spot_img

৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

তারা পৃথিবীর আলো দেখছেন সাহসী কন্যা সারাহের চোখে

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য/একটু সহনাভুতি কি, মানুষ পেতে পারে না? শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গানটি ভূপেন হাজারিকার গলায় মানুষ মুগ্ধতা নিয়ে শুনে আসছেন বছরের পর বছর। এখনও যেন গানটি জীবন্ত।

আর এই গানের মতোই একটি উদাহারণ সৃষ্টি করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন সারাহ ইসলাম। মৃত্যুর আগে নিজের কিডনি আর চোখ দান করে সারাহ সৃষ্টি করে গেছেন অনন্য এক দৃষ্টান্ত। আজ তাঁর চোখে পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছেন দুজন অন্ধ মানুষ। তাও আবার একজন নারী অন্যজন পুরুষ। তারা হচ্ছেন, মোহাম্মদ সুজন ও শিক্ষিকা ফেরদৌস আখতার।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সারাহর দান করা কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন তারা দুজন। দুজন বর্তমানে সত্তর শতাংশ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। তবে পর্যায়ক্রমে ফিরে আসবে তাদের চোখের শতভাগ কার্যকারিতা।

এছাড়াও গত ১৮ জানুয়ারি রাতে সারাহ ইসলামের দুটি কিডনি অন্য দু’জন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। সবমিলিয়ে তাঁর অঙ্গদানের মাধ্যমে চারজন মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। সেইসাথে এটি বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায়ও একটি মাইলফলক স্থাপন করেছে।

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে ফেরদৌস আখতারের ডান চোখে ভাইরাসজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দৃষ্টিশক্তি হারান। পরে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। সাত বছর আগে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক। তবে কর্নিয়া সংকটে এটি এতদিন করা সম্ভব হয়নি। সারাহর কর্নিয়া দানের সম্মতি পেয়েই চিকিৎসক শীষ রহমান ফোন করে ফেরদৌসকে আখতারকে ঢাকায় আসতে বলেন। এরপর তাঁর ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। ডান চোখে এখন স্বাভাবিকভাবে দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে, মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ। মোহাম্মদ সুজন এখন ভালো আছেন।

এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি সারাহ ইসলাম ব্রেন ডেড হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্লান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে তাঁর দুই কিডনি বের করেন আনেন।

এরপর একটি কিডনি শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল। সারাহ ইসলামের অপর কিডনিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। তারা দু’জনেই ভালো আছেন।

প্রসঙ্গত, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২০ বছরের তরুণী ফাইন আর্টসের মেধাবী শিক্ষার্থী সারাহ ইসলাম। এসময় তিনি তাঁর অঙ্গ দান করে যান। গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে সারাহ ইসলাম পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss