spot_img

২২শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

নয়নই মিন্নির প্রথম স্বামী, প্রকাশ্যে কাবিননামা!

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যার নেপথ্যের কারণগুলো বেরিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে নৃশংস এই হত্যার রহস্যজট খুলছে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সম্পর্কের গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই দুজনের দ্বন্দ্বে খুন হন রিফাত।

এবার নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ের কাবিননামা প্রকাশ্যে এসেছে। যেটি তাদের বিয়ের প্রমাণ হিসেবে দাবি করছেন নয়ন বন্ডের পরিবার। তবে মিন্নির বাবার দাবি, এটি সাজানো নাটকেরই একটি বিশেষ দৃশ্যপট। মূলত মিন্নিকে ফাঁসাতে এসব গালগল্প তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব নাটকের হোতা স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ। এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক নয়ন বন্ড সুনামের লোক ছিলেন।

নয়ন ও মিন্নির বিয়ের রেজিস্ট্রি কাবিনের কপিতে দেখা যায়, বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করেন (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৪৫/২০১৮)।

কাজীর দপ্তরে রক্ষিত বালাম বইয়ের ৯৬ নম্বর পৃষ্ঠায় পাত্র-পাত্রী ও সাক্ষীদের নামের ঘরে ছেলে পক্ষের ২ জন এবং মেয়ে পক্ষের ২ জন করে মোট চারজন সাক্ষীর নাম আছে। নয়নের পক্ষের দু’জন সাক্ষীর একজন হলেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী।

আর মেয়ের পক্ষের সাক্ষীরা হলেন জান্নাতুল ফেরদৌস, পিতা জাহাঙ্গীর আলম। ঠিকানা আয়লা গুচ্ছগ্রাম। আরেকজন হলেন সাইফুল ইসলাম মুন্না, পিতা সহিদুল ইসলাম। ঠিকানা পশ্চিম কলেজ রোড।

বিয়ের কাজী আনিসুর রহমান জানান, নয়ন বন্ড কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবসহ তার কাজী অফিসে আসেন। তারা বিয়ের কথা বললে দু’পক্ষের অভিভাবক কোথায় জানতে চান। এ সময় নয়ন বলেন, তার বাবা বেঁচে নেই। মা ফোনে কথা বলবেন।

এরপর তার মাকে ফোন করে নয়ন বন্ড কাজীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অপরদিকে মিন্নি বলেন, তার বাবা-মা আসতে পারছেন না। তার পক্ষে দু’জন সাক্ষী এনেছেন। এরপর কাজী বিয়ে পড়ান।

এই বিয়ে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নয়নের মা সাহিদা বেগম জানান, ‘মিন্নি ও নয়ন কাজী অফিসে যাওয়ার পর কাজী মিন্নির চাচাকে ফোন করে বলেন, আপনার ভাতিজি এখানে বিয়ে করতে এসেছে। এরপর নানা জটিলতা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ওইদিন আর কাজী অফিসে বিয়ে হয়নি।

তিনি বলেন, পরদিন ১৫ অক্টোবর ২০১৮ নয়ন বন্ডের বাড়িতেই তার সঙ্গে মিন্নির বিয়ে পড়ান কাজী। পরবর্তীতে রিফাত শরীফের সঙ্গে যখন মিন্নির দ্বিতীয় বিয়ে হয়, তখন নয়ন বন্ড জেলে। এক প্রশ্নের জবাবে সাহিদা বেগম বলেন, ‘নয়ন জেল থেকে বের হওয়ার পর মিন্নি আবার বাসায় আসতে শুরু করলে আমি নয়নকে বলি, এই তুই আরেকজনের বউকে নিয়ে ঘরে আস, তোর লজ্জা নাই? এর জবাবে নয়ন বলে, মা তুমি চুপ করো।’

পরবর্তীকালে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির আনুষ্ঠানিক বিয়ে পড়ান বরগুনা সদরের কাজী এইচএম রহিম। কিন্তু এ বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন বন্ডের মা জানান, ওই বিয়ের বিষয়টি তারা জানতেন না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ছেলে যখন কাজী অফিসে গিয়ে মিন্নিকে বিয়ে করে তখন কাজী আমার সঙ্গে কথা বলেছিল।

এদিকে বিয়ের সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। সূত্র বলছে, প্রভাবশালীদের চাপে সাক্ষীরা আত্মগোপনে চলে গেছে।

এই বিয়ের কাবিন প্রসঙ্গে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বলেন, এটা একটা সাজানো কাবিননামা। রিফাত খুনের পর তৈরি করা হয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই।

প্রভাবশালীরা চাইলে কিনা করতে পারে। এমপি শম্ভুর বিরুদ্ধে কথা বলে পরিবারসহ আমি নিজেও জীবন নিয়ে সংশয়ের মধ্যে আছি। যে কোনোদিন আমিও নিহত হতে পারি। আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো স্কুলে পর্যন্ত যেতে পারছে না।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর জানান, নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে গোপনে দেয়া হয়নি।

বিয়েতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার লোককে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। স্থানীয় সাংবাদিক, রাজনীতিক থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিয়েতে এসেছিলেন। মিন্নির বাবা বলেন, এতগুলো মানুষ দাওয়াত খেতে এলো কই কেউই তো বলেনি নয়নের সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে, এখন আবার কেন বিয়ে দিচ্ছ।

রিফাতের বাবাও তো বলেননি আমার মেয়ের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া আমি তো রিফাতের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাইনি। রিফাতের পরিবারই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কারণ রিফাত ও মিন্নি একে অপরকে পছন্দ করত। আমি প্রথমদিকে এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না।

মিন্নির বাবা আরো বলেন, আসলে মিন্নিকে জেলে ঢোকানোর জন্য শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ সর্বপ্রথম মিন্নির বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছে বলে তিনি ফেসবুকে লেখেন। মিন্নিকে তিনি বিতর্কিত করতে চান। এর কারণ হল, মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নি। সে ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী।

সে যদি বাইরে থাকে তবে রিফাত হত্যার আসামিদের সবার বিরুদ্ধে সে সাক্ষী দেবে। তাহলে বিচারে তাদের শাস্তি নিশ্চিত। তাই যাতে মিন্নি সাক্ষী না দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে সরিয়ে দিলেই মামলা শেষ।

কারণ বিচার হয় সাক্ষীর ভিত্তিতে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন, যারা রিফাতকে খুন করেছে তারা তো সবাই সুনাম দেবনাথের লোকজন। নয়ন বন্ড শম্ভুর লোক, এটা তো শহরের সবাই জানে।

প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss