বাঙালীর ইতিহাসে একুশ একটি গৌরবময় দিন। একুশ এলেই আমাদের মনে করিয়ে দেয় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি? এমন আবেগ জড়ানো ভাষাপ্রীতি! পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা বাঙালীরাই প্রথম মাতৃভাষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করি।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ দুটি অংশে বিভক্ত ছিল-একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ছিল বাংলা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে এদেশের মানুষের মায়ের মমতা জড়ানো প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে কেন্দ্র করে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ন্যায়তান্ত্রিক সমাজ গঠনে বাঙ্গালি জাতি ছিল বদ্ধপরিকর। মাতৃভাষা অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। এর চূড়ান্তের অবসান ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। মুসলিম লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীন ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকাতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু এদেশের প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হোন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে বেরিয়ে আসেন । পুলিশের গুলিতে নিহত হয় রফিক, শফিক, সালাম, বরকতসহ আরো অনেকেই।
বিশ্ব আঁতকে ওঠে এমন দৃশ্যে! দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। প্রতিবার একুশ এলেই বীর শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। একুশ পরবর্তী জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেমন শিক্ষা আন্দোলন,ছয়- দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুথান, ১১ দফা আন্দোলন, ৭০- এর নির্বাচন, ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং স্বাধীনতার ঘোষণা এই সবই একুশের চেতনার প্রতীক।একুশ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেপথ্য নায়ক।
এই দিনটিতে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হয়। তারুণ্যের কন্ঠে মুখরিত হয় একুশের গান, কবির কন্ঠে শোভা পায় কবিতা এবং অমর একুশে বই মেলার আয়োজন করা হয়। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। একুশ শুধু বাঙ্গালির নয়; সারাবিশ্বে মাতৃভাষা বাংলা মর্যাদা লাভ করেছে ।
বর্তমান প্রায় ১৮৮ টি দেশে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। একুশ আমাদের সামনে চলার অণুপ্রেরণা জোগায়। সর্বপ্রথম নিজের দেশের মাতৃভাষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যকে ভালোবাসতে হবে। গৌরব গাঁথা একুশকে লালন করেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ন্যায়তান্ত্রিক সমাজ গঠনে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখিকা: তানজিনা আক্তার জেবিন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।