সোমালিয়ায় জলদস্যুদের কবলে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের পরিবারে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছে খুলনা মহানগরীর ছোটবয়রা করীমনগর এলাকার বাসিন্দা ও জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলাম। তার বাড়িতেও উৎকণ্ঠায় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল ৫টার পরে মা ও স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে সবশেষ কথা হয় তৌফিকুল ইসলামের।
জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের পরিবারে রয়েছেন বাবা ইকবাল হোসেন, মা দিল আফরোজ ও স্ত্রীর নাম জোবায়দা নোমান। তার দুই সন্তান তাসফিয়া তাহসিনা (৭) ও আহমেদ রুসাফি (৫)।
ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের স্ত্রী জোবায়দা নোমান বলেন, বিকেল ৫টার দিকে কথা হয়েছিল। তিনি ফোনে বলেছেন- দোয়া করো। আমাদেরতো সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়ত আর যোগাযোগ হবে না। কী হবে কিছুই তো আসলে জানি না। এটাই শেষ কথা। এরপরে আর কথা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ইফতেখার স্যার ফোন করে পরিবার থেকে লোক পাঠাতে বলেছিলেন। আমার মেজ ভাসুর এবং আমার ভাই দুইজন চট্টগ্রাম গিয়েছেন। আমাদের দাবি একটাই সব কিছুর বিনিময়ে হলেও সে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। তার সহকর্মীরা আল্লাহর রহমতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসুক।
ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের মা দিল আফরোজ বলেন, ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। বললো আম্মা আমি ভালো আছি, চিন্তা করো না। আমি বললাম চিন্তাতো লাগেই। কী করব যে অবস্থায় তোমরা আছো, বন্দি অবস্থায়। টেনশন তো হয়।এই বলতে বলতেই আর কথা নেই। মনে হলো মোবাইলটা কেড়ে নিল। এই শেষ কথা হয়েছে আমার সঙ্গে।
উদ্বেগে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আমার ছেলেসহ ২২ জনকে বন্দি অবস্থায় রাখছে। সবাইকে যেন সরকার তাড়াতাড়ি তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে আনে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাজে মোট ২৩ জন নাবিক রয়েছেন। তারা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে তাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এর আগে নাবিকরা তাদের পরিবারের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একাধিক ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। যেখানে তারা দস্যুর কবলে পড়ার খবর দিয়ে দোয়া কামনা করেন।
জাহাজের অবস্থান শনাক্তকারী ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩২ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থের জাহাজটি বাল্ক কেরিয়ার। এটি আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওইসময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
চস/আজহার