বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা, চুলা ও গ্যাসসংক্রান্ত কারণে প্রতিবছরই দেশে অগ্নি দুর্ঘটনা বাড়ছে। এদিকে ২০২৪ সালে সারাদেশে ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৪০ জন নিহত এবং ৩৪১ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া বিভাগ জানিয়েছে, গেল বছরে সারাদেশে এই অগ্নিকাণ্ডে ৪৪৬ কোটি ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ টাকা সম্পদের ক্ষতি হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস আগুন নির্বাপণের মাধ্যেমে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকার সম্পদ রক্ষা করে। অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে ৩৪১ জন আহত এবং ১৪০ জন নিহত হয়েছেন।
আগুন নির্বাপণের সময় ৩৭ জন বিভাগীয় কর্মী আহত এবং অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে দুইজন কর্মী নিহত হয়েছেন। অগ্নিনির্বাপণকালে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ফায়ার সার্ভিস এর ৩৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের কারণের বিষয় তুলে ধরে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৬ হাজার ৬৫৯টি আগুনের মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৯ হাজার ৬৯টি (৩৩.৯৮%), বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ৪ হাজার ১৩৯টি (১৫.৫২%), চুলা থেকে ৩ হাজার ৫৬টি (১১.৪৬%), উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ৭৮৯টি (২.৯৫%), ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার কারণে ৭৫৯টি (২.৮৪%), উত্তপ্ত ছাই থেকে ৭৩৫টি, গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ৭০৪টি, গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে ৪৬৫টি, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ৪৪টি (০.৪৫%), কয়েল থেকে ৪৫৫টি এবং আতশ বাজি/ফানুস/পটকা পোড়ানো থেকে ৬৪টি আগুনের ঘটনা ঘটে।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাসাবাড়ি/আবাসিক ভবনে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সারাদেশে বাসা বাড়িতে মোট ৭ হাজার ১৩১টি আগুন লাগে, যা মোট আগুনের ২৬.৭৪ শতাংশ। এছাড়া খড়ের গাদায় ৪ হাজার ৫১৩টি (১৬.৯২%), রান্নাঘরে ২ হাজার ৪১১টি (৯.০৪%), দোকানে ১ হাজার ৮৮৭টি, হাট-বাজারে ৯১১টি, শপিং মলে ৪৮১টি, পোশাক শিল্প ব্যতীত কলকারখানায় ৪৯৪টি, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৩৬টি, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ২১১টি, বহুতল ভবনের আগুন (৬ তলার উপরে) ১৫৩টি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ১৫০টি, কেপিআই ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১২৯টি, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১২৬টি, পাট গুদাম-পাটকলে ১২৩টি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৮৫টি, বস্তিতে ৮৪টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পরিবহনে আগুনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে সারাদেশে বাস বাদে যানবাহনে ২৬৮টি, বাসে ১১৪টি, ট্রেনে ১৩টি, লঞ্চে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
মাসভিত্তিক অগ্নিকাণ্ডের পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে ২৭৩৭টি, মার্চ ৩৪২১টি, এপ্রিল ৩৪২৬টি, মে মাসে ২৬৮৬টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এই চার মাসে গড়ে প্রতিদিন ১০২টি করে আগুন লেগেছে। এছাড়া জানুয়ারি মাসে ২৫১৪টি, জুলাই মাসে ১৪২৭টি, আগস্ট মাসে ২১৬৩টি আগুন লাগে।
অগ্নিকাণ্ডে আহত-নিহতদের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আহত ও নিহতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। সারাদেশে ৩৪১ জন আহতের মধ্যে পুরুষ ২৩৭ ও নারী ১০৪ জন। নিহত ১৪০ জনের মধ্যে ১০৭ জন পুরুষ ও ৩৩ জন নারী।
আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাসা-বাড়ি/আবাসিক ভবনে (আহত ৭২, নিহত ৩৬), গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ (আহত ৫৩, নিহত ৮) এবং রেস্তোরাঁ ও হোটেলে (আহত ৭৮, নিহত ৪৭) আগুনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছেন।
এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে সারাদেশে ডুবুরি কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৫৬ জন আহত এবং ৭৫০ জন নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। আরও ৩০৩টি পশু, ৫০টি পাখি, ২২৭টি প্রাণী উদ্ধার করে।
২০২৪ সালে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ৯ হাজার ১২৮টি দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে ১০ হাজার ৮২৬ জন আহত এবং ২ হাজার ৪৩৭ জন নিহতদের উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৩১৯ জন আহত এবং ১ হাজার ৪৮৪ জন নিহতদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
সারাদেশে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে ১৪৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এই মোবাইল কোর্টের মাধ্যেমে ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অগ্নিদুর্ঘটনা কমানোর জন্য সারাদেশে জনগণকে সচেতন করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে ১৮৯৮৩টি মহড়া, ৩০৩৬টি সার্ভে, ১৫৬৮৪টি গণসংযোগ করেছে। এছাড়া সারাদেশে অগ্নিদুর্ঘটনায় করণীয় বিষয়ে ৭৭৬৯টি প্রশিক্ষণের মাধ্যেমে ১,৪৭,৭১৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অপরদিকে ২০২৪ সালে শুধুমাত্র পোশাক শিল্প কারখানায় ৩৯২১টি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে ১,৫৬,৮৪০ জন পোশাক শ্রমিককে অগ্নিদুর্ঘটনায় করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
চস/স