spot_img

১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

উচ্চতর শিক্ষা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বস্তির ছেলে সিয়াম

ঢাকার রায়েরবাজারের বস্তির ছেলে হয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন সিয়াম।

যে বস্তির ছেলেরা লেগুনার হেলপার হয়ে বা কোনো ওয়ার্কশপে কাজ করে উপার্জনের কথা ভাবে, একই অবস্থানে থেকে স্কলারশিপ নিয়ে সুদূর মার্কিন মুল্লুকে যাচ্ছেন তিনি। তাইতো সিয়ামকে সবাই গোবরে পদ্মফুল বলছেন।

বস্তির সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে চলতি মাসেই সিয়াম ডানা মেলবে দিগন্তের ওপারে। আমেরিকার ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে (ইউডব্লিউসি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবছরে ৮০ হাজার ডলার মূল্যের পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পড়তে এ মাসেই নিউ মেক্সিকো যাচ্ছেন তিনি।

সিয়ামের এমন স্বপ্নপূরণ এমনি এমনি হয়নি। এর জন্য ছোটবেলা থেকেই তার অধ্যবসায় করতে হয়েছে।

আর তার এ অধ্যবসায়ের মূল্য দিয়েছে ইউডব্লিউসি। তার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ‘ডেয়ার টু ড্রিম’ বা ‘স্বপ্ন দেখার সাহস’ নামে এ বৃত্তিটি দিয়েছে তারা।

তবে এ স্বপ্নপূরণের যাত্রাটি সহজ ছিল না সিয়ামের জন্য। কীভাবে বস্তি থেকে বৃত্তি নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হলো তার, সে কথা জানাতে সিয়াম বলেন, ‘আমার এই অর্জনের পেছনে অবদান রয়েছে জাগো ফাউন্ডেশন ও বাবা-মায়ের।’

তিনি বলেন, ‘আমি উপলব্ধি করি যে, বস্তিজীবন থেকে উদ্ধার পেতে পড়ালেখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই আমার। আর সেই পড়ালেখায় নিয়মিত সাহায্য ও সাহস জুগিয়েছেন আমার বাবা-মা।’

তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন জাগো ফাউন্ডেশনের স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এখানকার প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। ১৭ শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু হলেও ক্লাসে আসত দুই-তিনজন করে।’

এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘বস্তির অভিভাবকদের অনেকে মনে করত, এসব এনজিও স্কুল থেকে শিশুদের পাচার করা হবে।’

এমন গুজব বিশ্বাস করে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাইতেন না। তবে সিয়ামের মা-বাবা ছিলেন এর ব্যতিক্রম।

তিনি বলেন, ‘সবাই যখন এমন গুজবে বিশ্বাস করছিল, তখন আমার মা-বাবা আমারে রোজ স্কুলে পাঠাতেন এবং অন্য অভিভাবকদেরও গুজবে কান না দিয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে দিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করতেন।’

সন্তানকে শিক্ষিত করার সেই আগ্রহটা ভালোভাবেই পূরণ করেছে সিয়াম।

সিয়াম জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়া ও পড়ালেখা ছিল আমার নেশা। এতে আমার যে লাভ হয়েছে, তা হলো- আমি বিদ্যার্জন করতে পেরেছি আর আমার সামনে পৃথিবীকে জানার দুয়ার খুলেছে।’

একসময় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সিয়াম। সেই লক্ষ্যে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। তবে পরে লক্ষ্য বদলে এখন যোগাযোগকর্মী হতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘স্কুলে যখন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা পরিদর্শনে আসতেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে ওদের মতোই হতে চাইতাম। তখনই বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার স্বপ্ন জাগে মনে।’

এই স্বপ্নপূরণে জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করবী রাকসান্দ তাকে সাহায্য করেছেন বলে জানান সিয়াম।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার জীবনের প্রথম স্কাইপ একাউন্ট করবী রাকসান্দ স্যার করে দিয়েছিলেন।’

সিয়ামের এ সাফল্যে তার পরিবারের সঙ্গে বস্তিবাসী সবাই অনেক খুশি। এখন সিয়ামকে দেখেই নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে সিয়ামের ভাষ্য, ‘বস্তির ছেলে হয়ে আমি এতদূর এসেছি। এটি একটি দৃষ্টান্ত। যেখান থেকে আজ আমি এ পর্যায়ে এসেছি, ইনশাআল্লাহ আরও অনেক দূর যাব। আমি মনে করি, আমাকে দেখে অন্যরাও পারবে।’ সূত্র: বিবিসি

 

চস/সোহাগ

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss