spot_img

২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

আত্মহত্যা করলে পরকালে যে শাস্তি পাবেন

পারিবারিক ও সামাজিক নানা সংকট থেকে মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়। চরম হতাশা, বিপদে অধৈর্য, অনিয়ন্ত্রিত জেদ-অভিমানই আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়। অথচ ইসলামে আত্মহত্যা হারাম ও কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’-(সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯,৩০)

হতাশা-বিপদে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস

হতাশা-বিপদে আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণ করলে বিশেষ শান্ত্বনা ও প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। ’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)

মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কোনও সংকটই স্থায়ী হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ -(সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মুসিবত এলে বলে- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬)।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিনের বিষয়টি বড় আশ্চর্য রকমের, বিপদে পড়লে এতে সে ধৈর্য ধরে আবার সুখে থাকলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে। তবে উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। -(সহীহ মুসলিম, ২৯৯৯)

আত্মহত্যার শাস্তি

বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণে এতো পুরস্কারের কথা ঘোষণার পরও অনেকে বিপদজনক পথ অবলম্বন করেন, নিজেকে ধ্বংস করে দেন। এমন ব্যক্তির বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আত্মহত্যার শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে বলে যে, আমি অন্য কোনও ধর্মের ওপর, তাহলে সে ওই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বনী আদম যার মালিক নয় এমন মানত গ্রহণযোগ্য নয়। যে কেউ দুনিয়াতে নিজেকে কোনও কিছু দিয়ে হত্যা করবে, এটা দিয়েই তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। যে কোন মুমিনকে লানত করল সে যেন তাকে হত্যা করল। অনুরূপভাবে যে কেউ কোন মুমিনকে কুফরীর অপবাদ দিল, সেও যেন তাকে হত্যা করল। -(বুখারী, ৬০৪৭, মুসলিম, ১৭৬)

অন্য এক হাদীসে আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে (পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩৩)

আত্মহত্যাকারীর জন্য জান্নাত হারাম

আত্মহত্যাকারীর জন্য জান্নাত হারাম করার হুঁশিয়ারী এসেছে হাদিসে। হজরত জুন্দুব বিন আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জখম হয়ে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ -(বুখারি, হাদিস : ১২৭৫)

দুনিয়ায় আত্মহত্যাকারীর প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মায়। রাসুল (সা.) এসব পাপিষ্ঠ ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়েননি। জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছে, যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করেননি। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৪)

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss