spot_img

১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

হেরে যাওয়া মানে নিজেকে নিঃশেষ করা নয়

আত্মহত্যা, যা বর্তমানে খুবই সহজ একটি বিষয়। নিজের জীবনকে নিজে শেষ করে দেওয়াকেই আত্মহত্যা বলে। কিন’ আত্মহত্যা কখনও আপনার লজ্জা ঢাকতে পারবে না। আপনি যদি মনে করেন আপনি আত্মহত্যা করে আপনার সব লজ্জা-কলঙ্ক থেকে রেহাই পাবেন সেটা ভুল। আপনার আত্মহত্যার মাধ্যমে আপনি নিজেকেই নিজে হারিয়ে দিয়েছেন। আসলে আমরা জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলোর জন্য বড় বড় সিদ্ধানত্ম নিয়ে ফেলি। সেটা যে শুধু আত্মহত্যা তা-ই নয়। কখনও স্বামী-স্ত্রী সামান্য ঝগড়া কিংবা অমিল হলে সেটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে নিজেদের ইগোকে মজবুত করে বড় একটি সিদ্ধানত্ম নিয়ে ফেলে। ডিভোর্স, আলাদা থাকা কিংবা মামলা এসবে জড়িয়ে যায়। কিন’ বিষয়টা ততটা বড় নাও হতে পারে। যদি আমি কিংবা আপনি চান, যদি আমি-আপনি কেউ না চাই তাহলে বিষয়টা বড়ও হতে পারে। এবং তার জন্য জটিল সিদ্ধানত্মও হতে পারে। এসবের মূলে কিন’ আমরাই।
আমি আত্মহত্যার কথা যখন বলছি তখন এর মূল কারণটাও বলি। একজন মানুষের কাছে আত্মহত্যার প্রবণতা তখনই আসে যখন তার মনে হয়, তার কাছে আর কোনো পথ নেই। কিন’ এটাই আমাদের সবচে বড় ভুল। আমরা হয়তো জানিনা, কোনো সমস্যার স’ায়ী সমাধান আত্মহত্যা নয়। আমরা যখন বিষণ্ন বোধ করি তখন বর্তমান মুহূর্তের খুব সংকীর্ণ প্রেড়্গাপটে আমরা জীবনটাকে দেখি৷ এক সপ্তাহ বা এক মাস পর হয়ত সবকিছু সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখাবে। যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়, আপনি একটা জরিপ চালান। দেখবেন যারা একসময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আজ বেঁচে আছে বলে খুশি ৷ তারা বলেছেন, তারা জীবন শেষ করে দিতে চায়নি -শুধু যন্ত্রণাটা দূর করতে চেয়েছিল৷
আমরা যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখি সেটা হচ্ছে পরীড়্গায় ফেল করে আত্মহত্যা করা। প্রতিবছরই কোনো না কোনো পরীড়্গায় এরকম অনেক শিড়্গার্থী আত্মহত্যা করে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীড়্গায় ফেল করায় ও প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় সারাদেশে সাতজন শিড়্গার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। কেউ জিপিএ ৫ পায়নি তাই, আবার কেউ ফেল করেছে তাই। এর মধ্যে আবার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা’রা অনেক সময় অতিরিক্ত বকাবকি করার কারণেও এ পথে চলে যায় সনত্মানরা। অথচ বাবা-মা’রাই পারে সনত্মানকে এমন সময় সাহস দিতে। এমন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আত্মহত্যা করে জীবনের অনেক অনেক বড় বড় বিষয় শেষ করে দিই আমরা। আমরা যদি একটু নিজস্ব চিনত্মা দিয়ে ভাবতে পারি তাহলেও হয়তো এমনটা কেউ করবে না। আমরাতো নিজের সাথেই নিজে কথা বলি না। নিজেও কখনও নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে বলে না। ভেতর থেকে একটা না না শব্দ ভেসে আসে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা মুখস’বিদ্যার মতো আত্মহত্যাকে সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন’ তারা জানে না আজকের বিখ্যাত সকল ব্যক্তিরাই তাদের জীবনে সবচে বেশিবার জীবনের সাথে হেরে গিয়েছেন। হেরেছেন সফলতার সাথেও। তবুওতো তারা আজ সফল। কারণ তাদের নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস ছিলো। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথাই বলি। তিনি দু’বার বিএ ও এমএ ডিগ্রি পরীড়্গায় ফেল করে তৃতীয় বার পরীড়্গা দিয়ে ‘থার্ড ডিভিশনে’ পাস করেন।
আমরা যদি চীনের ব্যবসায়ী জ্যাক মার জীবনী দেখি তাহলে দেখবেন তিনি তার জীবনে ১৭ বার ফেল করেছেন। অথচ আজ তিনি একজন সফল ধনী ব্যবসায়ী। যদি তিনি সফল হতে পারেন তবে আপনি আমি কেন পারবো না? প্রশ্নটা নিয়ে আশা করি ভাববেন।
আমি জানি না অন্যান্য ধর্মে কি আছে না আছে, তবে ইসলাম ধর্মে পরিষ্কারভাবে বলা আছে আত্মহত্যা করা মহা পাপ। আর জেনে শুনে পাপ কেউ করে না। হ্যাঁ, আপনি অপমানিত, লজ্জিত। আজ আপনি সবার কাছে ছোট হয়েছেন। কিন’ সময় বলে একটা কথা রয়েছে। সেই সময়কে আপনি একটু সময় দিন। আর নিজেকেও একটু সময় দিন। তারপর সেই সফলতার পেছনে ছুটেন। যার জন্য আপনি সেদিন লজ্জিত, অপমানিত হয়েছিলেন। আমি মনে করি মানুষ পারে না এমন কিছুই নাই। তাই নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস রাখতে হবে সবার আগে। মনে রাখতে হবে জীবনটা আপনার েএকার নয়। আপনার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক কিছু। আপনার পরিবার আপনার বন্ধু, আপনার ভালোবাসার মানুষটাও। আত্মহত্যা করলে তাদের কাছেও আপনি হেরে যাবেন। তাই তাদের কাছে অনত্মত নিজেকে তুলে ধরার সুযোগটি নিন। আর বিশ্বাস এবং সাহস রাখলে সব সম্ভব। একবার নয় দুবার নয়, একশবার ফেল করম্নন। তবুও সফলতার পেছনে ছুটেন।
কারণ সফলতার স্বাদটা যে আপনার নিতেই হবে। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে যারা জীবনে ফেল করে তারাই বেশি সফলতা পায়। আর সে সফলতার স্বাদটা অন্যসব সফলতার চাইতে বেশি মিঠা। তাই সফলতার পেছনে ছুটেন। আত্মহত্যা নয় সফলতাই হোক আমাদের লড়্গ্য, এটাই যেন প্রতিজ্ঞা হয় আমাদের।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss