আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান এই আদেশ দিয়েছেন। এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে সুদীপ্ত হত্যা মামলায় আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয় ।
এদিকে রিমান্ড শুনানিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে মাসুমের আইনজীবীরা তাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার আশংকার কথা জানান। সামনের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গও উঠে আসে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী, সংবাদকর্মী ও পুলিশের উপস্থিতির কারণে আদালতের ভেতরে ভিড় জমে যায়। আদালতের নিচে তার অনুসারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। এ সময় তারা আদালত ভবনের ২য় তলায় উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে থামিয়ে দেয়। রিমান্ড আদেশের পরপর তাকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় প্রিজন ভ্যানের সামনে পেছনে পুলিশের গাড়ি ছিল।
গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসুমকে ঢাকার বনানীর কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ এলাকার একটি টাওয়ারের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম। গতকাল সোমবার সকাল ৭টার দিকে মাসুমকে নিয়ে পিবিআইর টিম চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মাসুমকে সরাসরি আদালতে আনা হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন সিএমপির সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। আসামিপক্ষে মূল আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন এডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
ক্রসফায়ারের আশংকা: রিমান্ড শুনানিতে অংশ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু দিদারুল আলম মাসুমকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতে পারে আশংকা প্রকাশ করে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন বলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। যার অংশ হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তার আইনজীবী। বিচারক বিষয়টি নোট করেছেন বলে জানান।
এর জবাবে প্রসিকিউশনের পক্ষে দাঁড়িয়ে কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়ে কোন আসামিকে চট্টগ্রামে ক্রসফায়ার দেয়ার উদাহারণ নেই। তাই এ ধরনের আশংকার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।
মিজানকে নিয়ে কথা: আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সুদীপ্ত হত্যা মামলায় মিজানুর রহমানকে ব্যবহার করে এ মামলায় মাসুমকে ফাঁসানোর জন্য স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। যে মিজানের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে এ মামলায় মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই মিজানুর রহমান কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙ্গেছে। তার এসব কাজের ফুটেজও আছে। এখন উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে দিয়ে একটা স্টেটমেন্ট করিয়ে এ মামলায় মাসুমকে জড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তার আইনজীবীদের।
আদালতের লকআপেই ওকালতনামায় স্বাক্ষর: আসামিকে ঢাকা থেকে এনে সরাসরি আদালতেই উপস্থাপন করে পুলিশ। এ কারনে ওকালতনামায় আগে স্বাক্ষর নেয়া সম্ভব হয়নি মাসুমের। এ অবস্থায় লকআপের ভেতরেই ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
এ বিষয়ে কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, আসামিকে আইনগত সকল সুবিধা প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আদালতে সংবাদকর্মী থাকতে আপত্তি নেই : শুনানির আগে অন্যান্যদের মতো সংবাদকর্মীরাও ভেতরে প্রবেশ করেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য। এসময় আইনজীবীদের কয়েকজন আদালতের ভেতরে সংবাদকর্মীদের থাকার এখতিয়ার নিয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে বিচারক জানান, এটা উম্মুক্ত ট্রায়াল। এখানে সাংবাদিকরা থাকতে আপত্তি নেই। তাঁরা শুনানির বক্তব্য শুনবেন। তবে যাতে ছবি ও ভিডিও ধারন না করে।
রিমান্ডের আগে পরে স্বাস্থ্যগত নির্দেশনা: আইনজীবীদের দেয়া তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ নেতা মাসুম ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে তিনটি রিং লাগিয়েছেন শরীরে। তাই তার সুচিকিৎসা দরকার। জবাবে আদালতের পক্ষ থেকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে বলে জানানো হয়। এ সময় আরো বলা হয়, আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাকে।
প্রসিকিউশন পক্ষের বক্তব্য: নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় মাসুমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা এই আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তিনি আরো জানান, আদালতে মাসুমের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়।
সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ শুনানিতে বলেন, সুদীপ্ত হত্যার সময় যে দুই রাউন্ড গুলির শব্দের কথা অন্যান্য আসামিদের স্বীকারোক্তিতে এসেছে সেই সম্পর্কে জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৮টি সিএনজি ও ২টি মোটরসাইকেল সম্বন্ধেও জানা এবং পুরো ঘটনার পরিকল্পনার ব্যাপারটি জানতেও তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।
শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবীরা: দিদারুল আলম মাসুমের রিমান্ড শুনানীকালে অর্ধশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, এডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু, আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আইয়ুব খান, আবদুল্লাহ হাসান পিকু, মোহাম্মদ ওসমান উদ্দিন, চন্দন তালুকদার, দীর্ঘতম বড়ুয়া দিগু ও এডভোকেট জয়দেবসহ অন্যরা। এ সময় মাসুমের পিতা এডভোকেট আবদুল হকও উপস্থিত ছিলেন। ১৫ মিনিট শুনানি করেন তাঁরা।
চস/আজহার