spot_img

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

দুই হাত নেই, পা দিয়ে লিখে অদম্য রাব্বির সফলতা

বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে দুর্ঘটনায় দুই হাত হারিয়ে ফেলেছিল সীতাকুণ্ডের কিশোর রফিকুল ইসলাম রাব্বি। কিন্তু তার মনোবল হারায়নি কখনও। অদম্য রাব্বি প্রথমে মুখ দিয়ে ও পরে পা দিয়ে লেখা আয়ত্ত করে। তারপর পা দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।

রবিবার (১২ মে) চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, রাব্বি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে হাজী তোবারাক আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বজলুর রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম রাব্বি। নিজের এ সফলতায় ভালো লাগার কথা জানায় রাব্বিও। সে জানায়, সমাজের আর পাঁচ জনের মতোই ছিলো একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ ছিলো সে। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ৫ম শ্রণির ছাত্র রাব্বির জীবনে ঘটে যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেদিন রাব্বি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভাটিয়ারী বাজারের একটি ফুটওভারব্রীজ এর উপর দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ঐ ব্রীজের উপরে পড়ে থাকা একটি বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে যায় সে। এতে তার দুই হাতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে দীর্ঘ কয়েক মাসের চিকিৎসায় সুস্থ হলেও কেটে ফেলতে হয় তার দুটি হাত। এ ঘটনার পর সবাই ভেবেছিলেন রাব্বির আর পড়াশুনা হবে না। কিন্তু রাব্বি অদম্য। সে হার মানতে রাজি নয়। জীবনকে এগিয়ে নিতে সে মুখ দিয়ে লেখার পদ্ধতি চর্চা করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মুখ দিয়ে ভালোভাবে লিখতে শিখে সে একের পর এক পরীক্ষায় সাফল্য পেতে থাকে। কিন্তু আরো এগিয়ে যেতে সে পা দিয়ে লেখাও আয়ত্ব করে। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মুখ দিয়ে লিখে সাফল্য পেলেও আরো দ্রæত গতিতে লিখতে পা দিয়ে লেখা আয়ত্ব করে রাব্বি। পা দিয়ে সাবলীলভাবে লিখতে শেখার পর এবার স্থানীয় ভাটিয়ারী হাজী টিএসসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সফলতা পায়। রাব্বি আরো জানায়, মৃত্যু থেকে বেঁচে আসার পর থেকে তার মা বাবা, শিক্ষকবৃন্দসহ আরো কিছু মানুষ তাকে প্রেরণা দিয়ে এগিয়ে নেয়। স্থানীয় সাংবাদিকরাও শুরু থেকে তাকে নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন লেখায় অনেকে এগিয়ে আসে সহযোগিতায়। রাব্বির স্বপ্ন একদিন সে একজন বিজ্ঞানী হবে। এ জন্য সকলের দোয়া চায়।

অদম্য রাব্বি বলে, ‘পুকুর পাড়ি দিয়েছি, এবার সাগর পাড়ি দিয়ে শিক্ষক হব। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করব।’ তিনি বলেন, ‘আমি যে শারীরিক প্রতিবন্ধী সেটা কখনও ভাবি না। আমার মনোবলই লড়াইয়ের আসল শক্ত। আর মানুষের দোয়া ও ভালবাসায় আমি ভালো রেজাল্ট করেছি। ভবিষ্যতে শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি।’

রাব্বির বাবা বজলুর রহমান বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার ছেলে কঠোর পরিশ্রম করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে।

ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্য বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও রাব্বি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়েছে। বিত্তবানরা যেন তার পড়ালেখায় সহযোগিতা করে, সেটাই প্রত্যাশা।

পরীক্ষাকেন্দ্র ফৌজদারহাট খয়রাতি মিঞা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, তাকে নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মিনিট সময় অতিরিক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়তি সময় সে নেয়নি।

সীতাকুণ্ডের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছাফা বলেন, রাব্বিকে সেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমরা মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পেতে দেখেছি। সে পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছে।

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss