spot_img

১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বুধবার
২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি রুখতে হবে

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ড। এই উক্তি অনেক পুরাতন হলেও এখনও চলে। বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে এই উক্তি ছড়িয়ে আছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে সরকারও নানান ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাখাতের এই এতো বিনিয়োগ কি আসলে শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসে? এই প্রশ্নটি করার কারণ হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন শিক্ষার্থীদের নিকট টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তখন শিক্ষার্থীরা এক-প্রকার অসহায় হয়ে পড়ে। তাহলে এতো বিনিয়োগ আসলে যাচ্ছে কোথায়? আর্থিক ভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা অনার্সে এসেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে। পড়াশোনার পেছনে তাদের ব্যায় তখন বেড়ে যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি হতে গেলে প্রায় ১৮/২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এই টাকা কতজন শিক্ষার্থী জোগাড় করতে পারে? আর জোগাড় করতে গিয়ে কত হিমশিম খেতে হয় পরিবারের সেটাও আমাদের জানার কথা নয়।

এতটুকু পর্যন্তও ঠিক ছিলো। কিন্তু যখন সংসদ ফি, প্রবেশ পত্র ফি বলে শিক্ষার্থীদের নিকট টাকা নেওয়া হয় তখন সেটা চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। চট্টগ্রামের একটি অতি পরিচিত কলেজে এই সংসদ ফি নামক চাঁদাবাজি হয়ে আসছে নিয়মিত। ভর্তির সময় সংসদ ফি, প্রবেশ পত্র নিতে সংসদ ফি, রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে সংসদ ফি, বেতন দিতে গেলে সংসদ ফি, ফরম ফিলাপ করতে গেলে সংসদ ফি। এই সংসদ ফি নামক যন্ত্রণা কলেজে যতদিন থাকবেন ততদিন বয়ে নিয়ে যেতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের কলেজে অনার্সের পরীক্ষাগুলোর এডিমট কার্ড নিতে ৩০০ টাকা করে নেয়। অথচ অন্যান্য কলেজে সেটা ১০০ টাকা অথবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

তবে এই টাকা নেওয়ার খেলা চট্টগ্রামসহ দেশের বেশকিছু কলেজে হয়ে আসছে। এই ফি গুলোকে চাঁদাবাজিই বলে থাকেন শিক্ষার্থীরা। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এধরনের কর্মকান্ড হয়ে আসছে বছরের পর বছর। অথচ শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। পেছনে সবাই ভোগান্তির কথা বললেও এটা নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস নেই। এই সাহস না থাকার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে ভয়। তবে এইসব কর্মকাÐে শিক্ষকদেরও এক প্রকার নিরব সমর্থন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগ শিক্ষকদের কানে পৌঁছালেও শিক্ষরা যেন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ। এক্ষেতেও কিছুটা আত্মসম্মানের বিষয় আছে। কারণ এইসব চাঁদাবাজি রুখতে গিয়ে যদি শিক্ষরাও হেনস্তার শিকার হন! তাই সবাই এই বিষয়ে নিশ্চুপ।

এই সংসদ ফি নামক চাঁদা অনেকের আবার দিতে হয় না। কারণ এই সংসদে তার কথিত বড় ভাই রয়েছে। যারা এই সংসদ ফি নেয় তাদের সেসব বড় ভাই নামক নেতারা ফোন করলেই সংসদ ফি মাফ হয়ে যায়। তবে এটা সকলের ক্ষেত্রে নয়। যারা সেসব বড় ভাইদের পেছন পেছন রাজনীতি করে, ¯েøাগান দেয় শুধু তাদের জন্য।

কিন্তু যারা ¯েøাগান দিবে না, রাজনীতি করবে না, বড় ভাই বানাবে না তাদের জন্য কি এই চাঁদাবাজি চলতেই থাকবে? একদিকে সংসদের নামে চাঁদাবাজি চলছে অন্যদিকে কলেজ কর্তৃক প্রতারণাও হচ্ছে। প্রবেশপত্রের জন্য কোনো মূল্য না থাকলেও সেটা দাবি করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা দিতে বাধ্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক ফরম-পিলাপের মূল্য থাকে একটা, কলেজে চায় আরেকটা। এইযে বাড়িয়ে বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় এগুলো কি চাঁদাবাজির মতো নয় কি?

এই চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি চায় শিক্ষার্থীরা। সুন্দরভাবে, সুস্থভাবে অতিরিক্ত ফি ছাড়া পড়াশোনা করতে চায় তারা। তাদের উপর এইধরনের বাড়তি ফি চাপিয়ে দেওয়া একধরনের অপরাধ। মানসিক ভাবে এইসব শিক্ষার্থীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে প্রায় সময়। এইসব অনিয়ম নিয়ে বলতে না পারার যন্ত্রণা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের হতাশ করে দেয়। অনেক শিক্ষার্থী আবার আর্থিক ঝামেলায় পড়ে পড়াশোনা থেকেই ছিটকে যায়।

তাই শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের উচিত এসকল বিষয়ে তদারকি করা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সেল চালু করতে হবে। তাহলেই উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, অসংগতি এবং সমস্যার কথা উঠে আসবে।

লেখক : রিপোর্টার, চট্টগ্রাম সময়

 

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss