spot_img

২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সোমবার
১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

ট্রাম্পের বাজেটকে ‘জঘন্য’ আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত বাজেট বিলকে “জঘন্য” বলে আখ্যা দিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি এই বিলের কঠোর সমালোচনা করেন। খবর আল জাজিরার।

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সদ্য পদত্যাগ করার কয়েকদিন পর স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) মাস্ক এই সমালোচনা করেন। আলোচিত এই বাজেট বিলটির নাম ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’।

ইলন মাস্ক বলেন, “আমি দুঃখিত, কিন্তু আর সহ্য করতে পারছি না। এই বিশাল, অযৌক্তিক কংগ্রেসনাল ব্যয় বিলটা জঘন্য। যারা ভোট দিয়েছেন, লজ্জা করা উচিত। আপনারা জানেন, আপনারা ভুল করেছেন।”

পরবর্তী পোস্টগুলোতে মাস্ক জানান, বিলটির ব্যয় এবং করছাড়ের কারণে মার্কিন জাতীয় ঋণ ব্যাপক হারে বাড়বে। তিনি বলেন, “এই বিল বাজেট ঘাটতিকে ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে এবং আমেরিকানদের দুঃসহ ঋণের বোঝা বইতে হবে।”

মাস্ক আরও বলেন, “কংগ্রেস আমেরিকাকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে।”

বিলটির আওতায় ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রবর্তিত করছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হবে এবং মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণসহ প্রশাসনিক অগ্রাধিকারের জন্য ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে।

তবে, এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গিয়ে জাতীয় ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ানো হবে এবং মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা (এসএসএপি)–এর মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট কমানো হবে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস জানিয়েছে, এতে মেডিকেইডে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার এবং এসএসএপি–এ ২৬৭ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে।

এই কাটছাঁট নিয়ে ডেমোক্রেট ও কিছু রিপাবলিকান উভয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর্থিক রক্ষণশীলরাও ঋণ বৃদ্ধির বিরোধিতা করছেন।

গত ২২ মে বিলটি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ২১৫–২১৪ ভোটে পাস হয়। রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কিছু সদস্য অনুপস্থিত বা ‘প্রেজেন্ট’ ভোট দেন। কেবলমাত্র দু’জন রিপাবলিকান—কেন্টাকির থমাস ম্যাসি এবং ওহাইওর ওয়ারেন ডেভিডসন—বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন। হাউসের ২১২ জন ডেমোক্রেট সবাই একযোগে বিলের বিরোধিতা করেন।

এখন বিলটি সিনেটের সামনে রয়েছে, যেখানে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অল্প।

মাস্কের সমালোচনার পর ম্যাসি তাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “তিনি ঠিক বলছেন।” জবাবে মাস্ক লেখেন, “এটা সোজা অঙ্কের বিষয়।”

মাস্ক ভোটারদের আহ্বান জানান, ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে “যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাদের সবাইকে বরখাস্ত করুন।”

উল্লেখ্য, মাস্ক সদ্য পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনে বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং নতুন গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)-এর নেতৃত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন কর্মসূচি সরকারি ব্যয় কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে চুক্তি বাতিল ও এজেন্সি বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে এতে মাস্কের বিরুদ্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্বসহ একাধিক মামলা হয় এবং তিনি বিতর্কে জড়ান।

পদত্যাগের পর হোয়াইট হাউসে বিদায়ী অনুষ্ঠানে ট্রাম্প তাকে ‘হোয়াইট হাউসের চাবি’ উপহার দেন এবং প্রশাসনিক সংস্কারে তার ভূমিকার প্রশংসা করেন।

কিন্তু সিবিএস সানডে মর্নিং-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, “এই বিশাল ব্যয়বহুল বাজেট বিল আমাদের ডিওজিই টিমের কাজের বিরুদ্ধে যায়।”

তিনি যোগ করেন, “একটা বিল বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু দুটো একসাথে সম্ভব না—এটাই আমার ব্যক্তিগত মত।”

মাস্কের মন্তব্যের পর ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও হোয়াইট হাউস তা অস্বীকার করে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট জানেন মাস্কের অবস্থান কী ছিল। এতে তার মত বদলায়নি। এটা একটা ‘বড়, সুন্দর বিল’—তিনি তার অবস্থানে অটল।”

তবে রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পলও মাস্কের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, “আমরা দুজনেই জানি সরকার কীভাবে অপচয় করে। আরও ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ভয়ানক ভুল।”

জবাবে ট্রাম্প বলেন, “র‍্যান্ড সব কিছুর বিরোধিতা করে, কিন্তু তার নিজের কোনও বাস্তবসম্মত বা গঠনমূলক পরিকল্পনা নেই। কেবল পাগলাটে ধারণা।” তিনি বিলটিকে “বিগ গ্রোথ বিল!” বলে অভিহিত করেন।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss