মহান স্বাধীনতার উত্তাল মার্চ মাস। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্থপতি শহিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে এ মাসে হানাদার পাকিস্তানি জুলুম নিপীড়ন নির্যাতন ও শোষণ থেকে আজকের বাংলাদেশ ১৯৭১-এ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা অর্জন করে। দীর্ঘ নয় মাস তুমুল সংগ্রাম, আন্দোলন আর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র অর্জিত হয়। সে অনেক ঘটনা প্রবাহের কথা। অসংখ্য সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং আর জেল জুলুমের করুণ ইতিহাস পৃথিবীর ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাস। সেদিন একটি পক্ষ স্বাধীনতার বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের বিরোদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
সব ধরনের জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তাজা রক্ত আর মা বোনের ইজ্জত আব্রু বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকা এ জাতি অর্জন করে। সালাম ও স্বশ্রদ্ধা ভরে তাদের বিদেহী আত্মার স্মরণ করছি আজকের এ দিবসে। হাজারো জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী বেঈমান, মুনাফেক কুচক্রীমহলের অসংখ্য অপচেষ্টা সত্তেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দামিয়ে রাখতে পারে নি। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো এত সহজে এ স্বাধীনতা অর্জন করা যেতো না।
মহান এ নেতার আত্মত্যাগ স্বপরিবারে তাঁকে শহিদ করার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী সে বেঈমান গোষ্ঠী আরেকটি কালো অধ্যায়ের ইতিহাস রচনা করেছে সেদিন। আজকের এ দিনে ওই কুখ্যাত খুনিদের ধিক্কার জানিয়ে বাংলার আপামর জনতার নেতা স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি অজ¯্র সালাম ও শ্রদ্ধা। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে আজ জাতি পা রাখছে। অর্ধ শতকের এ সময়ে বাঙালি জাতির তৃণমূলের মানুষের অর্জন নিয়ে দু’টি কথা না বললে হয় না। এ সময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষ দেশ শাসন করেছে। শাসন আর শোষনের হিসেব নিকেশ পর্যালোচনা করলে দেশ যেভাবে সার্বিকভাবে উন্নয়ন অগ্রগতি অর্জন করার কথা ছিলো জাতি তা দেখেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মামলা হামলা, জেল জুলুমের ষড়যন্ত্রে দেশের আমজনতার কাঙ্খিত সফলতা আসেনি।
হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনের নামে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ যেভাবে বিশ্বের কাছে মাথা তুলে দাঁড়াবার স্বপ্ন ছিলো তা জাতি অনেকদিন আবলোকন করতে পারে নি। তৃণমূল জনগণের কথা হলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে আজকের বাংলাদেশ শিক্ষা দীক্ষা উন্নয়ন অগ্রগতিতে রেমিটেন্সের আয় আসাধারণ সফলতায় পৌছাতে সক্ষম হয়েছে। আজ উন্নয়নের সাথে শহর গ্রাম সবখানে শিক্ষার মশাল ঘরে ঘরে জ্বলছে। দেশের খেটে খাওয়া কৃষক জেলে কামার কুমারের সন্তানেরা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে মশাল জ¦ালাচ্ছে। উন্নয়নের অব্যাহত গতি শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। লাখো কোটি টাকার বাজেট স্বাধীন বাংলাদেশ আজ পবিত্র সংসদে পাশ করছে। উন্নয়নের জোয়ারে সারাদেশ অট্টহাসিতে উদ্বেলিত। ঘরে ঘরে বিদুৎ, শহর আর গ্রাম কোনো পার্থক্য নেই। তথ্য প্রযুক্তিতে আজকের তরুণ প্রজন্ম দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছে। কৃষকের ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। শিক্ষা আর তথ্যপ্রযুক্তি এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাতের নাগালে।
আরো পড়ুন: করোনা: মানবতার সেবায় ৩১ লাখ টাকা দিলেন ক্রিকেটাররা
মাত্র কয়েক বছর আগে মোবাইলের একটা সিম বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। আর সে সিম এখন ফ্রি-তে পাওয়া যায়। প্রায় আঠারো কোটি জনগণের এদেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি এখন জনগণ দেখছে না। উৎপাদন, বিপণন বাজার সবদিকেই দেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপিয়ান কতিপয় দেশ বাংলাদেশকে ভিক্ষুক আর খয়রাতির দেশ বলছিল মাত্র কয়েক বছর আগে। আজ তারাও বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নে বেকুপ হয়ে আছে। পদ্মা সেতুর মতো মেঘা বিশাল অর্থের প্রজেক্ট বাংলাদেশের সৎ ও সাহসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে দেশব্যাপী হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রজেক্ট বাস্তবায়ন অব্যাহত আছে। তৃণমূলের সাধুবাদ না জানানো একটি মানসিক রোগ ছাড়া কিছুই না।
জাতীয় উন্নয়ন মানবকল্যাণে সব ধরনের কর্মসূচীর প্রতি তৃণমূলের নিরঙ্কুশ সমর্থন ও সহযোগীতা রয়েছে। জাতির স্বস্তির কথা বলে সংক্ষিপ্ত আর্টিকেলে শেষ করা যাবে না। চিকিৎসা সেবাসহ আরো অসংখ্য সফলতার দৃষ্টান্ত বলতে গেলে বলা যায়। তবে কিছু কিছু বিষয় জনগণের অতৃপ্তি অনুভূত হয়। ভোট, নির্বাচন, জনপ্রতিনিধি সিলেকশনে জনগণের মতামত শ্রদ্ধার সাথে রাখতে হবে। স¦াধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ধারা উপধারায় দেশ চালিয়ে নিলে বর্তমান সরকার আরো প্রশংসিত হতো। নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, শিশু ও বয়:জ্যোষ্ঠ নাগরিকের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া চায়।
জনগণের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যকে আরো সচ্ছ ও সহজ করতে হবে। ছিন্নমূল গৃহহীন মানুষের মিছিল যেনো না বাড়ে সেদিকে যতœবান হতে হবে। ২২ পরিবার থেকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের দারিদ্র জনগণকে মুক্তি দিয়েছে। পুনরায় যেনো দেশ ও জাাতি নৈব্য ২২ পরিবার দেশকে গ্রাস করতে না পারে। দেশের ভোগ্যপণ্য, নিত্যপণ্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চায় তৃণমূল জনগণ। দুষ্ট চক্রের বেড়াজাল থেকে তৃণমূলের নিরীহ শান্তিপ্রিয় জনগণকে রক্ষা করতে হবে। শিক্ষা ডেবলাপ শাসনে দেশ অভাবনীয় ভাবে যে ভূমিকা রাখছে তা অব্যাহত রাখতে দেশ জাতি বিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্রের কঠোর নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রের সবগুলো সেক্টরের নজরদারির সাথে আইনশৃংখলা বাহিনী পুলিশের ভূমিকা আরো সচ্ছ জবাবদিহি ও জনবান্ধব করতে হবে। অহেতুক পুলিশি হয়রানি জনগণের মৌলিক ও সংবিধান বিরোধী। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংখলাবাহিনী কোনো অবস্থায় সংবিধান ও আইনের উর্ধ্বে নয়।
কোনো অবস্থায় তাদের কতিপয় লোকের অবৈধ কর্মকান্ডকে আইন বহির্ভূতভাবে ছেড়ে দেয়া যাবে না। দেশের জনগণের যে ক্ষমতা ও নাগরিক অধিকার অনূরূপভাবে রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের একই নিয়মে চলতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির কল্যাণে রাত দিন যেভাবে পরিশ্রম করছেন, অনূরূপ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও সেভাবে জাতি দেখতে চায়। সারাবিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসে কাতর। বিশ্বের অর্থনীতি ও কোটি কোটি মানুষ আতঙ্ক ও আশঙ্কার মধ্যে দিন গুনছে। বাংলাদেশ এ ভাইরাসে চরমভাবে আতঙ্কগ্রস্থ। রাষ্ট্রের সার্বিক প্রচেষ্টা ও জনগণের সচেতনতা সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ। সাহস ও ধৈর্য্যের সাথে এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এ পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের অরাজকতা পণ্যমূল্যবৃদ্ধি জনমনে ভয়ভীতি কঠোর হস্তে তদারকী করতে হবে।তবেই আজকের দিবসের মহান স্বাধীনতা দিবস স্বার্থক ও সফল হবে। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা আত্মার শান্তি সহ সকল মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ভাই বোনদের প্রতি অজ শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বাধীনতার অব্যাহত সাফল্য কামনা করছি।
লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক