spot_img

১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

মাতৃভাষা দিবসে তারুণ্যের ভাবনা

বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। অন্যান্য মাতৃভাষার চেয়েও বাংলা ভাষার মানুষ তাদের মাতৃভাষা নিয়ে বেশি গৌরবে থাকে। কারণ এই ভাষা পেতে দিতে হয়েছে প্রাণ, ঝরাতে হযেছে রক্ত। এ দিবসের মাধ্যম স্বীকৃত হয়েছে বাঙালি জাতির জাতিসত্তা, ভাষাসত্তা আর সার্বভৌমত্বের চরম বিকাশ। এই মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন জানতে চেয়েছেন চট্টগ্রাম সময়ের রিপোর্টার আজহার মাহমুদ

 

পরবর্তী প্রজন্মের নিকট সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা আমাদের কর্তব্য
ফেব্রুয়ারি,যে মাস আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছিলো কিছু তাজা প্রাণ আর বিনিময়ে দিয়েছিলো একটি ভাষা। যে ভাষায় আজ আমরা কথা বলি, বাঙালি নামে যে ভাষার জন্য সারা পৃথিবীতে নিজেদের মাথা উঁচু করে পরিচয় দিতে পারি। বাংলায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পথচলা শুরু তখন থেকেই। সেই পথচলার অংশ হিসেবেই আজ আমরা বিশ্বের মানচিত্র স্বাধীন,সার্বভৌম। বায়ান্নের ফেব্রুয়ারি মাসের সেই ত্যাগ, তিতিক্ষা আর সংগ্রামের ইতিহাস আজও বাঙালির পথচলার পাথেয়। বাঙালির সেই সাহসিকতা পুরো বিশ্ববাসীকে তাদের নিজ নিজ মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখিয়েছে, মায়ের ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে শিখিয়েছে। এই বীরগাঁথা, এই ইতিহাস, এই সংগ্রাম যাদের হাত ধরে এসেছে ভাষার মাসে বাঙালির সেই বীর সন্তানদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। যারা তাদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ইতিহাসকে এত গৌরবান্বিত করেছে তাদের সেই বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের নিকট সঠিকভাবে তুলে ধরা প্রতিটি স্বাধীন নাগরিকের কর্তব্য।

মাফরুহা আমরীন চৌধুরী
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বিদেশি সংস্কৃতি ও ভাষার কোনো বিরূপ প্রভাব যাতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর না পড়ে সেজন্য হতে হবে সচেতন। তবেই সার্থক হবে ২১শে ফেব্রুয়ারী, সার্থক হবে শহিদদের আত্নত্যাগ।

২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির অহংকার
“নানান দেশের নানান ভাষা, / বিনা স্বদেশী ভাষা পুরে কি আশা?” বিশ্বজুড়ে নানান জাতি, তাদের ভাষাও বৈচিত্র্যময়।কিন্তু নিজের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কখনই ভাবের সঠিক প্রকাশ সম্ভব নয়।মায়ের ভাষায় তথা নিজের ভাষায় ভাব প্রকাশেই রয়েছে প্রকৃত আনন্দ। আর তাইতো ভাষার অধিকার রক্ষায় আন্দোলন, সংগ্রাম এমনকি প্রাণ দিতেও পিছপা হয়নি বাঙালি।’৪৮ এ শুরু হওয়া সংগ্রাম চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৫২ সালে, ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি নিজের রক্তে রঞ্জিত করেছিল রাজপথ। অবশেষে বাঙালি পায় তার নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা পায় অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা।

২১শে ফেব্রুয়ারী, বাংলা ভাষা বাঙালির অহংকার। তাই সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে প্রমিত বাংলা ও শুদ্ধ বানান চর্চা। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি বাংলা, বাঙালি সর্ম্পকে জানাতে হবে নতুন প্রজন্মকে। বিদেশি সংস্কৃতি ও ভাষার কোনো বিরূপ প্রভাব যাতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর না পড়ে সেজন্য হতে হবে সচেতন। তবেই সার্থক হবে ২১শে ফেব্রুয়ারী, সার্থক হবে শহিদদের আত্নত্যাগ।

সুহাইফা জহির শৈলী
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম।

সব ক্ষেত্রে যেভাবে ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষা ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে যেন মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চা বজায় থাকে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি।

মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চা বজায় রাখা জরুরি
জন্মের পর কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয় তার মাতৃভাষার কারণে বিকশিত হয় । মাতৃভাষার সঠিক চর্চা ও জ্ঞান শৈশব থেকেই মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং নিজ সংস্কৃতির পারিপার্শ্বিকতা ও ইতিহাস জানার মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিচয় তৈরি করে । বাংলা বিশ্বের অন্যতম একটি ভাষা, মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্বে বাংলার অবস্থান ৫ম এবং বহুল প্রচলিত ভাষা হিসেবে ৭ম । তবে দুঃখের বিষয় , ইংরেজির মতো কয়েকটি জনপ্রিয় ব্যবহৃত বহুল প্রচলনের কারণে মাতৃভাষা তার গুরুত্ব হারাচ্ছে । বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে নিঃসন্দেহে ইংরেজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা, তবে শিক্ষা, ব্যবসাসহ সব ক্ষেত্রে যেভাবে ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষা ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে যেন মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চা বজায় থাকে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি। এছাড়া ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ২৬ এ শিশু শিক্ষাকে তার নিজস্ব সংস্কৃতি , ভাষা , মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধার দিকে পরিচালিত করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে । এছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ – এ কোনো ধরনের বৈষম্য না করে সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয় । কিন্তু , আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা বিভিন্ন মাধ্যমে ও কারিকুলামে বিভক্ত হয়েছে । যা ভাষা এবং জাতিগত দিক দিয়ে দিন দিন আমাদের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি করছে । নিজ নিজ জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের যে কোনো মূল্যে এর সর্বাধিক শুদ্ধ চর্চা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রদানের জোর দিতে হবে । অতএব , ভাষার মাস হোক মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা , শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য ।

জান্নাতুল ফেরদৌস সায়মা
শিক্ষার্থী , আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

একুশের ভাবনায় হোক তরুণ প্রজন্ম
একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের অহংকার, একুশে ফেব্রুয়ারি মানে বাঙ্গালি জাতি সত্ত্বার পরিচয় বহন করে। বিশ্বের বুকে একমাত্র মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিয়ে ভাষা প্রতিষ্ঠা করা একটি মাত্র দেশ বাংলাদেশ। যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। ভাষা আন্দোলনে শহীদ হওয়া সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কারণে আজ আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি। মনে ভাব প্রকাশ করতে পারছি। মাতৃভাষায় কথা বলতে পারার মধ্যে যে আনন্দ ও সুখ নিহিত রয়েছে তা আর কোনো ভাষার মধ্যে নেই। মাতৃভাষা মানে মায়ের ভাষা। পূর্বপাকিস্তানের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে যখন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে উর্দুই হবে একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা । তখন পূর্ব বাংলার বাংলাভাষা-ভাষী আপমর জনসাধারণ তার ঘোর বিরোদিতা করে। তখন আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ভাষার দাবিতে,যেখানে মিলিত হয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য তখন ছাত্র সমাজ ১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লে পুলিশের গুলিতে রফিক,সালাম,বরকত,শফিক জব্বারসহ অনেকের বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে রচিত হয় এক রক্তাক্ত অধ্যায়। যার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনই বাংলার ইতিহাসে পূর্ব-পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে ছিল প্রথম সফল বিদ্রোহ। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। তাই এই ভাষা শুদ্ধভাবে বলা,সম্মান করা, ভাষাকে ব্যঙ্গ না করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এতে তরুণদের ভূমিকায় মূখ্য।

এস.এম.মাঈন উদ্দীন রুবেল
সদস্য, বিটিসিএলএফ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

৫২’র ভাষা আন্দোলনের অন্যতম মূলনীতি ছিল “সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা”। ৭০ বছর পার হলেও আজও সেটা হয়নি। শুধু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা-ই নয়; বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল বানান ব্যবহার করে ভাষাকেই মেরে ফেলা হচ্ছে।

মাতৃভাষার সর্বাধিক গুরুত্ব নিশ্চিত হোক
চলছে ভাষার মাস, ফেব্রুয়ারী। প্রতিবছর এই মাস এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদেরকে সচেতন হতে দেখা যায়। দায়িত্ব স্বরূপ “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”-এ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, র‍্যালি, সভা-সমাবেশ, কলাম প্রকাশ, টক-শো প্রভৃতি কাজেই ভাষা শহীদদের স্মরণ ও বাংলা ভাষা নিয়ে কার্যক্রম করা হয়। কিন্তু এই কাজ গুলো কি আসলেই “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পেরেছে? এখনও আমাদের অফিস-আদালত, উচ্চশিক্ষার মঞ্চে বাংলা নয় আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতেই কার্যক্রম চালাতে হয়। অথচ ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অন্যতম মূলনীতি ছিল “সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা”। ৭০ বছর পার হলেও আজও সেটা হয়নি। শুধু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা-ই নয়; বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল বানান ব্যবহার করে ভাষাকেই মেরে ফেলা হচ্ছে। বর্তমান সমাজকে দেখা যায়; ২১ ফেব্রুয়ারী এই দিনটি উদযাপন করতেই ব্যস্ত, কিন্তু দিনটির তাৎপর্য অনুধাবন করতে একটুও ব্যস্ত নয়।

সাদিয়া ফাতেমা মীম
ইসলামিল স্টাডিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের মায়ের ভাষা। জন্মের পর প্রথম মায়ের মুখেই আমরা বাংলা ভাষা শুনি, তারপর থেকে শুরু হয় আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলা। বর্তমানে আমরা যতটা সহজে বাংলা শিখছি, বলছি শুরুর দিকে বাংলা বলাটা এতটা সহজ ছিলনা। সহজ ছিলনা রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৫২ সালে বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে দাবি জানায় তৎকালীন ছাত্রসমাজ। তীব্র আন্দোলনের মুখে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে বহু তরুণ ছাত্র শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকতসহ অনেকেই। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তাঁরা বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করে৷ তাঁদের মহান আত্নত্যাগের ফলেই আজ আমরা সহজে বাংলা ভাষা শিখতে, বলতে ও লিখতে পারছি। তাঁরা শহিদ হলেও আমাদের কাছে অমর হয়ে থাকবে চিরকাল।

ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss