spot_img

৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

রানা প্লাজায় ধসের ৯ বছর আজ

২০১৩ সালের এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ২ হাজার ৭৬৯ জন আহত হন। রোববার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে নিহত শ্রমিকদের জন্য নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটিকে স্মরণ করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, হতাহতদের স্বজনসহ সাধারণ মানুষ।

এ সময় শ্রমিক নেতারা বলেন, আমরা কে টি এস স্পেকট্রাম, তাজরিন, স্মার্ট, রানা প্লাজা, আসওয়াদ, ট্যাম্পাকো, হাসেম ফুডস ট্র্যাজেডি আর দেখতে চাই না। কিন্তু শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল চলছেই।

তারা আরও বলেন, এসব দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসন, আহতদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও মানসিক ট্রমা থেকে মুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবার ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ পায়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল হোসেন ঠান্ডু বলেন, শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে কারখানা মালিক ও শ্রমিক নিয়োগকারীদের অবহেলা, উদাসীনতা ও আইন অমান্য করার প্রবণতা, সরকারের নিয়মিত পরিদর্শন ও আইন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার অভাব রয়েছে। শ্রম আইনে অপর্যাপ্ত এবং নামমাত্র ক্ষতিপূরণের বিধান কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর কর্মস্থল, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, ধুলাবালি, অত্যধিক শব্দ-তাপে কাজ, কোনো সুরক্ষা ছাড়াই মাটির গভীরে কাজ করা প্রভৃতি কারণে শ্রমিক আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে।

তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৬ সালে শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ১৩ বছর পর ২০১৮ সালের শ্রম আইন সংশোধনীতে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি আজও। ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা ও বিল্ডিং কোড সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের মামলা আজও নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা এসব নিষ্পত্তির জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

পরে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম নামের একটি সংগঠন বেশ কিছু দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- রানা প্লাজা ও তাজরিনসহ সারাদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১২১ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-এর ভিত্তিতে সারা জীবনের আয়ের ক্ষতির ভিত্তিতে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উচ্চ আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এ লক্ষ্যে ক্ষতিপূরণের একটি জাতীয় মানদণ্ড তৈরি করতে হবে, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে, নির্মাণ, রাসায়নিক, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রসমূহ পরিদর্শনে দেশব্যাপী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা ঝটিকা পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সবার জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সব শ্রমিককে বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুর্ঘটনা বা অন্যান্য সকল কারণ নির্ণয় করতে হবে, তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে, শ্রমিকসহ সব মানুষের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ২৩ এপ্রিল রানা প্লাজা ভবনে ফাটল দেখা দেয়। এ খবর শুনে সেদিন কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে পরের দিন কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করতে চাইলেও তাদের জোরপূর্বক ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাজে যোগদানে বাধ্য করা হয়। এরপর সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ জেনারেটর চালালে বিকট শব্দে ধসে পড়ে রানা প্লাজার ৯ তলা ভবন।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss