spot_img

২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

চীনের চিকিৎসা সেবা বাংলাদেশিদের কতটা টানবে

চিকিৎসার জন্য যারা বিদেশ যান তাদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য ছিল ভারত। এরপর তালিকায় ছিল থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা প্রায় বন্ধ রেখেছে ভারত। এরফলে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি রোগির বিদেশে চিকিৎসা অনিশ্চয়তায় পড়ে।

রোগিরা ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ডকে বেছে নেন। ভারতের তুলনায় থাইল্যান্ডে চিকিৎসা খরচ একটু বেশি হলেও বিকল্প না থাকায় সেই দেশে ছুটেন রোগিরা। মূলত ঢাকা থেকে দ্রুত যোগাযোগ সুবিধা এবং আর্ন্তজাতিক মানের চিকিৎসাসুবিধা পেতে থাইল্যান্ড যাওয়া শুরু করেন বাংলাদেশিরা। এই অবস্থায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য প্রতিদিন ৮শর মতো ভিসা দিচ্ছিল থাইল্যান্ড সরকার। এরমধ্যে মেডিকেল, বিজনেস, ট্যুরিস্ট এবং অফিসিয়াল ভিসা অন্তর্ভূক্ত ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে স্টিকারের বদলে অনলাইনে ভিসা সুবিধা চালুর পর থাইল্যান্ডে ভিসা দেয়ার হার বাড়ার বদলে উল্টো কমে যায়। ভিসা পেতে অপেক্ষার সময় বাড়তে বাড়তে এখন ৫০ দিন পর্যন্ত লাগছে। এই অবস্থায় থাইল্যান্ড যাওয়ার হারও কমে যায়।

বিকল্প হিসেবে মালয়েশিয়া খোঁজেন বাংলাদেশিরা। সেই দেশে দ্রুত ভিসা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু মালয়েশিয়া মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে বেশ প্রচারনা না থাকায় বাংলাদেশিরা বিমুখ হন। কোন হাসপাতালে কিভাবে চিকিৎসা নিবেন সেই সম্পর্ক বেশ ধারনা পাননি বাংলাদেশিরা। ফলে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর বিকল্প থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় সেই গন্তব্য বাংলাদেশিদের টানেনি।

এই অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য উম্মুখ হয়ে থাকা বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েন। এমন সময়ই ঘোষণা আসে চীন সরকার থেকে। চীনের কুনমিং শহরের চারটি সরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছেএবং ইতিমধ্যেই সেসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শুরু করেছেন অনেকে।

ট্রাভেল এজেন্ট, মেডিকেল ট্যুরিজমে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত ভিসা পাওয়া, অত্যাধুনিকমানের চিকিৎসা সুবিধা, তুলনামূলক কম খরচের কারণে চীন বাংলাদেশি রোগিদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠবে।
চীনের মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করেন ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিনদেশি লিমিটেডের কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসী।

তিনি বলেন, “বিদেশে চিকিৎসার জন্য একজন রোগি প্রথমেই চান দ্রুত ভিসা। এরপর চান সরাসরি ফ্লাইট আছে কিনা। তারপর খরচের কথা বিবেচনায় আনেন। ঢাকা থেকে চীনের কুনমিংয়ে সরাসরি ফ্লাইট আছে চায়না ইস্টার্ণ এয়ারলাইনসের। আড়াই ঘন্টার ফ্লাইটে ডিরেক্ট পৌঁছানো যাচ্ছে। এরপর ঢাকা চীনা অ্যাম্বাসিতে আবেদনের ৭২ ঘন্টার মধ্যেই মেডিকেল ভিসা পাওয়া যাচ্ছে।”

তিনি মনে করেন, সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি দিয়ে চীনের হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট হচ্ছে। আর চিকিৎসায় চীনে এমন অনেক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা এখনো অনেক উন্নত দেশেও চালু হয়নি। আর চিকিৎসার জন্য আপনাকে বাড়তি টেস্ট বা বাড়তি ডাক্তার ফি দিতে হবে না। চীনা নাগরিকরা যেই খরচে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, বাংলাদেশিরা একই খরচে ট্রিটমেন্ট পাবেন। আর থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের তুলনায় চীনে চিকিৎসা খরচ অনেক কম। ফলে চীনে চিকিৎসার ভালো একটি সুযোগ হয়ে উঠবেই।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে চীনের কুনমিং যেতে সরাসরি ফ্লাইট আছে একটি। আবার ট্রানজিট হয়ে যেতে চাইলে অনেকগুলো ফ্লাইট আছে। সরাসরি আসা-যাওয়ায় খরচ লাগবে‌ ৪৯ হাজার টাকার মতো। কুনমিংয়ের হোটেলে দুই জনের থাকার জন্য প্রতি রাত খরচ হবে মাত্র ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর সেখানে হালাল খাবারের হোটেল আছে।

চট্টগ্রামে চীনা মেডিকেল ভিসার কাজ করে চট্টগ্রামভিত্তিক ট্রেফেল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোহাম্মদ মামুন বলেন, “ভারত ও থাইল্যান্ডের ভিসা জটিলতায় বিদেশে যাওয়া রোগীরা আমাদের কাছে হেল্প চাইছেন। বিকল্প হিসেবে আমরা চীনে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। দ্রুত ভিসা, সাশ্রয়ী বিমান খরচ, চিকিৎসা খরচ কম হওয়ার এবং সবকিছু প্রফেশনালি হ্যান্ডল করার কারণে চীনে চিকিৎসার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।”

মোহাম্মদ মামুন আরও বলেন, ভারত মেডিকেল ভিসা খুব কষ্টসাধ্য আর থাইল্যান্ডের মেডিকেল ভিসা পেতে ৪৫ দিন লাগছে। এখন চীনে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টায় রোগী ও একজন অ্যাটেনডেন্টের ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, যা চীনে যেতে উৎসাহিত করেছে। আর ঢাকা থেকে কুনমিং আসা-যাওয়ার টিকিটের দাম ৪৯ হাজার টাকা। সেই তুলনায়, ঢাকা-ব্যাংকক ফ্লাইটে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, আর টিকিট ৪০ হাজার টাকা। চিকিৎসা খরচ থাইল্যান্ডের চেয়ে চীনে কম।

বাংলাদেশি রোগীদের জন্য কুনমিং শহরে চীন সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালগুলো হলো, ইউনান প্রদেশের দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল, দ্য ফার্স্ট অ্যাপ্লাইড অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ইউনান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল এবং ইউনান ক্যান্সার হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে অ্যাপয়েনমেন্টের জন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সহায়তা করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো রোগির যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্টের জন্য আবেদন করতে সহযোগিতা করছে। এমনকি ঢাকায় চীনা অ্যাম্বাসিতে ভিসার আবেদনে সহযোগিতা দিচ্ছে।

ভিনদেশি লিমিটেডের কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, রোগীর প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে আমরা ঢাকায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে একটি ফাইল রেডি করি। এরপর আবেদনসহ তা কুনমিংয়ের নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। সেই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার পরিকল্পনা ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার পর আমরা রোগির ইন্স্যুরেন্স কাভারেজসহ ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করি। আবেদনের ৭২ ঘন্টার মধ্যেই ভিসা দেয় চীন দুতাবাস। এজন্য রোগিকে অ্যাম্বাসিতে সরাসরি উপস্থিত হতে হবে। রোগি গুরুতর অসুস্থ হলে অ্যাটেনডেন্ট গেলেই হবে। আবেদনের পর সাধারণত ১৫ থেকে ৯০ দিন মেয়াদি চীনা মেডিকেল ভিসা দেওয়া হয়।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss