মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ। আজ শনিবার বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে সেখানে দাফন করার কথা রয়েছে।
এর আগে সকাল থেকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবর খোঁড়ার কার্যক্রম শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
সকালে বাংলা একাডেমিতে কবি হেলাল হাফিজের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গতকাল ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে হোস্টেলের শৌচাগারে গিয়ে বেসিনের ওপর পড়ে মাথা কেটে যায় তাঁর। প্রায় আধা ঘণ্টা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে শৌচাগারের দরজা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কবি হেলাল হাফিজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় তার লেখা কবিতার প্রথম দুইটি লাইন ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়; এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,’ রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয় এবং এখনো পর্যন্ত এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহৃত রাজনৈতিক স্লোগান।
এটি ছাড়াও কবি হেলাল হাফিজের অনেক জনপ্রিয় কবিতা রয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল হাফিজ। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। তিনি দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তার তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
কেবল কবিতার পাঠকের নিরিখে নয়, যে ব্যক্তি অতটাও সাহিত্যের খোঁজখবর করেন না, এমন অনেকের হৃদয়েও দোলা দিয়েছে হেলাল হাফিজের পঙ্ক্তি। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার শেষে উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে।
লড়াইয়ে, সংগ্রামে, প্রেমে-বিরহে, দ্রোহে যাপিত জীবনের পরতে পরতে হেলাল হাফিজ স্পর্শ দিয়ে যান। ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র মতো ‘অগ্ন্যুৎসব’ কবিতাও শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগুন জ্বেলে দেয়। এ কবিতায় কবি বলেছেন, ‘ছিল তা এক অগ্ন্যুৎসব, সেদিন আমি/ সবটুকু বুক রেখেছিলাম স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে? জীবন বাজি ধরেছিলাম প্রেমের নামে/ রক্তঋণে স্বদেশ হলো,/ তোমার দিকে চোখ ছিল না/ জন্মভূমি সেদিন তোমার সতীন ছিলো।’ কেবল মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণ-অভ্যুত্থানের মতো প্রেক্ষাপটে নয়, যেকোনো অন্যায়ে-শোষণে-অবিচারে হেলাল হাফিজের এ উচ্চারণ সবার হয়ে ওঠে।
চস/আজহার