spot_img

২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সোমবার
১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

বন্দরে সংকট নিরসনে ১০ দফা প্রস্তাব

চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসায়ীদের পণ্য খালাস নিয়ে জটিলতা এবং এর ফলে সৃষ্ট পণ্যজট নিরসনে সুনির্দিষ্ট ১০ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশন।

গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় বন্দরের কার্যক্রমে বিদ্যমান নানা সমস্যা ও জটিলতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেন বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। সভায় কাস্টমস এজেন্টদের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা ১০টি সুস্পষ্ট প্রস্তাবনার বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠনমূলক বক্তব্য দেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন।

বন্দরের ইয়ার্ড ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগ : কাস্টমস এজেন্টদের পক্ষ থেকে আলোচনায় আসে এনসিটি ইয়ার্ডে পণ্য সরানো ও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। অভিযোগ করা হয়, পূর্বঘোষণা বা আগাম বার্তা ছাড়াই সাইড পাস থেকে পণ্য তুলে এনসিটি ইয়ার্ডে স্থানান্তর করা হচ্ছে, এতে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়ছে এবং সময় অপচয় হচ্ছে। এ ছাড়া পণ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা বজায় না রাখার অভিযোগও উঠে আসে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার অঙ্গীকার করেন এবং বলেন, অনাকাক্সিক্ষত পণ্য স্থানান্তরের বিরুদ্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

একই ইউনিটে বারবার পণ্য ফিক্সেশন নিয়ে অসন্তোষ : চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বিআই/এম ব্লকে একই কনটেইনার ইউনিটে তিনবার পর্যন্ত পণ্য ফিক্স করা হচ্ছে, ফলে কর্মঘণ্টা ও শ্রম অপচয় হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। কাস্টমস এজেন্টরা বলেন, এতে পণ্য খালাসে সময় বাড়ছে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এ সমস্যা নিরসনে ইয়ার্ড ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল মনিটরিং জোরদার করার দাবি জানানো হয়।

শ্রমিক ঘাটতি ও হট সিট ট্রান্সফার না হওয়ায় ডেলিভারি ব্যাহত : কনটেইনার ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় সময়মতো অনুমোদিত শ্রমিক না পাওয়ার কারণে পণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। বিশেষ করে হট সিট ট্রান্সফার না হওয়ায় একটি শিফট থেকে আরেকটি শিফটে দায়িত্ব বুঝে নিতে সময় লাগে, ফলে কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়।

এ বিষয়ে বৈঠকে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, ডেলিভারি সময় নির্ধারিত রাখতে শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা হবে এবং হট সিট ট্রান্সফার পদ্ধতিকে বাধ্যতামূলক করা হবে।

শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের অবৈধ ডেলিভারির অভিযোগ : কাস্টমস এজেন্টরা অভিযোগ করেন, কিছু শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অনুমোদন ছাড়া ডেলিভারি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন। যা আইনবিরুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলার কারণ। তারা বলেন, এসব চক্রকে নিষ্ক্রিয় না করলে স্বচ্ছ বন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ আরোপে সম্মতি প্রকাশ করেছে।

অবৈধ ট্রেইলার চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা চায় ব্যবসায়ীরা : অনুমোদনহীন ট্রেইলার দিয়ে কনটেইনার পরিবহন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে বলা হয়, অনেক সময় অনুমোদিত ট্রেইলারের পরিবর্তে বাইরে থেকে ট্রেইলার এনে কনটেইনার খালাস করা হয়, এতে ডেলিভারির শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধুমাত্র অনুমোদিত ট্রেইলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পণ্য ডেলিভারির পরেও বন্দরের অযৌক্তিক দাবি : কাস্টমস এজেন্টদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ডেলিভারি নেওয়ার পরও নানা অজুহাতে আবার বন্দরের দাবির মুখে পড়তে হয়, যা ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও খরচ বাড়িয়ে তোলে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ডেলিভারির পরে অতিরিক্ত দাবি না তোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অফডকে নেওয়া পণ্যে অতিরিক্ত চার্জ আদায়ের অভিযোগ : বন্দর থেকে অফডকে নেওয়া পণ্য পরবর্তীতে পুনরায় বন্দরে আসার ক্ষেত্রে নানা চার্জ আরোপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এতে ব্যবসায়িক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ নীতিমালার মধ্যে থেকে সমাধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

নিরাপত্তা জোরদারে এজেন্টদের পরামর্শ : কাস্টমস এজেন্টরা বলেন, পণ্য চুরি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা রোধে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা জরুরি। তারা আধুনিক সিসিটিভি, স্ক্যানার ও নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান।

নতুন নিয়মে পণ্য ছাড়ে জটিলতা দূর করার পরামর্শ : নতুনভাবে পণ্য ছাড়ের ক্ষেত্রে কাস্টমস হাউজ থেকে দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশনার কারণে অনেক সময় গ্রাহককে পুনরায় লাইসেন্স যাচাই করতে হয়, এতে সময় নষ্ট হয় এবং দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রক্রিয়া সহজ করতে শিগগিরই পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম চালু করা হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে নানা সিন্ডিকেট গঠন ও কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদ জানায় কাস্টমস এজেন্টরা। তারা বলেন, এতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বিষয়ে তাদের কোনো ভূমিকা নেই এবং প্রয়োজনীয় তথ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, সিএন্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক উন্নয়ন ও কার্যকর পরিবেশ তৈরিতে নানা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। সিএন্ডএফ এজেন্টদের পক্ষ থেকে যেসব সমস্যা ও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর আরও কার্যকর ও ব্যবসাবান্ধব হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss