং বিশ্ববাসী ও সকল মাখলুকাতের জন্য আনন্দের, সৌভাগ্যের। মহানবীর আগমনকে কেন্দ্র করে রবের দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। এই মিলাদুন্নবী পৃথিবীর দেশে দেশে, শহরে শহরে, গ্রামে গ্রামে পালিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের মানুষ ধর্মের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল। ইসলামের নবী রাসূল (সা.)’র প্রতি ভালোবাসা তাদের মনের গভীর থেকেই বিদ্যমান। এই কারণে তারা রাসূল (সা.)’র আগমনের মাসে মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। বিশেষ করে ১২ রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর চট্টগ্রামে জশনে জুলস র্যালি, প্রিয় নবীর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা, বিভিন্ন ধরনের ইসলামী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সাল থেকে জাতীয়ভাবে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এদিনটি গুরুত্বসহকারে পালন করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মিলাদুন্নবী (সা.) ইসলামি বইমেলা, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, জাতীয় পত্রিকাসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র, মিলাদুন্নবী স্মারক প্রকাশসহ নানাবিধ আয়োজন করা হয় এ উপলক্ষে।
ভারতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হলেও বাংলাদেশের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। সেখানে প্রতিবছর ঝাঁকঝমকভাবে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। দিল্লী, লক্ষনৌ, কাশ্মির, মুম্বাইসহ বিভিন্ন শহর ও প্রদেশে ঈদ-ই মিলাদুন্নবীর মাহফিল পালিত হয়ে থাকে।
পাকিস্তানে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে রং বেরঙের আলোকসজ্জা, ইসলাম ও মহানবী (সা.)’র শিক্ষাবিষয়ক ব্যানার রাস্তাঘাটে টানানো হয়। পাশাপাশি বড় আকারে মিলাদ মাহফিলের আসর, নাতে রাসূল পাঠ, যিকর-আযকার মাহফিল, ইবাদত-বন্দেগি ও রোযা রাখার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়।
মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বসহকারে পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয়ে থাকে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত দোকানপাট সেদিন বন্ধ থাকে। মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সভা-সেমিনার, প্যানেল আলোচনা, ইসলামি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এসকল অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে যত্নসহকারে সম্প্রচার করা হয়।
শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ মালয়েশিয়াতেও ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যে পালন করা হয় ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.)। এ উপলক্ষে নেয়া হয় দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি। র্যালি, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দোআ মাহফিল ও মিলাদুন্নবী প্যারেডের আয়োজন করা হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানাবিধ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। মধ্য এশিয়ার দেশ কাজকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানেও ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়।
ঈদে লাইলাতিন নূর নামে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’র মাহফিল পালন করা হয় ইয়ামেনের পশ্চিমাঞ্চলে। কুরআন তিলাওয়াত, রাসূল (সা.)’র জীবনী আলোচনা, যিকর-আযকার, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয় দেশজুড়ে। এদিন সরকারি ছুটি থাকার কারণে বেশ ঝাঁকঝমকভাবে দিনটি উদযাপিত হয়।
মিশর, ইরাক, আরব আমিরাত, তুরস্কের মতো দেশেশও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বেশ ঝাঁকঝমকভাবে পালন করা হয়। জুলুম নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনেও বন্ধ নেই মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন। মাসজিদুল আকসা, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, নাবলুস শহরসহ গোটা ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিরা অংশ নেন মিলাদুন্নবী (সা.)’র অনুষ্ঠানে। র্যালি, হামদ-নাতসহ, তাকবীর-তাহলিলে মুখরিত হয় ফিলিস্তিনের আকাশ বাতাস।
চস/আজহার