করোনার গ্রাসে সমগ্র বিশ্ব আজ থমকে গেছে, থমকে গেছে বিশ্বায়নের চাকা, থমকে গেছে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা, থমকে গেছে মানুষে মানুষে সরাসরি যোগাযোগ। যদিও করোনার শুরু অবস্থা থেকে বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক পুরোবিশ্ব। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতার উপর আবারও নতুন করে ঝড় সুষ্টি হতে পারে এশিয়ার দেশগুলোতে। এরমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মতে শীতের এই মৌসুমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। যা সত্যি আমাদের সকলের চিন্তার বিষয়। এই বিষয়ে দেশের সকলের মতো শিক্ষার্থীরাও ভাবছে নানান কিছু। থাকতে পারে তাদের পরামর্শ, যুক্তি এবং দিক-নির্দেশনা।
তাই এ বিষেয় চারজন শিক্ষার্থীর সাঙ্গে কথা বলেছেন আজহার মাহমুদ।
সচেতনতা আপনার, নিরাপত্তা সবার
দেখতে দেখতে শীতকাল চলে এলো। শীতকালে মানুষ নানান রোগব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণও। তাই এই শীতকাল হতে পারে ভয়ানক সময়।লক্ষ লক্ষ মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। এ দূর্যোগ কাটিয়ে উঠার আগেই আবারো বেড়েই চলছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। আমাদের দেশেও দিন দিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।কারণ সময়টা যে শীতকাল।করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা এখন রয়েছে।তাই বিশেষ সচেতনতাই পারে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে।।জেল-জরিমানার ভয়ে নয় মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে কেবল সবার সুরক্ষার জন্য।গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে আর ওসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।তাই আমরা যারা কোভিড-১৯ বিষয়ে জানি তাদের উচিত হবে আমাদের প্রতিবেশীদের এ বিষয়ে অবগত করা।তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।আমাদের এই ছোট ছোট প্রচেষ্টাই এই করোনা দূর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।আসুন নিজে সচেতন হই,অন্যকে সচেতন করি।একজনের সচেতনতা অপরের নিরাপত্তা।
মোঃ ইসমাইল হাসান
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্তকতাই পারে ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে
করোনাভাইরাস শীতের সময় বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। এতে আমাদের সাধারন মানুষের সর্তক অবলম্বন করা একান্ত জরুরী। করোনাভাইরাস চাররকমের আছে-যা সাধারণ সর্দি-জ্বরের লক্ষণ সৃষ্টি করে। এটি সহজে ছড়ায় শীতের সময়। ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনাভাইরাস এবং আর এস ভি নামে আরেকটি ভাইরাস। এসবগুলোর আচরন মোটামুটি একই রকম।
তবে,লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যার মেডিসিনের ডঃ রেচেল লো বলেছেন,,” এগুলো হয়তো মৌসুমি হতে পারে,কারন অন্য কিছু ভাইরাস আছে আবহাওয়া নাকি মানুষের আচরন,কোনটার প্রভাব এখানে বেশি এখনো তা বুজার ক্ষমতা খুব সীমিত”।
তবে দেখা গেছে,মানবদেহের বাহিরের পরিবেশ যখন ঠান্ডা তখন সব ভাইরাসই অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,করোনা ভাইরাসের জন্য বিশেষ করে ৪ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিশেষ অনুকূল বলে দেখা গেছে। সূর্যের আলোয় যে অতিবেগুনী রশ্মি থাকে তা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু শীতের সময় অতিবেগুনী রশ্মির পরিমাণও কম থাকে।
শীত প্রধান দেশগুলোতে ঠান্ডার সময় লোকে ঘরের ভেতরেই বেশি থাকে। দরজা জানালা থাকে বন্ধ। বাতাস চলাচল করে কম এবং এই পরিবেশই করোনা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য সহায়ক। ব্রিটেনের একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সের এর এক পূর্বামূলক রিপোর্ট বলছে শীতের সময় ব্রিটেনের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ হাল তাতে আড়াই লাখে ও বেশি লোক মারা যাবে। এটা ঠিক যে, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের আচরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে।মানুষ ঘনঘন হাত ধুচ্ছে।মুখে মাস্ক পরছে,সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছে,বাড়িতে বসে কাজ করছে। পরিশেষে এ থেকে উত্তরনের জন্য আমাদের প্রচুর সর্তক থাকতে হবে।
স্বর্ণা রোজ
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যক্তিগত সচেতনতাই করোনা ঠেকানোর প্রাথমিক উপায়
প্রকৃতির পালাক্রমে শীত শুরু হয়েছে। এদিকে কোভিড-১৯-এ সংক্রমণ আবারও ভিন্ন রুপ ধারণ করছে। করোনায় আমরা কেউ যেন কোথাও ঝুঁকিহীন কিংবা নিরাপদ নই। শীতকালে বায়ু দূষণ ও শীতল আবহাওয়ার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ সহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব এমনিতেই বৃদ্ধি পায়। তারমধ্যে করোনার প্রকোপ দূরে ঠেলে সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে প্রয়োজন ব্যক্তিগত বাড়তি সচেতনতা ও সতর্কতা। ব্যক্তিগত সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বনের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে জনসচেতনতা। যা সুরক্ষা করবে ব্যক্তি থেকে সর্বসাধারণকে। তাই নিজ নিজ থেকে সচেতনতা,মাস্ক পরিধান ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে অন্যকে মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পাবে।
রাশেদা ইসলাম মুন্নী
অর্থনীতি বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।
অন্যকেও সচেতনতার আহ্বান করতে হবে
করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথম উৎকণ্ঠা ও ভয়ের শেষ না হতেই শীতকে ঘিরে আসছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ৷ এমনিতেই শীতে মানুষের নানা ধরনের ফ্লু সহ নিউমোনিয়া ও হাঁপানির সমস্যা প্রবল হয়৷ তার উপর করোনার সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে৷ আর বাড়বেই না বা কেন? মানুষ এখন অবাধে ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে, স্কুল-কলেজগুলো না খুললেও ঘরে বসে নেই শিক্ষার্থীরা৷ শীতের আগমনি বার্তা পেয়েই পরিবারের সাথে শীতের ঘোরাঘুরির উৎসবে সবাই মেতে উঠছে৷ এতে জনসমাগমতো বাড়বেই, বাড়বে সংক্রমণের হার৷ অপর দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ব্যাপক, এই দ্বিতীয় ঢেউ যা কেবল পশ্চিমা দেশগুলোতেই না বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পরবে বলে আশংঙ্কা করা হচ্ছে৷ এমতাবস্থায় না আছে করোনা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের সুযৌক্তিক মতামত আর না আছে ভ্যাকসিন আসার নির্ধারিত কোনো সময়৷ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউ এখনো স্তিমিত হয়নি বলে জানা যাচ্ছে তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চলছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব৷ নতুন এই করোনা ভাইরাস যেহেতু একটি সংক্রামক ব্যধি জনসমাগম বাড়লে যে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পরার হার বেড়ে যাবে তা নিশ্চিত৷ তাই শুধু সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান পেয়ে না আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতনতা বজায় রেখে অন্য কেও সচেতনতার আহ্বান করা উচিত৷ সকলের জানা উচিত, আমরা বাঁচলেই বাঁচবে বাংলাদেশ৷
লাইজু আক্তার,
শিক্ষার্থী,নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ৷