জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ১১৭ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। যার মধ্যে ৯৭ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে এমন পাঁচটি আসন আছে, যেখানে জয়ী প্রার্থী ছাড়া অন্যদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
এছাড়া একটি আসনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানান, যেকোনো আসনে মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
“সে হিসেবে যারা প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পাননি, তাদের সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হিসেবে বিবেচনা হবে।”
রোববার (৭ জানুয়ারি) দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা- বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আসনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-৪, ৬, ৭, ৯ ও ১৩-এই পাঁচটি আসনে জয়ী প্রার্থী ছাড়া অন্য সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৩ জন। তার মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬২টি। সে হিসাবে এ আসনে জামানত ফেরত পেতে প্রার্থীদের প্রত্যেককে সর্বনিম্ন ১৮ হাজার ১৩৩টি ভোট পেতে হবে।
এ আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা সাত জন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ৮৯ হাজার ৬৪ ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৯৫ ভোট। তার বাইরে অন্য কোনো প্রার্থী এক হাজার ভোটও পাননি। সে হিসাবে এ আসনে পাঁচ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ জন। তাদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৫ জন। সে হিসাবে এ আসনে একজন প্রার্থীর জামানত টিকিয়ে রাখতে ভোটের প্রয়োজন ১৮ হাজার ৬৮৩টি।
এ আসনের ৯ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার সনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬৮৫ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব তরমুজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে তিন জন হাজারের ঘর পার হলেও অন্যরা পারেননি। সে হিসাবে এ আসনে জামানত হারিয়েছেন সাত জন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মোট আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭০ ভোট। এ আসনে জামানত টিকিয়ে রাখতে ভোটের প্রয়োজন ছিল ১০ হাজার ৯৪৮ ভোট। সে হিসাবে এ আসনের জামানত হারিয়েছেন ছয় জন প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) এই আসনে আওয়ামী লীগের এস এম আল মামুন (নৌকা) পেয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির দিদারুল কবির (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৮০ ভোট।
তবে আসনটিতে মামুন ছাড়া ছয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হযেছে।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের মোট প্রার্থীর সংখ্যা আট জন। সেখানে মোট ভোট পড়েছে ৯৮ হাজার ১০৭ ভোট। যার মধ্যে জাতীয় পাটির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পেয়েছেন ৫০ হাজার ৯৭৭ ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫১ ভোট।
এ আসনটিতে জামানত টিকিয়ে রাখতে প্রার্থীদের ভোটের প্রয়োজন ছিল ১২ হাজার ২৬৪ ভোট, যার কারণে অন্য ছয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম ছাড়া বাকি পাঁচ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ফজলে করিম পেয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭২ ভোট। এ আসনে জামানত টিকিয়ে রাখতে ভোটের প্রয়োজন ২৯ হাজার ১৩ ভোট।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনটিতে আওয়ামী লীগের হাছান মাহমুদ পেয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৬ ভোট। তিনি ছাড়া আসনটিতে অন্য পাঁচ প্রার্থীর সবার জামানত বাতিল হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী) আসনে এবার আওয়ামী লীগ তাদের কোনো প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল সোলায়মান আলম শেঠ। নির্বাচনে তারও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যদিও সেখানে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ও সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন। এ আসনে ১০ জন প্রার্থী অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন আবদুচ ছালাম। ছালাম ও বিজয় ছাড়া অন্য আট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী, বাকলিয়া) আসনটিতে প্রার্থী ছিলেন সাতজন। তাদের মধ্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়া অন্য সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। মহিবুল হাসান চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট এক লাখ ৩০ হাজার ৯৯৩। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির সানজিদ রশিদ চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৯৮২ ভোট।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু ৫৯ হাজার ২০৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম ফুলকপি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৩৫ ভোট। তারা দুই জন ছাড়া অন্য আট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা) আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল লতিফ জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াউল হক সুমন ছাড়া অন্য পাঁচজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। আসনটিতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ছাড়া অন্য সাত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি ছাড়া বাকি ছয়জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরী জয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল জব্বার ছাড়া বাকি ছয় জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। মোতালেব ও নদভী ছাড়া আসনটিতে বাকি পাঁচ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনটিতে ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
এ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান জয়ী হয়। তার নিকটতম অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আব্দুল্লাহ কবির লিটন ছাড়া অন্য সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
চস/স