আজ ২৬ জুন, জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের জন্মশতবার্ষিকী। দিবসটি ঘিরে নানা ধরনের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কয়জন ক্ষণজন্মা মানুষ স্বীয় প্রতিভা ও কর্মগুণে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং বাঙালি জাতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে ত্যাগের রাজনীতি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনা (১৯২৩-১৯৭৫) স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে রয়েছেন ইতিহাসে।
এএইচএম কামারুজ্জামান বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল।
পরবর্তীকালে পুনর্গঠিত সরকারে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করলে তিনি বাকশালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে কামারুজ্জামানসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। ১৯২৩ সালের এই দিনে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার তৎকালীন নাটোর মহকুমার বাগাতিপাড়া থানার মালঞ্চী রেলস্টেশন-সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ছিল রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। কামারুজ্জামানের পিতা আবদুল হামিদ মিয়া ছিলেন একজন রাজনীতিক ও সমাজসেবক। তিনি রাজশাহীতে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য (এমএলএ) ছিলেন।
পিতা আবদুল হামিদ মিয়া ও মাতা জেবুন নেসার ১২ ছেলেমেয়ের মধ্যে কামারুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান। কামারুজ্জামান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’ পাস করেন।
পারিবারিকভাবে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নিজ জেলা রাজশাহীতে আজ দিনভর সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র জাতীয় নেতা তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
চস/স