বরগুনা প্রতিনিধি, ভোর সোয়া ৪টা। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পায়রা নদীর তীরে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন নিশ্চিত করেন।
তিনি বলছেন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাতে নয়নকে ধরতে অভিযানে বের হয়।
“ভোরের দিকে বুড়ির চর গ্রামে নদীর তীরে নয়নের সহযোগীরা পুলিশের দিকে গুলি করে। পুলিশ ও তখন আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। কিছু সময় গোলাগুলি চলার পর নয়নের সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পরে সেখানে নয়নের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।”
পুলিশ সুপার বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি গুলি এবং তিনটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেনসহ চার পুলিশ সদস্য এই অভিযানে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত ২৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে (২৩) স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিফাতের মৃত্যু হয়।
রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেন।
দুই মাস আগে রিফাতকে বিয়ে করা মিন্নি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, বিয়ের আগে থেকেই তাকে উত্ত্যক্ত করত, হুমকি দিত নয়ন। বিভিন্ন সময় পথেঘাটে হেনস্তাও করেছে।
রিফাত খুন হওয়ার পরদিন তার বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন।
অভিযানে নেমে পুলিশ এ পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে, যাদে মধ্যে এজাহরভুক্ত রয়েছেন চারজন।
নয়ন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার দুই সহযোগী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাগাল পুলিশ এখনও পায়নি।
বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান, পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে নয়নের বিরুদ্ধে মাদক কেনাবেচা, চুরি, ছিনতাই, হামলা, সন্ত্রাস সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগে অন্তত আটটি মামলা রয়েছে।
পরিবারের দেওয়া নাম সাব্বির আহম্মেদ হলেও নিজেকে জেমস বন্ড ভাবতে ভালোবাসেন বলে ২৫ বছর বয়সী নয়ন নিজের নাম নেন নয়ন বন্ড। ওই নামেই তিনি বরগুনা শহরে পরিচিত ছিলেন।
জেমস বন্ডের কোড নম্বর ‘007’ এর সঙ্গে মিল রেখে তিনি একটি ফেইসবুক গ্রুপ খুলেছিলেন, যার মাধ্যমে তার সহযোগীদের মধ্যে যোগাযোগ হত। বলা হচ্ছে, ওই ফেইসবুক গ্রুপেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়।