প্রতিবারের মতো আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপাতে ৮শ মেট্রিক টন কাগজ সরবরাহ করার জন্য রাষ্ট্র্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেডকে (কেপিএম) চাহিদাপত্র দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য কমিশন প্রায় সব কাগজ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাগজ কল কেপিএম থেকে নেয়। ইসি থেকে চাহিদাপত্র পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাগজ সরবরাহ করতে উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মিল কর্তৃপক্ষ। এবার প্রায় ১০ কোটি টাকার কাগজ সরবরাহ করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ্ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে সাদা এবং কালার মোট ৮শ মেট্রিক টন কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে কালার (হলুদ, নীল ও গোলাপি) সাড়ে ৬শ মেট্রিক টন। আর দেড়শ মেট্রিক টন সাদা কাগজ। আমাদেরকে ডিসেম্বরের মধ্যে কাগজ সরবরাহের জন্য বলেছেন। আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। ধাপে ধাপে সরবরাহ শুরু করব। এসব কাগজের মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
কেপিএমের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে কেপিএম থেকে ব্যালট পেপার এবং পোস্টাল ব্যালটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ সংগ্রহ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য কেপিএম থেকে কাগজ সরবরাহ করতে কমিশন চাহিদাপত্র দিয়েছে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজ যথাসময়ে সরবরাহ করার জন্য মিলের শ্রমিক–কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
মিলের অপর একটি সূত্র জানায়, সরকার প্রতি বছর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ে কোটি কোটি বই বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে। সেসব বইয়ের বেশিরভাগ কাগজ কেপিএম থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৭৫ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত মিলটিতে বর্তমানে নানা সংকট চলছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি উন্নত মানের কাগজ উৎপাদন করে আসছে। ফলে দেশের সরকারি–বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে কেপিএমের কাগজের বেশ চাহিদা রয়েছে। শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও কেপিএম থেকে কাগজ সংগ্রহ করে। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে মিলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
কেপিএমের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার হিসেবে ব্যবহারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী সময়মতো ইসিকে কাগজ দেওয়া হবে। ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য সাদা কাগজ ছাড়া আরো তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। চলতি বছর ইসির চাহিদা অনুযায়ী সাদা ও রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে কর্ণফুলী পেপার মিল।
কেপিএমের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৭২ বছরের পুরাতন কারখানা হওয়া সত্ত্বেও কেপিএম আজও গুণগত মান ঠিক রেখে উন্নত মানের কাগজ উৎপাদন করতে পারছে। ফলে নির্বাচন কমিশন কেপিএম থেকে কাগজ সংগ্রহ করছে। কেপিএম ধাপে ধাপে সব কাগজ সরবরাহ করবে। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর সিডিউল অনুযায়ী যারা প্রার্থী হবেন এবং প্রার্থীরা কে কোন প্রতীক বরাদ্দ পাবেন তার ওপর নির্ভর করে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। নির্বাচন কমিশনকে যথাসময়ে কাগজ সরবরাহ করার জন্য কেপিএম কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া কাগজ উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পাল্প আনা হয়েছে।
মিলটি কাঁচামালের জন্য সম্পূর্ণভাবে বাঁশের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশের সংকট দেখা দেওয়ায় মিলটি কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। বর্তমানে মিলে প্রায় ৫০০ কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শ্রমিক স্থায়ী–অস্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছেন। সূত্র: আজাদী
চস/স


