spot_img

২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

“বিকেএসপি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে”

মামুনুল ইসলাম

মামুনুল ইসলাম। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম নক্ষত্র। চট্টগ্রামের কদমতলী থেকে বিকেএসপি হয়ে এখনও নিয়মিত জাতীয় দলে খেলছেন এই মিডফিল্ডার। ৫ বছর জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা মামুনুল প্রায় ১৫ বছর ধরে খেলছেন শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল। মামুনুলের ফুটবল গল্পটা নিয়ে কথা বলেছেন রাশেদুল ইসলাম। চট্টগ্রাম সময়ের পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চট্গ্রাম সময়: প্রায় ১৫ বছর ধরে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে খেলছেন। কেমন দেখছেন বর্তমান সময়ের ফুটবল?

মামুনুল: যদি লিগের কথা বলি, অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। আমি যখন শুরু করেছি তখন আবাহনী, মোহামেডানই শুধু ভালো দল গঠন করত। এদের পাশাপাশি ছিল ব্রাদার্স। ২০১২-১৩ এর পর থেকে আবাহনীর সঙ্গে শেখ রাসেল, শেখ জামাল আসল। মুক্তিযোদ্ধাও ভালো দল গঠন করত। আর এখন তো সাইফ স্পোর্টিং ও বসুন্ধরা কিংস এসেছে। কে চ্যাম্পিয়ন হবে আগেই বলা যায় না। আর আগে আবাহনী-মোহামেডান মুখোমুখি লড়াইয়ে যে জিতত, সেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত।

চট্গ্রাম সময়: প্রায় ১ যুগ ধরে জাতীয় দলে খেলছেন। ৫ বছর অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করেছেন। জাতীয় দলের বর্তমান অবস্থা কেমন দেখছেন ?

মামুনুল: র‌্যাঙ্কিংয়ের কথা বিবেচনা করলে তো আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। ১৯৭ র‌্যাঙ্কিংয়েও চলে গিয়েছিলাম। এর কারণ অবশ্য ভুটানের বিপক্ষে হারার পর দুই বছর বসে থাকা। কেন যে আমরা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেললাম না। এখন তো এখান থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন।

চট্গ্রাম সময়: আপনার সময়ে সেরা জাতীয় দল কোনটাকে বলা যায় ?

মামুনুল: সেরা জাতীয় দল বের করাটা কঠিন। কিছু জায়গা আছে ফলাফলের দিকে তাকাতে হবে। ২০১০ এস এ গেমস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ২০১২ তে গিয়ে আবার একটু খারাপ হয়। ২০১৩ সালে লোডভিক ডি ক্রুইফের আমলে আবার আমরা ভালো করেছি। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে খেললাম। বর্তমান সময়টা আবার ভিন্ন। এখন সবাই বলছে এই দলটা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে, ভালো খেলছে। কিন্তু ফলাফলও তো দেখতে হবে। সেটা কিন্তু আশানুরূপ হয়নি। সব কিছু মিলিয়ে কোনটা সেরা দল, এটা বলা কঠিন।

চট্গ্রাম সময়: চারটা প্রজন্মের সঙ্গে খেলেছেন। আমিনুল হক, আলফাজ আহমেদদের থেকে শুরু করে বর্তমান বিপলু আহমেদ, মতিন মিয়ারা। মাঝে নিজেদের প্রজন্ম ছাড়াও ইমন, বাবু, তৌহিদুল আলম সবুজ, ইয়াসিন খান, তপু বর্মনরা। কাদের এগিয়ে রাখবেন ?

মামুনুল: আলফাজ ভাইদের সঙ্গে তো আর কারও তুলনা হবে না। আমাদের থেকে শুরু করলে ইমন-সাহেদদের ব্যাচটা ভালো ছিল। তার পরে তপু, রায়হান ইয়াসিনরাও ভালো। এরপরে জনি , ইব্রাহিম , সুফিলদের। প্রত্যকটা ব্যাচেরই কিছু ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। বর্তমান সময়ে বিপলুর মতো ভালো খেলোয়াড় আছে। আবার দেখা যাবে ওর মধ্যে ইমন-বাবুর মতো সৃষ্টিশীলতা নেই। আবার ফিটনেসে বিপলু এগিয়ে। সব কিছু মিলিয়ে আলফাজ ভাইয়েরা অনেক এগিয়ে থাকবে।

চট্গ্রাম সময়: আপনার জেলা চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে আসি। সেখানে আপনার বাড়ি কোথায় ?

মামুনুল: চট্টগ্রাম শহরের কদমতলিতে আমাদের বাড়ি। সদরঘাট থানা। আমাদের বাড়ি অনেকটা শহরের ব্যবসায়িক কেন্দ্রের মধ্যে। ওখানকার মানুষ খুবই খেলাধুলা প্রিয় । তবে ওই বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে উঠে আসা সহজ ছিল না। বিকেএসপি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

চট্গ্রাম সময়: বিকেএসপি জীবন ?

মামুনুল: ১৯৯৭ সালে বিকেএসপির পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই। তবে ফুটবলে নয়, বাধ্য হয়ে প্রথমে জিমন্যাস্টিকসে ভর্তি হই বিকেএসপিতে ! দুই বছর পর খেলা পরিবর্তন করে ফুটবলে আসি। এর পর থেকে শুরু হয় ফুটবল জীবন।

চট্গ্রাম সময়: চট্টগ্রামের কোন খেলোয়াড়কে দেখে আপনার ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল ?

মামুনুল: আমার মামা শামসুদ্দিন চৌধুরী। ৮০ দশকের পিডব্লিউই দলের খেলায়াড় ছিলেন। বিআরটিসিতে বেশি খেলেছেন। তিনিই আমাকে বিকেএসপিতে নিয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলে ভর্তি করতে । কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীতে ফুটবলে ভর্তি হওয়া যেত না। তাই আমাকে প্রথমে জিমন্যাস্টিকসে ভর্তি করা।

চট্গ্রাম সময়: চট্টগ্রামে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় আছেন। আশিষ ভদ্রের মতো দেশের কিংবদন্তি ফুটবলাররা আছেন। ২০০৩ সাফ জয়ী মতিউর মুন্না, ফরহাদ হোসেনরা আছে। তাদের মাঝে আপনি নিজেকে কোথায় রাখবেন ?

মামুনুল: এটা প্রজন্ম ধরে ধরে বলতে হবে। আমি যেমন বলতে পারব না, আামি আশিষ মামার চেয়ে ভালো খেলোয়াড়। সে শুধু আমাদের চট্টগ্রামের নয়, বাংলাদেশের ফুটবলের লিজেন্ড। তাঁকে দেখে চট্টগ্রামের মানুষ ফুটবলার হওয়া শুর করেছে। এর পরে দেখতে হবে কে কত বছর জাতীয় দলে খেলেছে, কে কত দিন অধিনায়কত্ব করেছে। এভাবে ভাবলে নিজের একটা অবস্থান হয়তো পাওয়া যাবে।

চট্গ্রাম সময়: কখনো চট্টগ্রাম লিগে খেলেছেন ?

মামনুল: ২০০৩ সালে একবারই চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলাম কল্লোল সংঘের হয়ে।

চট্গ্রাম সময়: চট্টগ্রামের ফুটবলের পরিবেশ কেমন ?

মামুনুল: বিষয়টি খুব পরিষ্কার। আগে ঢাকা লিগের পরেই চট্টগ্রাম লিগের কথা বলা হতো। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। এখন ঢাকায় যারা প্রিমিয়ার লিগ খেলে, তারা তো আর সেখানে খেলতে পারে না। আর জাতীয় দলের ফুটবলাররা না খেললে সেখানকার লিগের মান কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বেশিরভাগই ক্রিকেটমুখী।

চট্গ্রাম সময়: আগে চট্টগ্রাম থেকে অনেক খেলোয়াড় উঠে আসত। এখন সেই ধারাটা কমে গিয়েছে মনে হয় ?

মামুনুল: সত্য। পরিকল্পনার অভাব আছে। মানুষ কাদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে আসবে। বাংলাদেশের টপ লিগের খেলোয়াড়দের ওখানে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এর পরও অনেক খেলোয়াড় আছে। আমাদের দলেই (আবাহনী লিমিটেড) আমি, সোহেল, নাসির। এভাবে সব ক্লাবে হিসেব করলে দেখা যাবে চট্টগ্রামের অনেক খেলোয়াড়।

চট্গ্রাম সময়: ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম নিয়ে কোনো স্বপ্ন আছে ?

মামুনুল: আমি বর্তমানে একটি একাডেমির সঙ্গে জড়িত আছি। বড় একটি একাডেমি করতে চাই। সবকিছু প্রায় ঠিক ঠাক হয়ে আছে। ইস্পাহানী আমাকে পৃষ্ঠপোষণ করতে চেয়েছে। চট্টগ্রামে ইস্পাহানী ক্রিকেট একাডেমি আছে। তারা ফুটবলের সঙ্গে থাকতে আগ্রহী। সেটা শুরু করতে বাংলাদেশের সেরা কোচদের পরিকল্পনা নিব, তাদের কথা শুনব।

চট্গ্রাম সময়: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য।

মামুনুল: আপনাকেও ধন্যবাদ, সাথে চট্টগ্রাম সময়ের সকল পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদেরও জানাই ধন্যবাদ।

 

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss