বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বৃহত্তর শহরগুলোতে বসবাসরত জনসংখ্যা এবং শহরের আয়তন অনুসারে নূন্যতম ১ হাজার ৮৭০টি খেলার মাঠ থাকার প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৩৬৫টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২০ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ৬০০টি মাঠের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৫৯টি।
গতকাল সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) কর্তৃক আয়োজিত “বাংলাদেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকায় খেলার মাঠের সংকট ও করণীয়” শীর্ষক এক সংলাপে এ উপাত্ত তুলে ধরেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডে সরকারি-বেসরকারি মিলে ২৫৬টি খেলার মাঠ আছে; যেখানে থাকা উচিত ১ হাজার ৩০টি।
এগুলোর মধ্যে ১৪১টি রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানায়, কলোনির মাঠ আছে ২৪টি, ঈদগাহ মাঠ আছে ১২টি। এছাড়া, ১৬টি সরকারি মাঠ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। আর এর বাইরে মাত্র ৪২টি মাঠ আছে, যেগুলো সবাই ব্যবহার করতে পারে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে প্রায় ৬০০টি মাঠের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৫৯টি। এই মাঠগুলোর অনেকগুলোতে আবার বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশ, মেলা। নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠ, আউটার স্টেডিয়াম মাঠ কিংবা বিডিআর মাঠে বছরের অনেকটা সময় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া, রাজশাহী শহরে দরকার ৫০টি আছে, ১৩টি; খুলনা শহরে দরকার ৯০টি, কিন্তু আছে ২৪টি; সিলেট শহরে দরকার ৫০টি, কিন্তু আছে ১৮টি এবং বরিশাল শহরে দরকার ৫০টি, কিন্তু আছে ১৬ টি।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এরমধ্যে খেলার মাঠ আছে ৫৪ হাজার ৮২৬টিতে। সে হিসেবে দেশের ১০ হাজার ৭৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (২০ শতাংশে) খেলার মাঠ নেই।
তিনি আরো বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ প্রায়শই অনুপস্থিত। গ্রামীণ এলাকায় পরিকল্পিত খেলার মাঠ নেই। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বিনোদনের চাহিদা পূরণ করে। অবকাঠামো নির্মাণের কারণে খেলার মাঠ সংকুচিত হচ্ছে। স্বল্পবিত্ত বা বস্তি এলাকায় খেলার মাঠ খুবই অপ্রতুল। যেগুলো আছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বললেই চলে।
তিনি বলেন, গ্রামে মেয়েদের খেলার মাঠ না থাকার কারণে মেয়েদের খেলার সুযোগ অপ্রতুল। নগর এলাকায় অনেক খেলার মাঠ বিভিন্ন ক্লাব বা প্রভাবশালী মহলের দখলে রয়েছে। উন্নয়নের সময় খেলার মাঠকে মাল্টিপারপাস তথা বহুমুখী বিনোদন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলবার কারণে খেলার সুযোগ কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম বলেন, “সরকারের মাস্টার প্ল্যান যা করার দরকার ছিল, সেটি হয়নি। আগামী ২০/৩০ বছর পরে কেমন হবে, সে বিষয়ে মাঠ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা কিংবা কাজ নেই। খেলাধুলায় আমাদের কালচার অন্য দেশের মতো সেভাবে গড়ে উঠেনি। তাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যায়ে গিয়ে আমরা পারছি না। কারণ আমাদের অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত স্থানের অভাব রয়েছে।”
চস/স