spot_img

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বুধবার
১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

ব্যাংক ঋণের জিম্মাদার প্রসঙ্গে কিছু কথা

ব্যবসা শুরু কিংবা ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি কিংবা বিভিন্ন কারনে ব্যাংক হইতে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে থাকে অনেকেই। ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার নিজের সম্পত্তি কিংবা ৩য় পক্ষ বন্ধক দাতা (Third party mortgagor) প্রয়োজন হয়। এছাড়াও তৃতীয় পক্ষ জিম্মাদার (Third party guarantor) প্রয়োজন হয়। সম্পদ বন্ধক এবং জিম্মাদার ব্যতীত ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। ঋণ গ্রহীতার আত্মীয় কিংবা বন্ধু সম্পর্কীয় কোন ব্যক্তিই ঋক্ত ঋণের জিম্মাদার হন। ঋণ গ্রহীতা নিজ প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করলেও উক্ত ঋণে জিম্মাদারের কোন আর্থিক স্বার্থ থাকে না। জিম্মাদার শুধুমাত্র সম্পর্কের খাতিরেই ব্যাংক ঋণের জিম্মাদার হওয়া এবং গ্রহীতার গৃহীত ঋণে জিম্মাদারের কোন অংশ না থাকলেও ঋণ গ্রহীতা যদি পরবর্তীতে ঋণ খেলাপীতে পরিণত হন তখন ৩য় পক্ষ বন্ধক দাতা এবং ৩য় পক্ষ জিম্মাদার ঋণ গ্রহীতার মতোই ঋণ পরিশোধে বাধ্য থাকেন। কোন ঋণে যদি ৩য় পক্ষ বন্ধক দাতা না থাকেন অর্থাৎ ঋণ গ্রহীতা নিজের সম্পত্তিই বন্ধক রাখেন এবং পরবর্তীতে খেলাপীতে পরিণত হন, সেখানেও জিম্মাদার ঋণ পরিশোধে বাধ্য থাকবেন।

অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ৬(৫) ধারায় বলা হয়েছে, “আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূল ঋণ প্রহীতার (Principal debtor) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সময়, তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা (Third party mortgagor) বা তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টর (Third party guarantor) ঋণের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকিলে, উহাদিগকে পক্ষ করিবে; এবং আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়, আদেশ বা ডিক্রি সকল বিবাদীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে ও পৃথক পৃথক ভাবে (jointly and severally) কার্যকর হইবে এবং ডিক্রি জারির মামলা সকল বিবাদী-দায়ীকের বিরুদ্ধে একই সাথে পরিচালিত হইবে। ব্যাংক ঋণ গ্রহণ যেমন একটি স্বাভাবিক বিষয়, তেমনি জিম্মাদার হওয়াকেও স্বাভাবিক এবং “কোন ঝামেলা হবে না” মনে করা হয় আমাদের দেশে। কিন্তু ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপী গ্রহীতায় পরিণত হন এবং পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধ না করেন, তখনই বাধে বিপত্তি। জিম্মাদারও অর্থঋণ মামলায় বিবাদী হন এবং ঋণ পরিশোধের দায় তার উপর আসে। অর্থঋণ মামলার রায় ডিক্রি শেষে জারী মামলা দায়ের হলে ঋণ গ্রহীতা যদি পলাতক হয়ে যান তখন আদালতের আদেশের মাধ্যমে পুলিশ জিম্মাদারকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলেন। তৎপর জিম্মাদারকে ব্যাংকের অপরিশোধিত পাওনার ২৫% টাকা জমা দিয়ে জামিন গ্রহণ করতে হয়। “আমি ঋণ গ্রহীতা নই, স্বত্ব ভোগী নই” এমন কথা বলেও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। সুসম্পর্ক থাকার ফলে ব্যাংক ঋণের জিম্মাদার হয়ে পরবর্তীতে ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করে পলাতক হয়ে গেলে কিংবা বিদেশ পারি জমানোর পর গ্যারান্টর বিপদে পরলে ঋণ গ্রহীতার পরিবারের সদস্যরা তখন গ্যারান্টরকে চিনেন না, দায় নিতে চান না। এমন অহরহ ঘটনা ঘটছে আমাদের দেশে, যা খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক বিষয়, তবে আইনবিরোধী নয়। কেননা জিম্মাদার যখন সাক্ষর করে, তখনই উক্ত ঋণের দায় জিম্মাদারের উপরেও চলে আসে।

আরও পড়ুন:- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্বাভাবিক

মূলত ঋণ গ্রহীতা বিশ্বাস জন্মায় যে, “আমি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ করে দেবো, আপনার সমস্যা হবে না” কিংবা ঋণ গ্রহীতার সাথে সুসম্পর্ক থাকায় সব ভবিষ্যতে কি হতে পারে, তা জেনে কিংবা না জেনেই জিম্মাদার হচ্ছেন অনেকে। সব ঋণ গ্রহীতা হয়তো খেলাপী হয় না, তেমনি সব জিম্মাদারকে বিপদে পরতে হয়। কিন্তু কোন ঋণে জিম্মাদার হওয়া মানেই নিজের উপর একটা চাপ নিয়ে রাখা। জিম্মাদার যদি নিজেও ব্যবসায়ী হন, তখন বিপদ আরো বেশি। কেননা ঋণ গ্রহীতা খেলাপীতে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি ৩য় পক্ষ গ্যারান্টর যদি থাকে তিনি এবং ৩য় পক্ষ জিম্মাদারও খেলাপীতে পরিণত হন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সি.আই.বি ডাটাবেজে নাম উঠবে এবং খেলাপী হিসেবে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা সম্ভব হবে না আর, যতক্ষণ না পুরনো ঋণ পরিশোধ না করেন। এছাড়া জিম্মাদার মূল ঋণ গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের পর ঋণ গ্রহীতা হইতে তাহার পাওনা টাকা আদায়ের সুযোগ থাকলেও তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এই সুযোগটি নিতে পারবেন কেবল ঋণ গ্রহীতার সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করা জিম্মাদারই। অন্যরা ২৫% টাকা জমা দিয়ে জামিন লাভ করলেও উক্ত ২৫% টাকা আদায়ের কোন বৈধ সুযোগ নেই।

অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর বিধান মতে জিম্মাদার ঋণের জন্য দায়ী হয়। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে জেলে যাওয়া সহ নানাবিধ আইনী হয়রানীর সম্মুখীন হতে হয়। প্রতারক শ্রেণীর ব্যক্তিরা ঋণ গ্রহণ করে পরবর্তীতে খেলাপী হয়ে ফাঁসিয়ে দেয় জিম্মাদারকে। তাই বন্ধুত্বের খাতিরে কিংবা আত্মীয়তার সুবাদে ব্যাংক ঋণের জিম্মাদার হওয়ার পূর্বে ভাবতে হবে শতবার।

শিক্ষার্থী
ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম,
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)।
কাটাবন, ঢাকা।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss