একান্ত আলাপে প্রকল্প পরিচালক হ এ বছর ড্রেনের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হবে হ বৃষ্টির পানি দ্রুত ড্রেন থেকে খালে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি
নগরীতে জলাবদ্ধতার ২০টি স্থান বা পয়েন্ট চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগামী বছর বর্ষা মৌসুমে এই ২০টি স্থানে যাতে পানি না জমে, সেই লক্ষে এই বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, বিএস খতিয়ান অনুযায়ী খালের উচ্ছেদ অভিযান শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এর প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী।
তিনি আরো বলেন, আমরা ড্রেনের সাথে খালের সংযোগ করে দিয়েছি। এখন বৃষ্টি হলে আগের মত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না। পানি ড্রেন থেকে দ্রুত খালে চলে যাবে। নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়া ২০টি পয়েন্টগুলো হচ্ছে- দুই নং গেট, নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, হালিশহর, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আসাদগঞ্জ, মিয়াখান নগর, অক্সিজেন মোড় এবং ওয়াসা মোড়। ড্রেনে কাজ করার সময় কোন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ড্রেনে কাজ করার সময় সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে অন্য সেবা সংস্থান পাইপ লাইন নিয়ে। যেমন- ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ। ড্রেনে কাজ করতে গিয়ে অল্প সময়ে এতগুলো সংযোগ সরাতে হবে এটা তারাও বুঝতে পারেনি। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিএস খতিয়ান অনুযায়ী সরকারি খালে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হয়েছে জানিয়ে শাহ আলী বলেন, এখনো কিছু কিছু স্থাপনা আছে, যেগুলো তারা (মালিক) ভাঙার জন্য সময় নিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নিতে। অনেকে এগুলো সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা খালে কাজ করার সময় যদি এগুলো কোন বাধা সৃষ্টি না করে, তাহলে আমরা তাদের আরো কয়েকদিন সময় দেবো। মোট ৩৪টি খালে উচ্ছেদ অভিযানে চলেছে। এই ৩৪টি খাল থেকে ৩ হাজার ৩৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে মোট ১৭৬ কিলোমিটার জায়গায়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা ছিল বহদ্দারহাটস্থ মির্জা খালে। সেখানে অবৈধ স্থাপনা ছিল ৩৫১টি।
সেবা সংস্থার সহযোগিতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযানের সময় আমরা পিডিবি, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাসকে ডেকেছি। তারা আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতা নিয়েই উচ্ছেদ অভিযান করেছি।
জলাবদ্ধতা প্রকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঁচটি রেগুলেটর করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা পাঁচটি রেগুলেটর করবো। সেগুলো হচ্ছে- মহেশখালী, টেকপাড়া, মরিয়ম বিবি, কলা বাগিচা এবং ফিরিঙ্গী বাজার। প্রথমে আমরা মহেশখালীতে রেগুলেটর তৈরির কাজ শুরু করেছি, এরপর ধাপে ধাপে সবগুলো রেগুলেটর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
ডিপিবি অনুযায়ী ৬টি কালভার্ট এবং ৪৮টি ব্রিজ নির্মাণের কথা রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি কালভার্ট এবং ৩০টি ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া সবগুলো রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া আমরা একটি মাত্র খালে কাজ করতে পারছি। বাকি খালগুলোতে কাজ করতে গেলে আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ডিপিবি অনুযায়ী ৩২ খালের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র আমরা গয়নাছড়া খালে কাজ করতে পারছি। বাকিগুলোর জন্য আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জামালখান খাল, বদরখালী, মির্জা, হিজরা খালে এখনো পর্যন্ত আমাদের যাওয়ার অবস্থা হয়নি। খালের পাশেই ব্যক্তি মালিকানা জমি রয়েছে এবং সেখানে তারা ভবন নির্মাণ করেছে। তাই এখনো এসব খালে মালামাল নিয়ে কাজ করার মত পরিবেশ তৈরি হয়নি।
খালের পাড়ে ৮৫.৬৫ কিলোমিটার রাস্তা করার কথা রয়েছে। যেসব জায়গায় রাস্তা করার মত পরিবেশ আছে, আমরা রিটেইনিং ওয়াল করার সাথে সাথে সেখানে রাস্তার কাজ শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু যেখানে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য খালের কাজই করতে পারছি না, সেখালে খাল এবং রাস্তার কাজ পরে করতে হবে।
নির্দিষ্ট স্থানে যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য ড্রেন সংস্থারের কাজ করছি। লোকজন যাতে খালে ময়লা না ফেলে সেজন্য আহ্বান জানান তিনি। জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি। চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই খালগুলো তাদের এবং জলাবদ্ধতার কারণে যে ভোগান্তি হচ্ছে সেটাও তাদের। ককশিট, পলিথিনসহ বাসাবাড়ির যে ময়লা যাতে মানুষ খালে না ফেলে। তাহলে আমাদের কাজও স্বার্থক হবে এবং মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
চস/আজহার